বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

লু’র বক্তব্য নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করেছে

পাল্টা কর্মসূচিতে উদ্ভুত পরিস্থিতির দায় আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সরকার র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে মিথ্যাচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার মিডিয়াকে ব্যবহার করে, জোর করে একটা কথা বলতে চেয়েছেন জনগণের সামনে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান পরিবর্তন করেছে। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এই নিষেধাজ্ঞা (র‌্যাবের উপর) তুলে নেবেন এবং বাংলাদেশের সরকার তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন করতে চায়-এই ধরনের একটা ধারণা তারা (সরকার) জনগণকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, দ্যাটস ইজ এনাফ টু এক্সপ্লেইন দিস; দূতাবাসের সেই স্টেটমেন্টে সেটা ক্লিয়ার হয়ে গেছে। মির্জঅ ফখরুল বলেন, কীভাবে মন্ত্রীরা বলেন- নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। একথা তিনি (লু) বলেননি।

গতকাল বুধবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গত মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের বিষয়বস্তু জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

র‌্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে বিএনপির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা করছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের কার্যক্রমের জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা আরোপে খুব আনন্দিত নই। আমরা বারবার বলেছি- এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য লজ্জাজনক, বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক যে একটা প্রতিষ্ঠানের উপরে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা আসা উচিৎ সরকারের উপরে। সরকারের নির্দেশে এই সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিল কি দিল না, দিস ইজ নট অ্যা ম্যাটার। নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে জনগণ এবং সামনে জনগণ সেই নিষেধাজ্ঞাকে বাস্তবায়িত করবে।

ডোনাল্ড লু’র সফর নিয়ে বিএনপির পর্যবেক্ষণ সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, বিদেশের শক্তির উপর নির্ভর করে কখনও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না। জনগণের শক্তির উপরেই এখানে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বরাবর। এবারও আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে, জনগণ সমস্ত বাধা-বিপত্তি-নির্যাতনকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের যে প্রতিবাদ যেটা তারা জানাচ্ছে, সেভাবে তারা সংগঠিত হচ্ছে। তবে আমরা যেটা লক্ষ্য করছি, গণতন্ত্রের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যে কমিটমেন্ট সেই কমিটমেন্ট তারা খুব অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে প্রকাশ করেছেন।

বিএনপির সঙ্গে ডোনাল্ড লু’র কোনো সাক্ষাতের কর্মসূচি ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমাদের সঙ্গে তার কোনো প্রোগ্রাম ছিল না। এবার কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা কোনো বৈঠক করেনি। পাল্টা কর্মসূচির দায় আওয়ামী লীগের: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় ত্রাস সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সময় পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করছে। তাদের নেতৃবৃন্দের উস্কানিমূলক বক্তব্য বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া, হাত জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ও নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আরো অনুপ্রাণিত করেছে এবং এই কারণেই সন্ত্রাসী কাজগুলো একেবারে লাগামহীনভাবে ঘটছে।

তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের এই অপততপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি পালন করা, বাধা প্রদান এবং একই দিনে একই সময় কোনা কর্মসূচি প্রদান না করার আহŸান জানানো হয়। অন্যথায় উদ্ভুত পরিস্থির সকল দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই বহন করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সরকারের মন্ত্রীরা মুখে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির কথা বললেও বাস্তবে সন্ত্রাসী পরিবেশ তৈরি করছে। গণবিরোধী সরকার বিরোধী আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চাইছে। ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, চট্টগ্রামে এখন যেটা হচ্ছে, আমাদের প্রতিটি নেতার বাড়ি বাড়ি হামলা হচ্ছে, পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে, গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। বাড়ি ভাংচুর করছে। বুঝা যাচ্ছে সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে জনগনের আন্দোলনকে দমন করবার জন্য নীল নকশা করেছে।

টেলিফোনে আড়িপাতা নিয়ে উদ্বেগ: মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোনে আড়িপাতার বিষয়ে আইন প্রণয়নের ঘোষণায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিএনপির মনে করে কর্তৃত্ববাদী-অনির্বাচিত সরকার তাদের অবৈধ উপায়ে দখলকৃত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নজরদারীতে রাখার জন্য মুঠো ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগের ওপর নজরদারি করতে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি ক্রয় ও আড়িপাতার আইন প্রণয়ন করতে চলেছে। এই ভয়াবহ নিবর্তনমূলক আইন ও আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর অগণতান্ত্রিক আচরণ জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। অবিলম্বে এই সব প্রযুক্তি ক্রয় করা ও আইন প্রণয়নের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপি আহŸান জানাচ্ছে।

এসময় তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় বন্দী ব্যক্তিদের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন