সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ এ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বিজয়ী জাতি সব সময় এটা মাথায় রাখতে হবে। খেলার মাঠেও মাথায় রাখতে হবে, যুদ্ধে জয় করেছি খেলায়ও জয় করব। এই চিন্তা নিয়ে সবাইকে চলতে হবে। তাহলেই সাফল্য আসবে। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ এ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় সাফজয়ী বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ফুটবলারদের পাঁচ লাখ ও প্রশিক্ষকদের দুই লাখ করে আর্থিক সম্মাননার চেক তুলে দেয়া হয়।
সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে খেলাধুলার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাওয়াহ খেলাধুলার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা বিভাগে একটা করে বিকেএসপি করে দেওয়া হবে। আমরা চাই দেশটা এগিয়ে যাক। বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ আইন প্রণয়ন করে একটা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছি। এই ফাউন্ডেশনে করোনাকালীন সময়ে ৩০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম মোট ৪০ কোটি টাকা সিড মানি দেওয়া হয়েছে। আমি আরো ২০ কোটি টাকা দেব।
এ সময় দেশের ব্যবসায়ীসহ বিত্তবানদের খেলোয়াড়দের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যারা খেলাধুলা শেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করে বেশ টাকা পয়সার মালিক হচ্ছে তাদেরও উচিত এই দিকটায় বেশি করে দেখা। তিনি বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন তৃণমূল পর্যায়ে থেকে হোক সেটাই ছিল তার স্বপ্ন। বাংলাদেশের কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না, উন্নত জীবন পাবে। আমাদেরও সেটাই লক্ষ্য। সরকার গঠন করার পর থেকেই সেই প্রচেষ্টায় চালিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা বিজয়ী জাতি সব সময় এটা মাথায় রাখতে হবে। খেলার মাঠেও মাথায় রাখতে হবে, যুদ্ধে জয় করেছি খেলায়ও জয় করব। এই চিন্তা নিয়ে সবাইকে চলতে হবে। তাহলেই সাফল্য আসবে। কারণ মনোবল ও আত্মবিশ্বাস একান্তভাবে দরকার। আর সব সময় প্রশিক্ষণ দরকার। কোনো মতেই শিথিল করা যাবে না। যত বেশি ট্রেনিং হবে তত বেশি খেলাধুলার উৎসাহ বাড়বে। তিনি আরো বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা যত খেলাধুলা ও সাহিত্য চর্চা করবে তাদের তত দেশপ্রেম গড়ে উঠবে। আমাদের ছেলেরা যা পারেনি, মেয়েরা তা পেরেছে। শুনলে হয়তো ছেলেরা রাগ করবে, তবে রাগ করার কিছু নেই। ছেলেদের প্রতিযোগিতাটাও একটু বেশি, তাও আমি বলব আমাদের মেয়েরা যথেষ্ট ভালো করছে।
শিশুদের প্রতিদিন খেলাধুলার জন্য সুযোগ করে দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামে আগে অনেক খেলাধুলা ছিল। ঢাকার বাচ্চারা তো ফ্ল্যাটে থেকে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে। খেলাধুলায় যায় না। এটা হলো বাস্তবতা। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, সারাক্ষণ হয় মোবাইল ফোন নয়তো ট্যাব নিয়ে বসে থাকে। কাজেই ফিজিক্যালি চর্চাটা হচ্ছে না। কিন্তু এটা খুবই দরকার। প্রত্যেকটা অভিভাবককে আমি অনুরোধ করব, অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনাদের বাচ্চাদের খেলাধুলার দিকে নিয়ে আসেন।
উনিশ বছর পর মেয়েদের হাত ধরে ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব আসে বাংলাদেশে। ছাদখোলা বাসে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেয় দেশের সাধারণ মানুষ, যা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে ছিল অনন্য নজির। রাষ্ট্রীয় কাজে তখন দেশের বাইরে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই মেয়েদের সংবর্ধনা দিতে পারেননি।
তবে দেশে ফিরেই ঘোষণা আসে সংবর্ধনার। সে হিসেবে সাফজয়ীদের আর্থিক সম্মাননা ও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তার নিজ কার্যালয়ে সাফজয়ী ২৩ ফুটবলারের সঙ্গে সময় কাটান। তিনি একে একে সাফজয়ী মেয়েদের প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা এবং টিম ম্যানেজমেন্টের সদস্যদের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকার চেক হাতে তুলে দেন। এরপর পুরো দল মিলে প্রধানমন্ত্রীর হাতে সাফের শিরোপা তুলে দেয় এবং ফটোসেশানে অংশ নেয়। সাফজয়ী ফুটবল দলের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা স্মারক ফুটবল হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহেদ হোসেন রাসেল এমপি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জয়লাভ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন