বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

নেতানিয়াহুর হাত ধরে ইসরাইলে ইহুদি উগ্রপন্থীদের উত্থান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইসরাইলের নির্বাচনে জয় পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে এ নির্বাচনের সবচেয়ে লক্ষণীয় যে বিষয় তা হলো প্রকাশ্য আরব বা মুসলিম বিদ্বেষী ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের বিরাট সাফল্য। ‘এখন দেশের অবস্থা ভালো হবে। তিনি জন-নিরাপত্তা মন্ত্রী হলে অবস্থা বদলাবে,’ কট্টর আরব বিদ্বেষী রাজনীতিক ইতামার বেন-গাভিরের নির্বাচনী প্রচারণা কার্যালয়ে ভেতর দাঁড়িয়ে বিবিসিকে বলছিলেন তার একজন সমর্থক জুলিয়ান। ‘তিনি (বেন-গাভির) ইসরাইলের ভালো চান। তিনি সন্ত্রাসীদের তাড়াতে চান,’ বলছিলেন অধিকৃত পশ্চিম তীরের একটি ইহুদি বসতির বাসিন্দা নোয়াম, ‘আমরা এদেশে আরবদের চাই না। তারা আমাদের দিকে পাথর ছোঁড়ে। ইসরাইলের জায়গা দখল করছে।’
নোয়াম যখন এসব কথা বলছিলেন সেসময় দলীয় একজন কর্মী তাকে দ্রুত টেনে নিয়ে যায়। এর কারণ হয়তো তাদের নেতা বেন-গাভির - যিনি এর আগে বর্ণবাদী আচরণের জন্য আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, - নিজের ভাবমূর্তি কিছুটা বদলাতে চাইছেন। মূলধারার রাজনীতিবিদ হতে চাইছেন যদিও তার আরব বিদ্বেষী কথাবার্তা বন্ধ করেননি তিনি। বেন-গাভির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি ‘সব ইসরাইলি নাগরিকের স্বার্থে কাজ করবেন, এমনকি যারা আমাকে ঘেন্না করে।’ ‘আবারও সময় এসেছে এদেশের ভূমির মালিকানা হাতে নেয়ার,’ মঙ্গলবার রাতে এক্সিট পোলের ফলাফল ঘোষণার পরপরই মন্তব্য করেন এই কট্টর আরব বিদ্বেষী রাজনীতিক। তারা জিতছেন তা বোঝার পর থেকেই জেরুসালেমে তার সমর্থকদের সেøাগান ছিল, ‘সন্ত্রাসীদের মৃত্যু চাই।’ এর আগে তাদের কণ্ঠে সবসময় শোনা যেত-‘আরবদের মৃত্যু চাই।’
দল ক্ষমতার কেন্দ্রে ঢুকবে এবং বেন-গাভির বড় কোনও মন্ত্রী হবেন এই সম্ভাবনায় হয়তো আরব শব্দটির বদলে সেøাগানে সন্ত্রাসী শব্দটি জোড়া হয়েছে। পূর্ব জেরুসালেমে বেন-গাভিরের উসকানিমূলক বক্তব্য এবং আচরণ সব সাংবাদিকেরই জানা। বিভিন্ন সময়ে আমরা সবাই তা দেখেছি। ইসরাইলের ‘জেরুসালেম দিবসে’ তাকে একাধিকবার পুরনো শহরের স্পর্শকাতর ফিলিস্তিনি এলাকার ভেতর দিয়ে কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে।
গত মাসেই পূর্ব জেরুসালেমের ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত শেখ জারাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের দিকে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চিৎকার করে হুমকি দিতে দেখা গেছে তাকে। কিন্তু ঐ ঘটনার এক মাস পরই তার কট্টরপন্থী ওতজ্মা ইয়াহুদি (ইহুদি ক্ষমতা) পার্টি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হয়ে গেছে। দলের নেতা হিসাবে তিনি আসন্ন মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ আশা করছেন। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব চাইছেন তিনি, এবং তা পেলে পুলিশ বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন বেন-গাভির।
তার ১৭ বছর বয়সী একজন নারী সমর্থক জোরি এলমাকিয়েজ তার নেতাকে নিয়ে উদ্বেগকে পাত্তাই দিলেন না। বরঞ্চ তিনি মনে করেন নির্বাচনের এই ফলাফল ‘খুবই সন্তোষজনক।’ ‘আমি মনে করি ওতজ্মা ইয়াহুদি পার্টির বিরোধীদের উদ্বেগের কিছু নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত এই দলের আসল লক্ষ্য ইসরাইল এবং এদেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা।’ ইসরাইলে এখনও অনেক মানুষ রয়েছেন যারা দেশের ভাবমূর্তি এবং ভবিষ্যৎ গন্তব্যকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে চান। বুধবার তেল আবিবে বর্তমান অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিড তার দল ইয়েশ আতিদ দলের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে যখন বলছিলেন ইসরাইলিরা ‘উসকানি এবং ঘৃণার রাজনীতির’ অবসান চায়, তার সমর্থকদের বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। বামপন্থী, ডানপন্থী, আরবসহ বিভিন্ন মত-পথের দল নিয়ে তৈরি তার কোয়ালিশন সরকার খুব কম দিনই টিকলো।
তার এই স্বল্প সময়ের শাসনকালে ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে সংঘাত হয়েছে তা ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি। সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে, এবং তার সরকার ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত নিরসনের পথ খোঁজার তেমন কোনো চেষ্টা করেনি। প্রগতিশীল মিডিয়া বলে পরিচিত প্লাস৯৭২ ম্যাগাজিনের সম্পাদক হাগাল মাত্তার মনে করেন লাপিডের সরকার সংঘাত নিরসনে কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি। তিনি মনে করেন নির্বাচনে বামপন্থীদের সমর্থন কমার পেছনে ঐ ব্যর্থতা অনেকটাই দায়ী। সূত্র : বিবিসি নিউজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন