মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সোনালি আসর

গল্প : হাবিবের মিলিটারি বধ

| প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আ বু   তা হে র : গত কয়েকদিন ধরে পাকিস্তানি মিলিটারিরা গ্রামের ধার দিয়ে টহল দিচ্ছে। হাবিব দু’দিন দেখেছে। একদিন নদীর ধার দিয়ে পনের বিশ জনের একটা দল যাচ্ছিল। হাবিব ঘর থেকে বের হয় না। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে। মার কড়া বারণ। বাহিরে যাওয়া যাবে না। হাবিবও সুবোধ বালকের মত ঘরের মাঝেই থাকে। মা তাকে একটু সময়ের জন্যও চোখের আড়াল করতে চায় না। মাস খানেক হল হাবিবের বাবাকে মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গেছে। তিনদিন পর ওর বাবার লাশ পাওয়া যায় বড় রাস্তার ঢালে। গ্রামের লোকজন ধরাধরি করে তার বাবার লাশ নিয়ে আসল। হাবিবের মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিল। মাকে ধরে বসে থাকে হাবিব। বেশি দেরীও করা যাবে না। মিলিটারিরা আসতে পারে। খুব দ্রুত হাবিবের বাবার লাশ দাফন করা হল। হাবিবের বুকে এক তীব্র ক্রোধ সেই থেকেই। পাকিস্তানী মিলিটারিদের দেখলেই ওর মাথায় খুন চেপে যায়। সারাক্ষণ ও ফন্দি আটে কিভাবে কি করা যায়। কিন্তু ও মা যেভাবে ওকে চোখে চোখে রাখে তাতে কি কিছু করা যায়।
কিরে কি ভাবিস?
চমকে উঠে পিছনে তাকায় হাবিব। জামিল এসেছে।
মিলিটারি দেখি।
কি বলিস! তোর ভয় করে না।
ভয় কিসের আবার। জানিস আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। ওদেরকে শায়েস্তা করার একটা বুদ্ধি।
মিলিটারিদের শায়েস্তা করবি তুই। ভেংচি কাটে জামিল।
চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।
না বাবা আমি ওর মধ্যে নেই। আমি ভাই প্রচ- ভীতু। আমাকে দিয়ে ওসব হবে না।
তোকে কিছু করতে হবে না। তুই শুধু জামাল আর আবীরকে খবর দিয়ে নিয়ে আয়।
জামিল উঠে চলে যায়। হাবিব বসে বসে ভাবে। যেভাবেই হোক মিলিটারিদের শায়েস্তা করতে হবে। এই জুলুম সহ্য করা যায় না। বাবার চেহারাটা ভাসে হাবিবের চোখে। টলটল করে হাবিবের চোখ।
একটু পরেই জামাল আর আবীর এসে হাজির। গোল হয়ে চারজন বসল।
কিরে, শুনলাম তুই নাকি মিলিটারিদের শায়েস্তা করার বুদ্ধি করেছিস?
হ্যাঁ।
তোর মাথা ঠিক আছেতো?
সবই ঠিক আছে।
কিন্তু কিভাবে?
বলছি, শোন। তোরা কি ওদেরকে দেখেছিস? নদীর পাড়ের বড় রাস্তা ধরে ওরা যায়। একদিন গাড়ি নিয়েও গিয়েছিল। পনের বিশ জন হবে।
লেফট রাইট লেফট। জামিল গড়গড় করে বলে উঠে।
দুষ্টমি করবি না।
সবাই আবার চুপ মেরে যায়।
আমি একটা ফন্দি এটেছি। যদি ঠিকমত কাজ হয় তবে কেল্লা ফতে।
সবাই ঝুকে পড়ে হাবিবের উপর। নিচু আওয়াজে হাবিব তার পরিকল্পনা বলতে থাকে। হা হয়ে বাকী তিনজন ওর পরিকল্পনা শুনতে থাকে। জামিলে চোয়াল এতক্ষণে ঝুলে গেছে।
জামিল তুই মুখ বন্ধ কর।
জামিল খপ করে খোলা মুখ বন্ধ করে ফেলে। রীতিমত উত্তেজিত ওরা।
দোস্ত কাজ হবে। একশত পার্সেন্ট কাজ হবে। আজ রাতেই করতে হবে।
কিন্তু মার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে রাতে বাইরে যাব? মা কিছুতেই রাতে বাইরে যেতে দেবে না।
কি করা?
আমি কয়েকদিন ওদেরকে দেখেছি। ওরা দুপুরের আগে আগে যায়। সারাদিন আর আসে না। বিকালে কাজটা করতে হবে। সন্ধ্যার আগে আগে করতে পারলে ভাল হবে। সন্ধ্যার আগে লোকজন তেমন থাকে না।
যেমন কথা তেমন কাজ।
পরদিন সুযোগ বুঝে চারজন সন্ধ্যার আগে আগে নদীর পাড় দিয়ে বড় রাস্তা ধরে অনেকদূর এগুলো। একটা মোক্ষম জায়গা ওরা বের করল। জায়গাটার কিনারা অনেকখানি নদীতে ভেঙ্গে গেছে। রাস্তাটা কোনমতে টিকে আছে। ব্যাস চারজন দ্রুত কাজ শুরু করল। কোদাল খন্তা দিয়ে রাস্তার ভাঙ্গা দিকে বড় একটা গর্ত খুঁড়ে ফেলল। তারপর মোটা লাঠি, গাছের ডাল দিয়ে গর্তটা ঢেকে দিল। তার উপর কলাপাতা দিয়ে ঢেকে হালকা করে মাটির আস্তরণ দিল। পুরো কাজটা শেষ করতে বেশি সময় লাগল না।
দারুণ হইছে। বোঝাই যায় না রাস্তাটা যে খোঁড়া হয়েছে। কি বলিস তোরা?
সবার একসাথে মাথা ঝুকায়। চারজনেই তাদের কাজে সন্তুষ্ট।
তাড়াতাড়ি চল, ভাগি।
চারজনেই বাড়ির দিকে দৌড়। পরিকল্পনা মাফিক চারজনেই যার যার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছল। হাবিব রীতিমত উত্তেজিত। তার বাড়ি থেকে জায়গাটা স্পষ্ট দেখা যায়। রাতে মনে হয় কিছু হবে না। কালকে ছাড়া কোন কিছুই জানা যাবে না। হাবিব সারা রাত মনে মনে দোআ করতে লাগল, যেন ওরা গাড়ি নিয়ে আসে।
পরদিন সকাল গড়িয়ে বেলা বাড়তে লাগল। দুপুরের আগে আগে হাবিবকে অবাক করে দিয়ে মিলিটারিরা একটা জীপ গাড়ি নিয়ে বড় রাস্তা ধরে আসলে লাগল। হাবিব জানালা দিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম ওর। একটু পরেই হাবিব হুররে বলে ঘরের মাঝে লাফিয়ে উঠে। ওর মা দৌড়ে আসে।
কিরে কি হয়েছে?
মা দেখো মিলিটারি বোঝাই একটা জীপ গাড়ি উল্টে নদীর মধ্যে পড়ে গেছে।
হাবিবের মা জানালা দিয়ে বড় রাস্তার দিকে তাকায়। কিছুই দেখা যায় না।
কই?
ওরা তো এখন নদীর মাঝে নাকানি চুবানি খাচ্ছে, তুমি দেখবে কি করে।
বলিস কি?
হাবিব নাচতে লাগল। খবরটা বন্ধুদের দেয়া দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন