বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু সচেতনতায় চাই সকলের সহযোগিতা

মাসুদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগ। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু জ্বরের সময় শুরু হয়ে গেছে। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে। এডিস মশা সাধারণত স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই, তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ পানি যে কোনো জায়গায় জমতে পারে। বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।

এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচারাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। সাধারণভাবে ডেঙ্গু জ্বর ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, তবে ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। যেহেতু এখন ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। জ্বরের সাথে যদি সর্দিকাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোনো বিষয় জড়িত থাকে তাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছুও হতে পারে। তাই জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে। ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ ক্যাটাগরি। ‘এ’ ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোনো প্রয়োজন নেই। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা কিছুই খেতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন, ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইনসহ পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

২০২১ সালে এডিস মশা তথা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে রয়েছে। গত এপ্রিল মাসে ২০২০ সালে চিরুনি অভিযানে যে সকল বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত হয়েছিল সেই সংরক্ষিত ডাটাবেজ থেকে ১৭২০টি বাড়ি/স্থাপনার মালিককে মোবাইলের মাধ্যমে ডেঙ্গু সতর্কতামূলক এসএমএস প্রদান করা হয়েছে। ২২ মে ২০২১ মেয়রের সভাপতিত্বে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর উপস্থিতিতে মিরপুর, পল্লবীতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নাগরিক সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। একই সাথে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সকল অঞ্চলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মে মাসে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পত্র প্রদান করা হয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক বার্তা সংবলিত ১ লাখ স্টিকার প্রস্তুত করে বিতরণ করা হয়েছে। ১ জুন ২০২১ থেকে ১২ জুন ২০২১ পর্যন্ত ১০ (দশ) দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ১৩ জুন ২০২১ থেকে ১৭ জুন ২০২১ পর্যন্ত ৫ (পাঁচ) দিনে প্রতিদিন ২টি অঞ্চল করে ১০টি অঞ্চলে কাউন্সিলরবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে সচেতনতামূলক এডভোকেসি সভা করা হয়েছে। ১৯ জুন ২০২১ থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল হাসপাতাল এলাকায় লার্ভিসাইডিং ও ফগিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। গত ৩০ জুন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে নির্মানাধীন ভবনসমূহে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ডিএনসিসি’কে সহযোগিতা করার জন্য রিহ্যাবের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সভা করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে বাড়ির আশেপাশে ব্যাপকভাবে নিয়মিত লার্ভিসাইডিং ও ফগিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইমামগণের মাধ্যমে প্রতিটি মসজিদে জুমার নামাজের আগে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক আলোচনা করার নির্দেশ প্রদানের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রদান করা হয়েছে।

প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। কাউন্সিলরগণের মাধ্যমে ওয়ার্ড পর্যায়ে মাইকিং করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে করণীয় সর্ম্পকে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। ডিএনসিসি’র আওতাধীন এলাকায় সকল নির্মাণাধীন স্থাপনার তালিকা প্রস্তুত করে এসকল স্থানে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ১১ জুলাই ২০২১ থেকে ৮ (আট) দিনব্যাপী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ চিরুনি অভিযান চলমান রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মাতৃসদন কেন্দ্র, প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সেন্টারগুলোসহ সর্বমোট ৪৬টি কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ডেঙ্গু টেস্ট কীট মজুদ আছে। ২৭ জুলাই ২০২১ থেকে ৭ আগস্ট ২০২১ তারিখ পর্যন্ত ১০ (দশ) দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে মেয়র মহোদয়ের নেতৃত্বে ২৭ জুলাই ২০২১ থেকে ১০ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত রোড শো করা হয়েছে। নগরবাসীকে সচেতন করার লক্ষ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিয়মিত মামলা এবং জরিমানা করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন