প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে বিদেশ ফেরত কর্মীদের সহায়ক প্রকল্প দীর্ঘ ১৬ মাসেও আলোর মুখ দেখেনি। বিশ্ব ব্যাংকের ৪২৫ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তায় এবং জিওবি তহবিল থেকে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকায় বিদেশ ফেরত ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের পুর্নবাসনে সরকার এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। সারা দেশে ৩০টি জেলায় ৩০টি ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে একটি ফার্ম নিয়োগ করে প্রত্যাগত কর্মীদের সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
বৈশ্বিক করোনা মহামারির মাঝে বিদেশ থেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফেরত আসে প্রায় ৫ লাখ অভিবাসী কর্মী। এতো দিন যেসব অভিবাসী কর্মী বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতো তারা মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে খালি হাতে দেশে ফিরেছে। প্রত্যাগত অধিকাংশ কর্মী কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে। অর্থকষ্টসহ নানা ধরণের সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এসব প্রত্যাগত কর্মী। বিদেশ প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের জরুরি ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করলে সামাজে অস্থিরতা সৃষ্টি এবং তারা নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বিদেশ প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুন:একত্রীকরণের লক্ষ্যে মনোসামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরামর্শ প্রদান করা হবে। রেফারেলের আওতায় প্রত্যাগত কর্মীদের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং অর্থনৈতিক পরামর্শ প্রদান করা হবে।
বিএমইটির সূত্র জানায়, বর্হিবিশ্বে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছে। এসব অভিবাসী কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। গত আগস্ট মাসে ডলার সঙ্কটের মধ্যে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে রেমিট্যান্স। আগস্ট প্রথম ২৫ দিনে দেশে ১৭২ কোটি ৯৩ লাখ বা ১.৭৩ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে) প্রায় ১৬ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর মাসে ১৫৩ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রতি ডলার ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
গত ৭ মাসের মদ্যে এটিই প্রবাসীদের পাঠানো সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। যদিও চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের গড়ে যেভাবে রেমিট্যান্স এসেছিল সে তুলনায় দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহে কিছুটা কমে গেছে। এ কারণে পুরো মাসেই কমেছে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সূত্র মতে, গত জানুয়ারি থেকে গত ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৬৪৮ জন নারী পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসেই বিদেশে গিয়েছে ৯০ হাজার ৮৩৯ জন কর্মী। এসব কর্মীদের মধ্যে অনেকেই নানা কারণে বিদেশ থেকে খালি হাতে দেশে ফিরে আসেন। বিদেশ ফেরত এসব অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষণে আগে বাস্তবমুখী কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
দু’লাখ ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ ও প্রবাসী সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনের উদ্যোগে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃজনে ২০২১ সালের জুলাই মাসে সহায়ক প্রকল্প হাতে নেয়। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে প্রথম পর্বের অর্থ ছাড় পেলেই বিদেশ প্রত্যাগত কর্মীদের সহায়ক প্রকল্পের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। তিনি বলেন, কর্মী নির্বাচনে যারা অগ্রাধিকার পাবেন তারা হচ্ছেন, প্রত্যাগত নারী কর্মী, প্রত্যাগত বয়স্ক কর্মী, চাকরি হারিয়ে ফেরত আসা কর্মী, ট্রমার শিকার হয়ে ফেরত কর্মী, বেতন এবং সার্ভিস বেনিফিট ছাড়া ফেরত কর্মী, প্রত্যাবর্তনের পরে বেকার অবস্থায় আছে যারা, যাদের পরিবারে অন্য কোন আয়ের উৎস অথবা উপার্জনক্ষম সদস্য নেই এবং যারা এখনও অভিবাসনের ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি।
প্রত্যাগত কর্মীর উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি যেমন স্কুলগামী শিশু, বিশেষ ধরনের শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারী ও পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সহায়তা প্রদানে অগ্রাধীকার দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, প্রত্যাগত ২ লাখ কর্মীকে জনপ্রতি সাড়ে ১৩ হাজার টাকা করে নগদ প্রণোদনা হিসেবে ২৭০ কোটি টাকা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। এসব প্রত্যাগত কর্মীদের ওরিয়েন্টেশন ও কাউন্সেলিং প্রদান করা হবে। ওরিয়েন্টেশন এবং কাউন্সেলিং সম্পন্নের পর উপকারভোগীকে রিইন্টিগ্রেশন কার্ড প্রদান করা হবে। এই কার্ড কল্যাণ বোর্ড ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দেয়া সুবিধা এবং রেফারেল সেবা প্রাপ্তিতে বিশেষ সহায়ক হবে। কর্মস্থলে ন্যায্য পাওনা ও অধিকার নিশ্চিতকরণে আরপিএল এর আওতায় দক্ষতা সনদ প্রদান করা হবে সাড়ে ২৩ হাজার প্রত্যাগত কর্মীকে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অধীনে নতুন এই প্রকল্পের পিডি মো. আব্দুল ওয়াদুদ গতকাল ইনকিলাবকে জানান, এ যাবত ৩ জন কর্মকর্তা এবং ৩ জন কর্মচারি নিয়োগ করা হয়েছে। সারা দেশে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন জেলায় ৩০ টি ওয়েলফেয়ার সেন্টার ভাড়া নেয়ার জন্য কেন্দ্র স্থাপনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব সেন্টারে ৫ থেকে ৭ জন জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। প্রত্যাগত কর্মীদের সহায়ক প্রকল্প দীর্ঘ ১৬ মাসেও আলোর মুখ দেখছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বিদেশি আর্থিক অনুদানে প্রকল্প চালু করতে আনুষাঙ্গিক কাজ কর্ম করতে সময় লেগে যায় এ জন্য বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন,
গত সেপ্টেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আগারগাওস্থ বিশ্ব ব্যাংকের কাছে প্রথম পর্যায়ে ২৪৬ কোটি টাকা ছাড় দেয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ ছাড় দিলেই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে বলেও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যাগত কর্মীদের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সহায়তা ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে দেয়া হবে। আর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা বাবদ ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। অর্থ ছাড় পাওয়া গেলে ত্রিশটি ওয়েলফেয়ার সেন্টারের জনবল নিয়োগসহ প্রত্যাগত কর্মীদের সহায়তায় সার্বিক কার্যক্রম শুরু করা হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন