ইথিওপিয়ায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া, লাখো মানুষকে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেওয়া দুই বছরের সংঘাতের অবসানে আকস্মিক এক চুক্তিতে পৌঁছেছে বিবদমান দুটি পক্ষ। নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ওলুসেগুন ওবাসানজোর মধ্যস্থতায় ‘বৈরিতা স্থায়ীভাবে অবসানের লক্ষ্যে’ হওয়া এ চুক্তিকে আফ্রিকান ইউনিয়ন ‘নতুন ভোর’ অ্যাখ্যা দিয়েছে বলে প্যারিসভিত্তিক এক বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। ইথিওপিয়ার সরকার ও তিগ্রাই বাহিনীর মধ্যে এই চুক্তির ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ সরবরাহ ফের শুরু হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হল। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় তিগ্রাইয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের এখনই খাদ্য সহায়তা দরকার, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব। ওই এলাকার প্রতি তিনটি শিশুর একটিও গুরুতর পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি হলেও তা কতদিন পর্যন্ত টেকে তা নিয়ে অনেকে শঙ্কাও ব্যক্ত করছেন। সংঘাত বন্ধে এর আগেও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল দুই পক্ষ; সর্বশেষ যে বিরতি হয়েছিল, তা চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক মাস পরেই চলতি বছরের অগাস্টে ভেঙে পড়ে। যুদ্ধে ইথিওপিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে ইরিত্রিয়ার বাহিনীও তিগ্রাই বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিল, যুদ্ধবিরতির আলোচনায় তাদের অংশগ্রহণ না থাকাও অনেকের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। তবে এবারের চুক্তিতে অনেক বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। ইথিওপিয়ার সরকারি কর্মকর্তা এবং তিগ্রাই পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) প্রতিনিধিরা নিরস্ত্রীকরণ পরিকল্পনা এবং ত্রাণ সরবরাহসহ গুরুত্বপূর্ণ সব পরিষেবা পুনরায় চালুর ব্যাপারে স্বাক্ষর করেছেন। “ইথিওপিয়ার কেবল একটিই জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী থাকবে,” বলা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। টিপিএলএফ বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে। তারা অস্ত্র জমা, সৈন্য সমাবেশ বন্ধ এবং ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার অঙ্গীকার করেছে। ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ এই চুক্তিকে ‘মহান’ অ্যাখ্যা দিয়ে চুক্তিটি বাস্তবায়নের আঙ্গীকার করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় সপ্তাহখানেকের আলোচনার পর যার মধ্যস্থতায় এই চুক্তি হয়েছে হয়েছে, সেই ওলুসেগুন বলেছেন, তিগ্রাই ও ইথিওপীয় বাহিনীর মধ্যে এ চুক্তির মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়া কেবল শুরু হল। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এটি (চুক্তি) স্বাগত জানানোর মত প্রথম পদক্ষেপ, যা তুমুল দুর্ভোগে বিপর্যস্ত লাখ লাখ ইথিওপীয় বেসামরিককে খানিকটা স্বস্তি দিতে শুরু করবে বলে আমরা আশা করছি। গৃহযুদ্ধের এই দুই বছরে তিগ্রাই বাইরের বিশ্ব থেকে মোটামুটি বিচ্ছিন্নই ছিল। সেখানকার হাসপাতালগুলো ওষুধ ফুরিয়ে যাচ্ছিল, বিদ্যুৎ-ফোন ও ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবাও পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। যুদ্ধ চলাকালে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বর্বরতা, জাতিগত নিপীড়ন ও যৌন সহিংসতার অভিযোগ এনেছিল। বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন