শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামে বিএনপির গণসমাবেশ আজ

ব্যাপক শোডাউনের আয়োজন আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট বলছেন নেতারা :: সবার দৃষ্টি পলোগ্রাউন্ডে নৈরাজ্য হলে দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি আ.লীগের

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিএনপির ৫ নেতা হত্যার প্রতিবাদে ১০ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আজ চট্টগ্রামে গণসমাবেশের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে দুই মাসব্যাপী এই কর্মসূচি। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ডে বেলা ২টায় শুরু হবে এ সমাবেশ। এক দশক পর আন্দোলন-সংগ্রামের নগরী চট্টগ্রামে বড় ধরনের শোডাউনের ব্যাপক আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। বন্দরনগরীসহ এ অঞ্চলের ১০টি সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ যোগ দেবেন এ সমাবেশে। বিএনপি নেতারা বলছেন, বিভাগীয় গণসমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেবে। এ কর্মসূচি হবে দেশে চলমান গণআন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। লাখো জনতার গণসমাবেশ থেকে সরকারকে চরম বার্তা দেয়ার আভাস দিয়েছেন দলের নেতারা। প্রশাসনের তরফে, গণসমাবেশ অনুষ্ঠানে সব ধরনের সহযোগিতার আশ^াস দেয়া হয়েছে।

তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের ভাষায় সমাবেশের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টির যেকোন প্রচেষ্টার দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। এ লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের রাজপথে সতর্ক থাকারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে তাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। জনতার উত্তাল ঢেউয়ের কাছে সব বাধা, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত নস্যাৎ হয়ে যাবে। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-জ¦ালানি তেলের সীমাহীন সঙ্কট এবং গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দলের পাঁচ নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। চট্টগ্রাম থেকেই শুরু হচ্ছে এ কর্মসূচি।

দলের হাইকমান্ড চলমান আন্দোলনের এ পর্যায়ে বিভাগীয় গণসমাবেশকে সর্বাত্মক সফল করার নির্দেশনা দেয়। চট্টগ্রামের নেতারাও বিএনপির দুর্জয় ঘাঁটিতে এ গণসমাবেশকে মহাসমাবেশে রূপান্তরের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কর্মসূচি সফলে মাঠে নেমে পড়েন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। সব মিলিয়ে আজকের পলোগ্রাউন্ডের এ গণসমাবেশকে ঘিরে দেশব্যাপী ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দলের সমর্থকেরা এখন দারুণ উজ্জীবিত। অন্যদিকে সরকারি দলও বিএনপির এ সমাবেশে লোকসমাগম কেমন হয় তা দেখতে গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বলা যায়, চট্টগ্রামের দিকেই আজ সবার দৃষ্টি।
গণসমাবেশ সফল করতে চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরে গত পক্ষকাল ধরে ব্যাপক সভা-সমাবেশ ও প্রচার চালিয়েছে বিএনপি এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। সমাবেশে যোগ দিতে প্রস্তুত বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর আট জেলার (১০টি সাংগঠনিক জেলা) লাখ লাখ নেতাকর্মী। গতকাল শুরু হয় মঞ্চ নির্মাণের কাজ। বিশাল পলোগ্রাউন্ডের পশ্চিমপ্রান্তে সুউচ্চ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। পলোগ্রাউন্ডের আশপাশের খোলা জায়গা এবং সবকয়টি সড়কে সমাবেশে আগত লোকজনের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আয়োজকরা বলছেন, সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত হতে পারে। সেটি মাথায় রেখেই চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। মাইকও লাগানো হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার এলাকাব্যাপী। সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখবেন।

এদিকে দীর্ঘ প্রচারে কোথাও কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা না আসলেও গণসমাবেশে যোগ দিতে বাস-মিনিবাস রিজার্ভে সরকারি দলের বাধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাগড়াছড়িতে বাস ভাড়া করা হলেও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতাদের হুমকিতে পরিবহন মালিকেরা ভাড়া বাতিল করতে চাইছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পাহাড়ের ওই জেলায় ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে চোরাগুপ্তা হামলার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এসব হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে সমাবেশে জনতার বাধভাঙা ঢল নামবে বলে আশা করছেন নেতারা। ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি পলোগ্রাউন্ডে সর্বশেষ মহাসমাবেশ করেছে বিএনপি। ওই মহাসমাবেশে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ ১০ বছর নয় মাসে একাধিকবার পলোগ্রাউন্ডসহ চট্টগ্রামের বড় ভেন্যুতে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েও পাওয়া যায়নি। এবার পলোগ্রাউন্ডের এ গণসমাবেশ অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করবে বলে জানান দলের নেতারা।

গণসমাবেশ হবে আন্দোলনের মাইলফলক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশ হবে বাংলাদেশে আন্দোলনের মাইলফলক। এ মহাসমাবেশ ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে বিপুল জনসমাগমের মাধ্যমে সমাবেশ সফল হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি গতকাল মঙ্গলবার নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা কোন ধরনের ফাঁদে পা দেব না। অনেকে চেষ্টা করবে এদিক-সেদিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য। আমরা আমাদের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাব। জনগণের জোয়ার যেখানে নামে সেখানে কোন শক্তি বাধা দিতে পারে না। আমীর খসরু বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। যার যার এলাকায় সবাই মাঠে আছে, এটাকে সফল করার জন্য। জনগণের মধ্যে যে উৎসাহ উদ্দীপনা, আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি, মানুষের মধ্যে যে আশা জেগেছে, যে ক্ষোভ জেগেছে, সেটাকে পূরণ করার জন্য, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মাঠ পলোগ্রাউন্ড আমরা বেছে নিয়েছি। এর আগে আমরা পলোগ্রাউন্ডে সভা করেছি বেগম খালেদা জিয়া এসেছিলেন, সেটা বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় জনসভা হয়েছিল। ২০-২৫ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। এবার আমাদের নেত্রী আসবেন না, কিন্তু মানুষ সংগ্রামে নেমেছে, সেটার প্রতিফলন সমাবেশে দেখতে পাবেন। সারাদেশের মানুষ চট্টগ্রামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমীর খসরু বলেন, দেশে-বিদেশে প্রমাণ হয়েছে আমরা খুবই সুন্দর শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছি। আমাদের নেতৃত্ব থেকে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, প্রত্যেকটি সভা, মিছিল, কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হবে। এর একটাই কারণ, জনগণের ওপর আস্থা রেখে বিএনপি রাজনীতি করে। জনগণ আমাদের সাথে আছে। যেখানে লক্ষ জনতা রাস্তায় নামে ওরা লাঠির চেয়ে বেশি শক্তিশালী। আমাদের অস্ত্রশস্ত্রের দরকার নেই, লাঠিরও দরকার নেই। লাঠি নিয়ে কারা নামে, যারা নিজেরা দুর্বল তারা লাঠি নিয়ে নামে। প্রতিরোধ করতে কারা বলে, যারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেরা কিছু করতে পারে না তারা বলে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে সরকারি দল আমি বলি না। রেজিমের অংশ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা বুঝতে পেরেছে জনগণ জেগে উঠেছে, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। জনগণ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা আর রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করতে পারছে না। এখন তাদের মধ্যে বিএনপির সমাবেশগুলোকে বাধাগ্রস্ত করার চিন্তা-ভাবনা আছে।

দেশের মানুষ অস্বস্তিকর পরিবেশে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্নপর্যায়ে চলে গেছে। ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী দু’বেলা খেতে পারছে না। টিসিবির গাড়ি থেকে পণ্য নেয়ার জন্য আমরা যে লাইন দেখছি, এটা অভাবনীয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। কোন দলের দায়িত্ব নয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। কোন দল যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিতে চায়, আমি আশা করব, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, তারা যাতে সেই দায়িত্বটা পালন করে। কোন দলের ওপর যেন তারা সেই দায়িত্ব ন্যস্ত না করে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, চেয়ারর্পাসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দী চৌধুরী এ্যানি, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনর রশীদ, সহ-গ্রাম সরকার সম্পাদক বেলাল আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দীন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান ইয়াহিয়া, কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হাসান পলাশ প্রমুখ।

চট্টগ্রামের পর আগামী ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে এবং ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন