বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রামে আগামীকালের গণসমাবেশ বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনসভায় পরিণত হবে। মানুষের স্মৃতিতে থাকবে। বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাসে এ সমাবেশ মাইলফলক হিসেবে থাকবে। তিনি বলেন, বিএনপির শক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বাংলাদেশের মানুষের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া মানে বিএনপির শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে বুধবার (১২ অক্টোবর) বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। আমীর খসরু বলেন, গণসমাবেশ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আতঙ্ক নেই। যদি অন্য কারো মধ্যে আতঙ্ক থাকে তারা তা বলতে পারবে। যাদের মধ্যে আতঙ্ক আছে তারা চেষ্টা করবে এই সভাকে অন্যদিকে ড্রাইভার্ট করার। যারা জনগণকে ভয় পায়, জনসমাবেশকে ভয় পায় তারা অনেক কিছু করবে। প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে সমাবেশে তারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রাখবে। তিনি বলেন, বুধবার বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে সব বিভাগের জনগণের মধ্যে জাগরণ উঠেছে, আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। সবাই যার যার এলাকায় মাঠে আছেন। সবাই কার্যক্রম চালিয়েছেন, এই গণসমাবেশকে সফল করার জন্য। আমরা জনগণের বিশাল উদ্দীপনা আগ্রহ দেখে, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাঠ রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠে গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আজ বাংলাদেশ যে অবস্থায় গিয়েছে, সে অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি পেতে চাইছে। যে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে মানুষ সংগ্রামে নেমেছে, সেটার প্রতিফলন আগামীকাল পলোগ্রাউন্ডের মাঠে ঘটবে। দেশের মানুষ আগামীকালের পলোগ্রাউন্ড মাঠের সমাবেশের দিকে তাকিয়ে আছে। চট্টগ্রামবাসী মানুষের প্রত্যাশা-আশা পূরণ করবে আগামীকাল। সমাবেশে কোনো রূপরেখা থাকবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার নির্বাচনী সব ব্যবস্থার যে জঞ্জাল, সেটা পরিষ্কার করে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সংসদ হবে। যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে। এটা হচ্ছে মূল মেসেজ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা আসলে রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করতে পারছে না। বিএনপির সমাবেশকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করার একটা প্রবণতা আওয়ামী লীগের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, ভাবনা আছে। আমরা তাদের বিভিন্ন বক্তব্য দেখছি, এই ফাঁদে বিএনপির কাউকে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। আমীর খসরু বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা জ্বলে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। এই কথাটা আমরা বারবার বলছি এবং বারবার বিএনপি নেতাকর্মীরা সেটা পরিপূর্ণভাবে প্রমাণ করছেন। তারা জ্বলে পুড়ে খাঁটি সোনা হয়ে গেছেন। কত ধরনের বাধা-বিপত্তি আছে, কত ধরনের চাপ আছে কিন্তু সবকিছুকে উপেক্ষা করে তারা বুধবারের সভাকে সফল করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা কোনো ধরনের ফাঁদে পা দেব না। অনেকে চেষ্টা করবে এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য। আমাদেরকে সেই দিকে টেনে নেওয়ার জন্য। আমাদের শক্তি ক্ষয় করার জন্য। তারা অনেক কিছু বলবে অনেক অপপ্রচার শুনবেন কিন্তু কিছুতেই কান দেবেন না। ধৈর্য ধরতে হবে, ধৈর্য ধরে আমাদের কাজ দিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। কে কোথায় উসকানি দিচ্ছে এগুলো নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবেন না। ওরা চাইছে আমাদের সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিএনপির এ নেতা বলেন, জনগণের জোয়ার যেখানে নামে, কোনো শক্তি সেখানে বাধা দিতে পারে না। যেখানে বাঁধ ভেঙে গেছে জোয়ার, জোয়ার চলছে, সেখানে কেউ বাধা দিতে পারবে না। সুতরাং এসবের চিন্তা করার আমাদের দরকার নেই। আমরা আমাদের কাজ নিয়ে এগিয়ে যাব। আগামীকাল গণসমাবেশ বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনসভায় পরিণত হবে। মানুষের স্মৃতিতে থাকবে। বাংলাদেশের আন্দোলনের ইতিহাসে এ সমাবেশ মাইলফলক হিসেবে থাকবে।
তিনি বলেন, গণসমাবেশ নিয়ে উসকানি দিয়ে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। একবারেই এতে কান দেবেন না। কোনো বাধা এই জনস্রোতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। আমীর খসরু বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কোনো দলের দায়িত্ব না বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার। আমি আশা করব যাদের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার তারা যেন সেই দায়িত্ব পালন করেন, কোনো দলের ওপর যেন ন্যস্ত না করেন। এতে তাদের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। আমরা যে সভা সমাবেশ করেছি ইতোমধ্যে তা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। আমাদের নেতৃত্ব থেকে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, প্রতিটি সভা-সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে হবে।
তিনি বলেন, জনগণের ওপর আস্থা রেখে বিএনপির রাজনীতি। আমাদের জনগণকে নিয়ে রাজনীতি। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। যেখানে লাখ জনতা রাস্তায় নামে তারা তো একেকটা লাঠির চেয়ে শক্তিশালী। একজন বাংলাদেশের নাগরিক লাঠির চেয়ে শক্তিশালী, চাইনিজ রাইফেলের চেয়ে শক্তিশালী। আমাদের কোনো অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠির দরকার নেই। যাদের দুর্বলতা আছে তারা লাঠি নিয়ে নামে। যারা নিজেরা কিছু করতে পারছে না তারা প্রতিরোধের কথা বলছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী হয়ে আছে, তারা প্রতিরোধের কথা বলে। কেউ সভা সমাবেশ করলে বিএনপি প্রতিরোধ করবে না। বিএনপি কাউকে বাধা দেবে না। সবার সাংবিধানিক অধিকার আছে সভা-সমাবেশ করার। এর বাইরে কেউ কিছু করতে চাইলে সেটা অসাংবিধানিক হবে। এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, এখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই আমাদের। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্ন আসছে না। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই নির্বাচন কমিশন দেশের নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবে। সুতরাং যতক্ষণ সেই নির্বাচন কমিশনার না আসে, এই অবৈধ সরকার ও এই অবৈধ নির্বাচন কমিশনার নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে চাই না। এই সরকারের অধীনে আগামীতে কোনো নির্বাচন হতে পারবে না। এগুলো আলোচনার বিষয় না। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন