বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশেকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিল অচলাবস্থা। বাস, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক ও থ্রিÑহুইলার চলাচল ছিল বন্ধ। ধর্মঘট ডাকা হয়, নৌ পথে এবং আন্ত:জেলা পরিবহনেও। ফলে কার্যত; সারাদেশের সাথে বিচ্ছিন্ন ছিল বরিশাল শহর। তারপরও বাধা-বিপত্তি, হামলা উপেক্ষা করে সমাবেশমুখী মানুষের স্রোত ছিল। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রলারে বোঝাই করে শনিবার শেষ রাত থেকেই মানুষ পৌঁছছে মহানগরীতে। দুপুর ১২টার মধ্যে শত শত ট্রলারে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মানুষ মহানগরীতে পৌঁছায়।সবার গন্তব্যই ছিল বঙ্গবন্ধু উদ্যান-বেলপার্ক। দুপুর ১টার আগে মহানগরী ও সন্নিহিত এলাকা থেকেও মিছিলের পর মিছিল ছুটতে থাকে সমাবেশ অভিমুখে। এক পর্যায়ে বিএনপির গণসমাবেশে বেলপার্ক মাঠ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। ঠাঁই ছিল না অলি-গলিতেও। স্লোগানে, স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা।
পথে পথে বাধা: সমাবেশের দিনে আসার পথে বাধা ও হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এদিন সকালে ঢাকা থেকে বরিশালের সমাবেশে যোগদানের পথে গৌরনদীর মাহিলাড়াতে ইঞ্জিনিয়ার ইসরাক হোসেনের গাড়ী বহরে হামলায় কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর ও তার সফরসঙ্গী অন্তত ৫ জন আহত হন। একই এলাকায় প্রকৌশলীদের নেতৃবৃন্দ প্রকৌশলী রিজু, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী সেলিনা সুলতানা নিশিতার গাড়িতে আক্রমণ ও ভাঙচুর করেছে। পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা ও পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকার পথে পথে সমাবেশে যোগদানকারীদের বাঁধা দেয়ার অভিযোগ ছিল গত দুদিন। পিরোজপুরের নেসারবাদে শুক্রবার কয়েকজন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
পরিবহন ধর্মঘটে দুর্ভোগ: বরিশালে গণসমাবেশকে সামনে রেখে আরো ১০ দিন আগেই পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত জনম্রোত আটকানো যায়নি। শুক্রবার সকাল থেকেই বরিশালের সাথে সড়ক ও নৌ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি শুক্রবার সকাল থেকে বরিশালের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের অন্য জেলাগুলোর সাথে বাস সার্ভিস বন্ধ রাখে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠান-বিআরটিসি’ও। সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপো ম্যানেজারের মতে ‘যাত্রীর অভাবে তাদের বাস ছাড়েনি’। শুক্রবার রাতে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানীর নৌযোগাযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়। অপরদিকে বাস ও মিনিবাস ধর্মঘটের রেশ ধরে শুক্রবার সকাল থেকেই মহানগরীতে ইজিবাইক ও গ্যাস চালিত থ্রিÑহুইলার চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরগুনাতে বৃহস্পতিবার রাতে ও ঝালকাঠীতে শুক্রবার সকালে আকষ্মিক পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সব ধরনের যানবাহনের চলাচল বন্ধ করে গোটা দক্ষিণাঞ্চলকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। বরিশাল মহানগরীতে প্রবেশের সবগুলো রাস্তায়ই এ্যাম্বেুলেন্স, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসগুলোতে তল্লাশী করেই নগরীতে প্রবেশ করতে দেয় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের লোকজন। মহানগর ট্রাফিক পুলিশও কোন কোন স্থানে যানবাহনে তল্লাশী চালায়। এদিকে শুক্র ও শনিবার বিমান বন্দরে অবতরন করা ফ্লাইটগুলোর কয়েকশ যাত্রীর বেশীরভাগই কোন যানবাহন না পেয়ে রিক্সা ভ্যানে করে ১৫ কিলোমিটার দূরে নগরীতে প্রবেশ করতে গিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনার শিকার হন। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মুমুর্ষ রোগীদের হাসপাতালে স্থানন্তর করতে গিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ও দূর্ভোগের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। কোন ধর্মঘট ডাকা না হলেও শুক্রবার সকাল থেকে এক চতুর্থাংশ রিক্সাও বরিশালের রাস্তায় নামেনি। ফলে জনগণের দূর্ভোগ ছিল সব বর্ণনাতীত।
ইন্টারনেট বিড়ম্বনা: সমাবেশের দিনে বরিশাল মহানগরী ও সন্নিহিত এলাকায় সকাল থেকেই ইন্টারনেট বিড়ম্বনা শুরু হয়। ফলে প্রায় যোগাযোগ শূণ্য এ নগরীর সাধারণ মানুষের দূর্ভোগের নতুন মাত্রা যোগ হয়। বিএনপি’র বিভাগীয় গনসমাবেশের সংবাদ সংগ্রহকারী গনমাধ্যম কর্মীরাও চরম বিড়ম্বনার শিকর হন। স্থানীয় কিছু ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীর লাইন অতি চালু থাকলেও গতি অত্যন্ত সীমিত। দুপুর থেকে গ্রামীণফোনসহ অন্যসব মোবাইল অপারেটরের ভয়েস কলও করা যাচ্ছিল না। ডাটা সার্ভিসও ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ। সন্ধার পরে সীমিত পরিসেবা চালু হলেও গতি ছিল খুবই কম।
সমাবেশ শেষে লঞ্চ-গাড়ি চালু: বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশ শেষে থ্রি হুইলার ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়। বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক জানান, নদীবন্দর থেকে ঢাকাগামী ৩টি লঞ্চ চলাচল করবে বলে মালিকপক্ষ জানায়। এ ছাড়া অন্যান্য সব রুটের লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল থেকে নগরজুড়ে থ্রি হুইলার চলাচল করে। এছাড়া সন্ধ্যা থেকে খেয়া চলাচলও শুরু হয়।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন