সম্প্রতি ডেঙ্গুতে নারীরা বেশি মারা গেছে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশন ফগিংয়ের মাধ্যমে যে ওষুধ প্রয়োগ করে তা মানুষের ঘরে পৌছায় না। এ কারণে ওষুধ প্রয়োগ করেও কোন লাভ হয় না। ডেঙ্গু নির্মূলের জন্য ওষুধ যাতে মানুষের ঘরেও পৌছানো যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ফগিংয়ের চেয়ে লার্ভা ধ্বংসে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলেও অভিমত দিয়েছেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে নগর ভবনে ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় পরামর্শ ও অবহিতকরণ সভা’য় এ অভিমত দেন বিশেষজ্ঞরা। সভায় ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও তিনি অসুস্থ থাকার কারণে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ ইমদাদুল হক সভাপতিত্ব করেন। আলোচনায় অংশ নেন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ববিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান, আইসিডিডিআরবির অ্যাসোসিয়েট সাইন্টিস্ট শফিউল আলম, উর্ধ্বতন কীট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা আসিফ ইকবাল, মশক নিবারণী দফতরের সহকারী পরিচালক আ.ন.ম ফয়জুল হক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডা. আফসানা আলমগীর খান, অধ্যাপক সানিয়া তহমিনা প্রমুখ।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ঢাকা সিটি ভাগ করার সময় আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন সরকার আমার প্রতি রুষ্ট হয়েছিল। এখন দেখছি ঢাকা সিটি ভাগ করে কোন লাভ হয়নি। কারণ মশাতো আর ভাগ বোঝে না। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে শুধু সিটি কর্পোরেশন বা স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কে দোষা দিয়ে লাভ নেই। কারণ দোষারোপ করা সহজ কিন্তু সমাধান করা অনেক কঠিন কাজ। সবাই কিছু কিছু কাজ করছে। কিন্তু এভাবে হবে না। সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এজন্য কোন শক্তিশালী মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি হাইপাওয়ারের কমিটি গঠন করতে হবে। যারা সারাদেশের সব সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার কাজের তদারকি করবে।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, পৌরসভার মেয়রদের যে ক্ষমতা আছে ঢাকার মেয়রদের সে ক্ষমতাও নেই। তাদের শুধু মন্ত্রীর সম্মান দেয়া হয়েছে। যদি কাজের ক্ষমতাই না থাকে সম্মান দিয়ে কি হবে? নগরীর উন্নয়ন করতে হলে হয় নগর সরকার গঠন করতে হবে, নয়তো সাত মন্ত্রণালয়ের সেবা সংশ্লিষ্ট কাজ মেয়রের অধীনে রাখতে হবে। মেয়রের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় দিতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। কোন নির্দিষ্ট মাস ধরে নয় সারা বছরই মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।
ড. কবিরুল বাশার বলেন, মশার বিস্তার রোধে আগে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করতে হবে। সিটি কর্পোরেশন যে ফগিং করে তাতে নগরবাসী খুশি হয়, কিন্তু তাতে কাজ কম হয়। বরং লার্ভা ধ্বংসে বেশি কাজ করা উচিত। এছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক সামাজিক সংগঠনগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
জি এম সাইফুর রহমান বলেন, এডিস মশার কোন সীমানা নেই। মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটিকে একসাথে কাজ করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ফগিং করলে মাত্র ২৫ ফুট পর্যন্ত ধোয়া যায়। এতে বাসাবাড়িতে ওষুধ পৌছায় না। এজন্য ওষুধ যাতে বাসার ভিতরে পৌছায় সেজন্য মাইকিং করে আগেই এলাকাবাসীকে জানিয়ে নারী-শিশুদের ঘর থেকে বের করে ওষুধ দিতে হবে। তাহলে প্রকৃত ফল পাওয়া যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন