এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ক্রমেই তার ভয়াবহতা দেখিয়ে চলেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। হাসপাতালগুলো রোগীর ভীড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরো ৯০৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে মশাবাহিত রোগটিতে মোট তিন হাজার ৩৬৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ সময় নতুন করে আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০ জনে।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল একই সময়ের মধ্যে সারাদেশে নতুন করে আরো ৯০৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৪৭৬ জন ঢাকায় এবং ৪৩২ জন ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট তিন হাজার ৩৬৮ জন ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন দুই হাজার ৪২ জন। এছাড়া এক হাজার ৩২৬ জন ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪৩ হাজার ১০৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৯ হাজার ৫৬৯ জন। আর এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ১৭০ জন।
অথচ চলতি বছরের শুরু থেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলেও বছরের মাঝামাঝি এসে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে রোগটি। বছরের প্রথম পাঁচ মাস সংক্রমণের হার অত্যন্ত কম থাকলেও গত তিন মাসে তা আকাশ ছুঁয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে প্রাণহানির ঘটনাও। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোন মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও পরের তিন মাসে ঘুরে গেছে দৃশ্যপট। জুনে এক জনের মৃত্যু হলেও জুলাইয়ে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় নয়ে। আগস্টে আরও বেড়ে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ জনে। সেপ্টেম্বর মাসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪ জনে। অক্টোবর মাসে মৃত্যু হয়েছে ৮৬ জনের। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ছয় দিনে এ সংখ্যা ২৯ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১২৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২০ জনে। এপ্রিলেও নিয়ন্ত্রণে থাকা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন ভর্তি হয়েছিলেন। মে মাসে সেই সংখ্যা এক লাফে প্রায় আটগুণ বেড়ে হয় ১৬৩ জন। তবে এতে তেমন দুঃশ্চিতার কারণ ছিল না। কারণ এ সময়ের ব্যবধানে কোন মৃত্যু নেই।
তবে এর পরের মাসে (জুনে) ৭৩৭ জন হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয় একজনের। জুলাইয়ে এই আরও ভয়াবহ হয় পরিস্থিতি। সে সময়ে ১ হাজার ৫৭১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে মৃত্যু হয় ৯ জনের। আগস্ট মাসে রোগী ভর্তির সংখ্যা আগের মাসের তুলণায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ৩ হাজার ৫২১ জন হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয় ১১ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ৯ হাজার ৯১১ জন হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। অক্টোবর মাসে মৃত্যু হয়েছে ৮৬ জনের। ভর্তি হয়েছেন ২১ হাজার ৯৩২ জন রোগী। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ছয় দিনে ৫ হাজার ৮৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি মারা গেছেন ২৯ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন