চট্টগ্রামে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল আলম নুরুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমানে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নূরে আলম মিনাসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভ‚ঁইয়ার আদালতে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান এই নালিশী মামলার আবেদন করেন।
মামলায় নূরে আলম মিনা ছাড়াও রাউজান থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেফায়েত উল্লাহ ও উপ-পরিদর্শক শেখ মো. জাবেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। আদালত আবেদনটি আদেশের জন্য অপেক্ষমান রাখেন। পরে বিকেলে আদালত আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন বলে জানান মহানগর পিপি এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী।
২০১৭ সালের ৩০ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম ওরফে নুরুর লাশ রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানিয়েছিল, নুরুর মাথায় গুলি এবং সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। হাত-পা রশি দিয়ে ও শার্ট দিয়ে চোখ বাঁধা এবং মুখের ভেতর ওড়না ঢোকানো পাওয়া যায়।
ওইদিন দুপুরে বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া ঠেলারঘাটে কর্ণফুলী নদীর তীরে গিয়ে নুরুর লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী, বোন ও ভগ্নিপতি। তখন পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছিলেন, ২৯ মার্চ রাত ১২টার দিকে সাদা পোশাকের কয়েকজন নুরুকে নগরীর চন্দনপুরা এলাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। রাউজানের স্থানীয় রাজনীতিতে নুরু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ ছিল, রাউজান থানার নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জাবেদ (শেখ জাবেদ) ছাত্রদল নেতা নুরুকে চন্দনপুরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে লাশ কর্ণফুলী নদীর তীরের পাশে ফেলে দেন। তবে রাউজান থানা পুলিশ সেসময় চট্টগ্রাম নগরীতে তাদের কোন অভিযান ছিল না এবং নুরুকে তারা আটক বা গ্রেফতার করেনি বলে জানিয়েছিল।
এ ঘটনায় পাঁচ বছর পর দাখিল করা নালিশী মামলার আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা পরিকল্পিতভাবে নুরুকে বাসা থেকে তুলে রাউজানের নোয়াপাড়া কলেজ মাঠে নিয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত অমানুষিক নির্যাতন করে এবং পরে মাথায় গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীর তীরে ফেলে দেন। মামলার আবেদনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৩ (১), ৫ (২), ৪ (১) (ক) ও ১৫ (২) ধারায় অপরাধ আমলে নেয়ার আরজি জানিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন বাদী।
বাদীর আইনজীবী আব্দুস সাত্তার ইনকিলাবকে বলেন, আদালত আমাদের মামলার আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দলের যেসব নেতাকর্মী পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর শিকার হয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা দায়ের হবে। কেন্দ্রীয় সেলের নির্দেশে নুরুকে হত্যার ঘটনায় কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেছেন। আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেয়ায় পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে কেন্দ্রের সাথে আমরা আলাপ করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন