ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের মোরবি জেলায় মাচ্ছু নদীতে ভেঙে পড়া সেতুটির কোনো ফিটনেস সনদ ছিল না। এমনকি প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো এই ঝুলন্ত সেতুটি সংস্কারের পর পুনরায় খুলে দেওয়ার আগে নেওয়া হয়নি সরকারি অনুমতিও। স্থানীয় পৌরসভার প্রধানের বরাত দিয়ে সোমবার (৩১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, গুজরাটের মোরবি জেলার মাচ্ছু নদীতে প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক ওই ঝুলন্ত সেতু রোববার ভেঙে পড়ে। মেরামতের পর চারদিন আগে এই সেতুটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। ভেঙে পড়ার সময় পাঁচ শতাধিক মানুষ সেতুতে ছিলেন। ঝুলন্ত এই সেতুটি ভেঙে পড়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ১৪১ জনে। এছাড়া আহতও হয়েছেন অনেকে। এছাড়া এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজনের অনুসন্ধান চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রায় ১৫০ বছর আগে নির্মিত মোরবির ঝুলন্ত এই সেতু ভারতের ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায়ও রয়েছে। গুজরাটের স্থানীয় নববর্ষ উপলক্ষে মেরামতের পর গত চারদিন আগে (২৬ অক্টোবর) সেতুটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। মোরবি পৌরসভার কর্মকর্তারা বলেছেন, যথাযথ ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই সেতুটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় একটি বেসরকারি ট্রাস্ট সেতুটির মেরামত ও সংস্কার কাজ করেছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই ওই ট্রাস্ট সেতুটি খুলে দেয়। এনডিটিভি বলছে, সরকারের টেন্ডার পাওয়ার পর ওরেভা নামের একটি বেসরকারি ট্রাস্ট সেতুটি সংস্কারের কাজ করে। সংস্কারের জন্য প্রাচীন এই সেতুটি সাত মাস ধরে বন্ধ ছিল। তবে গত ২৬ অক্টোবর এটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। মোরবি মিউনিসিপ্যাল এজেন্সির প্রধান সন্দীপসিংহ জালা বলেছেন, ওরেভা কোম্পানি সেতুটি খোলার আগে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফিটনেস সনদ নেয়নি।
তিনি বলছেন, ‘সরকারি টেন্ডারের মাধ্যমে বেসরকারি ওই ট্রাস্টটি সংস্কারের কাজ পেয়েছে। আর তাই ব্রিজটি খোলার আগে ওরেভা গ্রুপের ওই সেতুটির সংস্কারের বিবরণ দেওয়ার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী সংস্কার কাজ ও সেতুর বর্তমান অবস্থা যাচাই করার কথা ছিল। কিন্তু তারা এটি করেনি। সরকার এই (সেতু খোলার) বিষয়ে জানত না।’ এদিকে দুর্ঘটনার আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে বহু মানুষকে সেতুর ওপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে দৌড়াতে দেখা গেছে। তাদের নড়াচড়ায় ক্যাবল ব্রিজটিকে দুলতে দেখা গেছে বলেও জানিয়েছে এনডিটিভি। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গুজরাট রাজ্যের রাজধানী আহমেদাবাদ থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ঝুলন্ত সেতুটি রোববার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ভেঙে পড়ে। ঘটনায় সময় সেতুতে প্রায় ৫০০ জন লোক ছট পূজার কিছু রীতি পালনের জন্য জড়ো হয়েছিলেন।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজ্য সরকারও নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে চার লাখ এবং আহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন