শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আইএমএফের ঋণ শোধ করবেন কীভাবে? সরকারকে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) এর কাছ থেকে লোন নিয়ে সরকার আবারো জনগণের কাধে ঋণের বোঝা চাপাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আইএমএফ’র কাছ থেকে লোন পেয়েছেন, ডুগডুগি বাজাচ্ছেন। অথচ কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আইএমএফের লোন আমাদের দরকার নেই। এখন আবার লোন নিয়েছেন। ভালো কথা। আপনারা এসব অর্থ কি খাতে খরচ করবেন, কোথায় খরচ করবেন-এগুলো জনগণ জানতে চায়। আর এই লোন শোধ করবেন কী করে? কারণ ইতোমধ্যে আপনার তো রিজার্ভ খালি হয়েছে। পরিশোধ করা অনেক কঠিন হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন স্তরের হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার আশেপাশে গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে দুর্নীতি করা, চুরি করা, দেশকে ফোকলা করে দেওয়া। আশ-পাশে দেখেন আওয়ামী লীগের যে পাতি নেতাটা আছে তার দাপটে থাকা যায় না। তার আগে পায়ে সেন্ডেল থাকতো না, কিন্তু এখন পাঁচ তলা বাড়ি হয়ে গেছে। ঢাকা শহরে এখন যত মার্সিডিজ, পোরশে, ল্যান্ড রোভার দেখা যায়থথ আগে কখনো দেখেছেন? অথচ রাস্তায় ঢুকতে পারে না। গাড়ি যে চালাবেন তার রাস্তা নাই। মানুষ পায়ে হেটে পার হতে পারে না। এই গাজীপুরের রাস্তা করুণ অবস্থা, মানুষ ১২ বছর ধরে কষ্ট করছে।
সরকারের দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, আইএমএফ থেকে লোন নিচ্ছে কেন? চুরি-দুর্নীতি করে সব সাফ করে দিয়েছে, দেউলিয়া করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। বিদ্যুতের নামে এমন পাচার করেছে যেমন সেই বিদ্যুতে অন্যতম ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে অন্যতম মিলিনিয়াদের মধ্যে একজন হয়ে যায়। দেশে রাখছে না টাকা। কানাডায় বেগম পাড়া হয়েছে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম হয়েছে- সব জায়গায় দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। রেমিটেন্স দেশে না পাঠিয়ে হুন্ডি করে বিভিন্ন দেশে ‘অ্যাসেট’ ক্রয় করা হচ্ছে।
আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যে আন্দোলনটা করছি এটা আমরা বিএনপির জন্য করছি না। এই আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার, জনগণের বাঁচার অধিকার, তাদের সভা-সমাবেশ করার অধিকারের জন্য। আমরা এই আন্দোলন করছি একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য। একটা উদার গণতান্ত্রিক দল যারা ৫ বার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে অতীতে, তাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এটা চিন্তা করা যায়?
তিনি বলেন, এটা এ দেশে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে গণতন্ত্র নেই, তাদের কাঠামোর মধ্যে গণতন্ত্র নেই। স্বাধীনতার পরে তারা একদলীয় শাসন বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। আজকে আবার এই ১৪ বছরে ধরে ওপরে গণতন্ত্রের মোড়কে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। দেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না।
গণতন্ত্র ফেরাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও গত কয়েক মাসে ভোলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের নুরে আলম, মুন্সিগঞ্জে শহীদুল ইসলাম শাওন ও নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধানকে পুলিশের গুলি করে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এভাবে নির্যাতন করে বাংলাদেশের মানুষকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জেগে উঠেছে সকল অসত্যের বিরুদ্ধে, হত্যা ও জেগে উঠেছে নির্যাতনের বিরুদ্ধে।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দাবি খুব সামান্য। আপনি এই মুহূর্তে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করে দেন, পদত্যাগ করে একটা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেন। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে যেখানে সকল দলের অংশগ্রহণ থাকবে।
‘মায়ের কান্না প্রসঙ্গে’ বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আপনারা এখন নতুন সব ফন্দি-ফিকির বের করছেন। আমাদের গুম হওয়া পরিবারগুলোর তাদের একটা সংগঠন আছে ‘মায়ের ডাক’ করেছে। এখন ওটার একটা পাল্টা একটা তারা (ক্ষমতাসীনরা) তৈরি করেছে ‘মায়ের কান্না’। এটা নতুন।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের সময়ে কারা কারা নাকি মারা গিয়েছিল তাদের পরিবার এতো দিন পরে উদয় হয়েছে। উদয় হয়ে তারা কী দাবি করছেন যে, শহীদ জিয়া নাকি মানুষদের হত্যা করেছেন। সে জন্য তারা তার কবর সরিয়ে দিতে চায়। এটাকে হালকাভাবে নেবেন না। এটা একটা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত শুরু করেছে। এই চক্রান্ত হচ্ছে আবারো বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দেওয়া। আমরা সেটা হতে দেব না।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াছিন আলী, নাজমুল হাসানসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগরীর নেতারা বক্তব্য রাখেন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন