আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মাধ্যমে বিএনপির চলমান বিভাগীয় কর্মসূচি শেষ হবে। ওই দিন ঢাকা সমাবেশের শহরে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহŸায়ক আমানউল্লাহ আমান। তিনি বলেন, যেখানেই বাধা সেখানেই সমাবেশ। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা হবে সমাবেশের শহর। শেখ হাসিনা কত বাধা দিবেন? হাসিনার দিন শেষ। আরেক মুহূর্ত এই সরকারকে কেউ দেখতে চাই না। আমাদের দাবি এখন একটাই, সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ। পুলিশ ও প্রশাসনকে বলব আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন কারণ হাসিনা আর নেই। শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতে দেওয়া হবে না। এ সময় তিনি অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশে ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, জামিন বাতিল করে নেতাকর্মীদের কারাগারে প্রেরণ, পুলিশি হামলা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলটির বিক্ষোভ সমাবেশে আমান এসব কথা বলেন।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই খÐ খÐ মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন ঢাকা মহানগরীর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে জড়ো হওয়ায় ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইলের নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দেশ শাসনের কোনো অধিকার নেই। কারণ তারা সবক্ষেত্রে ব্যর্থ। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। ভালোয় ভালোয় সরে পড়েন। নইলে দেশের জনগণ জানে কীভাবে সরাতে হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই সরকারের গণবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করা, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আমাদের আন্দোলন। সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন। আমরা বলতে চাই আমাদের যেসব সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন তাদের রক্ত ও আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। আমরা তাদের হত্যার মধ্য দিয়ে এই দানবীয় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ চাই।
তিনি বলেন, অবিলম্বে মিথ্যা মামলা ও গুলি করে মানুষ হত্যা বন্ধ করেন। ইতিহাস ভুলে যাবেন না। দেশের মানুষ কাউকে ক্ষমা করেনি। দেয়ালের লিখন পড়ুন। সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে শিখুন। আজকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেশি কেন?
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, সরকার মানুষের টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করছে। আর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিদ্যুৎ আছে পাবেন। কিন্তু আমাদের তো চলে না। দিনে পাঁচ-ছয়বার লোডশেডিং হয়। মানুষ অতিষ্ঠ। দেশের কলকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কলকারখানা বন্ধ হলে লাখ লাখ কর্মী বেকার হবে। আজকে শেখ হাসিনার সরকার ঘাবড়ে গেছে। তারা এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত (বাধ্যতামূলক অবসর) করছেন। কিন্তু এভাবে শেষ রক্ষা হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের আর দেশ শাসনের কোনো অধিকার নেই। ভালোয় ভালোয় পদত্যাগ করে সরে পড়ুন। নইলে দেশের মানুষ জানে কীভাবে সরাতে হয়। অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’ এ সময় অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহŸায়ক মো. আবদুস সালাম বলেন, খেলা শুরু হয়ে গেছে। আর আওয়ামী লীগ হাবুডুবু খাচ্ছে। আওয়ামী লীগ লেজ গুটিয়ে দৌড় দিছে। তাদের এখন তারেক রোগে পাইছে। তারেক রহমান দেশে আসলে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশের আসন্ন দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে হলে সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহŸান জানান তিনি। ৫ জনকে হত্যা করেছেন। প্রয়োজনে বুক পেতে দিব। কিন্তু আপনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। যারা সমাবেশে যাওয়ার আগেই বাস চলাচল বন্ধ করে দেন তাদের কালো তালিকা করা হবে। আমরা অনেক সহ্য করেছি আর নয়। আমরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহŸায়ক মো. আব্দুস সালাম। ঢাকা দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্য সচিব মো. আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, মীর সরফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানী ও রাজীব আহসান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, তাঁতি দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের মো. আব্দুর রহিম, শ্রমিক দলের হুমায়ূন কবির খান, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন