শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিএনপিকে কোনো বাধাই দমাতে পারবে না

নয়াপল্টনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সান্ধ্য আইন জারি, গাড়ী-লঞ্চ বন্ধ, পথে পথে বাধা, হামলা, গ্রেফতার কোনকিছু দিয়ে বিএনপিকে আর দমানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, হামলা-মামলা-নির্যাতন জনগণ আর তোয়াক্কা করে না। বিএনপির সাথে সর্বস্তরের জনগণ মাঠে নেমেছে। খুলনার জনসমাবেশ সেটাই প্রমাণ করে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে জনগণ ফুসে উঠেছে। জনগণের এই আন্দালন আর দমানো যাবে না। সরকারের বিদায় ছাড়া সামনে বিকল্প কিছু নেই। গতকাল শনিবার বিকেলে খুলনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, যুবদল মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক গোলাম মওলা শাহিন, সদস্য সচিব এনাম আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. জাহিদুর রহমান, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহহিয়া, দক্ষিণ বিএনপির সদস্য আরিফা সুলতানা রুমা, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ওমর ফারুক কাউসার প্রমুখ।

এর আগে সকালে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, খুলনায় বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে সরকার মূলত: সান্ধ্য আইন জারি করে। সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকারের নির্দেশে আন্ত:জেলা রুটে বাস, ফেরি, নৌ চলাচল বন্ধ ও লঞ্চ ধর্মঘট করা হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ, রোগী, পরীক্ষার্থীরা। সমাবেশে যাতে লোক সমাগম না হয়, তার সকল চেষ্টাই করেছে সরকার। অন্যদিকে চেকপোস্টসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। খুলনা মহানগরীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশই হচ্ছে গণসমাবেশে মানুষের ঢল যাতে না নামে। সরকারের এই অপকৌশলে জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়লেও তারা অদম্য উৎসাহ-উদ্দীপনায় সমাবেশ স্থলের দিকে ছুটেছেন। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ নদীপথে ট্রলার যোগে খুলনা মহানগরীর দিকে যাওয়ার পথে পথে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে হয়রানী করেছে অত্যধিক মাত্রায়।

তিনি বলেন, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায় খুলনায় যে বাড়ীতে অবস্থান করছিলেন সেই বাড়ীর লোকজনসহ সেখান থেকে প্রায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুধু স্থানীয় নেতাকর্মীরাই নয়, ঢাকা থেকেও যেসব বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা খুলনা গেছেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মাগুরা স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি মাইক্রোবাস সমাবেশ স্থলে যাওয়ার পথে পুলিশ আটক করে তাদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছে। সাতক্ষীরা থেকে বাসযোগে সমাবেশে আসার পথে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাগেরহাট থেকে আসার পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের বহনকারী একটি ট্রলার আটকিয়ে দিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ঝিকরগাছা থেকে আসার পথে ৩০/৪০ জন নেতাকর্মীকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে, পুলিশ তাদেরকে আটক করেছে। কেশবপুর থেকে সমাবেশ স্থলে আসার পথে সোনাডাঙ্গায় ‘এই গাড়ী থাম’ বলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হকিস্টিক, রড ও ছুরি দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ভয়ানক জখম করেছে। সন্ত্রাসীরা তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। সমাবেশ স্থলের আশপাশসহ খুলনা মহানগরীর প্রবেশ পথে নেতাকর্মীদের ঢুকতে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে।

রিজভী বলেন, সকল বাধা উপেক্ষা করে খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে লাখো মানুষের ঢল নামে। মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, সাতক্ষীরাসহ বিভাগের জেলা গুলো থেকে চিড়া-মুড়ি-গুড়-পানি-বিছানা নিয়ে সমাবেশ স্থলে হাজির হয়েছেন। পথিমধ্যে অনেকেই খবরের কাগজ কিংবা চাদর বিছিয়ে রাত্রি যাপন করেছে, এ যেন এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গণসমাবেশকে ঘিরে সরকার যে নীচতা, নীতিহীনতা, স্বার্থপরতা এবং ভীতি প্রদর্শণের পথ অবলম্বন করেছে তা এক কলঙ্কজনক নজীর। স্থানীয় প্রশাসন নিজেরা সরকারের দুর্বৃত্তপনার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যখন পথে পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করেছে তখন সব জেনে বুঝেই প্রশাসন নিশ্চিন্তে নিদ্রা গেছে। সমাবেশকে নিয়ে যে তাণ্ডব দৃশ্যমান তা আওয়ামী ফ্যাসিবাদেরই উন্মত্ত লীলা।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনগণের শক্তিকে শিকারী বাহিনীর মতো ওঁত পেতে থেকে আক্রমণ করলেও তাকে যে স্তিমিত করা যায় না, খুলনায় মানুষের সমাগম তারই এক বড় দৃষ্টান্ত। জনগণের শক্তিকে কেউ কখনো প্রতিহত করতে পারে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন