ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, রাশিয়ার ওপর ইউরোপের কঠোর নিষেধাজ্ঞা এবং ইউরোপের তীব্র গ্যাস সঙ্কটকে কেন্দ্র করে ইদানিং লোকে ঠাট্টা করে বলছে যে, এই শীতে বার্লিন বা প্যারিসে যে পণ্যের মূল্য শত শত ইউরোর পর্যন্ত বাড়তে পারে, তা মস্কোতে মিলবে মাত্র কয়েক রুবলের বিনিময়েই। এই বিদ্রুপটি যে গভীর সত্যের ইঙ্গিত দেয়, তা হ’ল, রাশিয়া এবং পশ্চিমের মধ্যকার দ্বন্দের একটি স্পর্শকাতর মুহূর্তের। এ মুহূর্তে ইউরোপ যখন গভীর মন্দার দ্বারপ্রান্তে, তখন রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøালাদিমির পুতিনের আংশিক সৈন্য মোতায়েনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত দেশটিকে আরও একটি অর্থনৈতিক ধাক্কা দিয়েছে। এটি রাশিয়ার ব্যাঙ্কগুলিকে অনেকাংশে খালি করে দিয়েছে, কারণ লোকেরা দেশের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফেব্রুয়ারীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় চালু করা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশ্বের নবম-বৃহত্তর অর্থনীতিটির জন্য বিদেশী প্রযুক্তি এবং দক্ষতা উপলব্ধ করার সুযোগ অবরুদ্ধ করা তার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে অর্ধেকের মতো কমিয়ে দিয়েছে। তেল ও গ্যাস রপ্তানি রাশিয়ান অর্থনীতির প্রাণশক্তি। যুদ্ধের আগের তুলনায় এটি প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে এবং বছরের শুরুতে ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরে এটি আরও কমতে পারে। তবে, রাশিয়ার এতগুলি অসুবিধা সত্ত্বেও তার মন্দার সম্ভবত এখন সমাপ্তি ঘটেছে। গোল্ডম্যান শ্যাক্স, একটি ব্যাঙ্ক, যা বিশে^র অর্থনীতিগুলি মাসে মাসে কীভাবে কাজ করছে, তার ভিত্তিতে ‘বর্তমান-ক্রিয়াকলাপ সূচক’ তৈরি করে, যা বলছে যে, রাশিয়ার বর্তমান কার্যকলাপ বড় ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় বেশ কিছুটা প্রাণবন্ত। দেশটির গাড়ি শিল্পের উৎপাদন, যা কয়েক মাস আগে কার্যত শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল, তাও আবার সরব হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, রাশিয়ার শিল্পদ্যোক্তারা পশ্চিমের বাইরে থেকে সরবরাহের ডাক পেয়েছেন। মার্কিন ডলারের পরিপ্রেক্ষিতে, রাশিয়ার মাসিক পণ্য আমদানি এখন প্রায় নিশ্চিতভাবেই গত বছরের গড় ছাড়িয়ে গেছে।
আইএমএফ ১১ অক্টোবর প্রকাশিত তার সর্বশেষ পূর্বাভাসে এবছরের জন্য রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে উন্নীত করেছে। এপ্রিলে এটি ভেবেছিল যে, রাশিয়ান জিডিপি ৮.৫ শতাংশ হ্রাস পাবে। এটি এখন ৩.৪ শতাংশ পতনের আশা করছে। এটি নিয়ে আনন্দ করার কিছু নেই, তবে এটি সামাল দেয়ার যোগ্য। প্রকৃতপক্ষে, অর্থনৈতিক তথ্য প্রস্তাব করে যে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে রুশ সরকার ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের জন্য একটি খসড়া বাজেট পেশ করেছে। শিল্প সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স’র এলিনা রিবাকোভার মতে, বাজেটটি আগামী বছরগুলিতে বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ-সম্পর্কিত ব্যয়ের বড় বৃদ্ধি বোঝায়। সন্দেহ নেই, অর্থনৈতিক পতন এড়ানোর পর পুতিন বিদেশে এবং দেশে উভয়ই ক্ষেত্রেই দ্বিগুণ শক্তিতে জ¦লে ওঠার প্রতাশা করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন