শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন হবে ঢাকায়, চুক্তি সই

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সউদী স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী সউদী উপমন্ত্রীর সাথে বৈঠক প্রবাসী মন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ও লাগেজ তল্লাশির কাজ ঢাকায় সম্পন্ন হবে। এ জন্য সউদী আরবের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। একই সঙ্গে দু-দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশে সফররত সউদী আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এ চুক্তি হয়। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক হয়।

অন্যদিকে সউদী আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারি রোহিঙ্গাদের মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়ন করা হবে। সিস্টেমওয়াইজ আমরা পাসপোর্টগুলো নবায়ন করছি যারা ওখানে রয়েছেন। এজন্য আমাদের একটা জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি হতে যাচ্ছে। যাতে এসব সমস্যাগুলো সুরাহা করা যায়। গতকাল রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ সফররত সউদী আরবের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ সব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আলোচনায় ঘুরেফিরে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি এসেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য তারা যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। তারা সব ধরনের সহযোগিতা এনজিও ও সরকারি মাধ্যমে আমাদের দিচ্ছেন। সেটাকে আরও কীভাবে জোরদার করা যায়, কীভাবে এরা (রোহিঙ্গা) নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে ফেরত যাবে-এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, সউদী আরব জানিয়েছে যে, ৩ লাখ রোহিঙ্গা সেদেশে বসবাস করে। তারা সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য সবই করছে। তারা আমাদের কাছে যে আবেদন করেছিল আমরা সেটা দেখছি। তারা পাসপোর্টগুলো নবায়ন করে দেয়ার জন্য বলেছে। সিস্টেমওয়াইজ আমরা পাসপোর্টগুলো নবায়ন করছি যারা ওখানে রয়েছে।
রোহিঙ্গারা কী বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে গিয়েছে, সেজন্য এখন পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়টি আসছে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের দেশ হয়ে গেছে, এটা সঠিক। তারা তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। ৩ লাখ লোক যারা গেছে, আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে তারা যায়নি। তারা নিজেদের ম্যাকানিজমে গেছে, তাদেরই (সউদী সরকার) অনুরোধে। উল্লেখ্য, সউদী আরবে ৩ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ৬০ হাজারের বাংলাদেশি পাসপোর্ট রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এ পাসপোর্ট নবায়ন করছিল না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বছরের পর বছর যারা সেখানে (সউদী আরবে) বসবাস করছেন তাদের আমরা পাসপোর্ট দেব না বা তাদের আমরা শনাক্ত করতে যাচ্ছি না। যারা বিশেষ বিবেচনায়, বিশেষভাবে গিয়েছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে, আমরা যাদের পাসপোর্ট দিয়েছি, তাদের পাসপোর্ট রিনিউ করার ব্যাপারে তো আমরা ওয়াদাবদ্ধ, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমরা দেখব।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ হচ্ছে। সেখানে তাদের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকবেন। তাদের সামনে যে সমস্যাটা আসবে, সেই সমস্যাটা তারা সমাধান করবে। তাই তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধান করার জন্যই এ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কমিটি যাকে মনে করবে এটাকে রিনিউ করে দিতে হবে, এটা বাংলাদেশি, সঙ্গে সঙ্গে রিনিউ করে দেবে। যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়টিও ঠিক করবেন, কী কী যাচাই-বাছাই করবেন। কিন্তু আমাদের পাসপোর্ট হোল্ডারদেরই প্রাধান্য দেব, এর বাইরে আমরা কিছু করব না। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছিলেন জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন হবে ঢাকায়, চুক্তি সই: বৈঠক শেষে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার পর আমরা দুটি এমওইউ সই করেছি। একটি হলো নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি, আরেকটি হলো রুট-টু-মক্কা সার্ভিস এগ্রিমেন্ট। প্রথমটিতে দু-দেশের নিরাপত্তা আরও কীভাবে উন্নতি করা যায়, সেই বিষয় আছে। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় এর মধ্যে রয়েছে। রুট-টু-মক্কার মধ্যে রয়েছে, আমাদের হজযাত্রীদের আরও কীভাবে সহযোগিতা দেয়া যায়। এখান থেকে ইমিগ্রেশন ও সবকিছু ঠিকঠাক করে করে তারা উড়োজাহাজে উঠে যাবে। এ সুবিধাগুলো আগে পরীক্ষামূলকভাবে ছিল।

মন্ত্রী বলেন, এখন চুক্তি হলো। এখন ইমিগ্রেশন, ব্যাগেজ চেকিং সবকিছু বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে হয়ে যাবে। এটাই হলো রুট-টু-মক্কা সার্ভিস এগ্রিমেন্টের বিষয়।
সউদী আরবে ২৭ লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন পেশায় তারা নিয়োজিত, আবার ব্যবসা-বাণিজ্যও করেন। সেই ব্যবসায় যাতে একটু সুবিধা পায় সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সবকিছু নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আশাকরি আমাদের সম্পর্ক আরও গাঢ় হবে, আরও উন্নত হবে এ সফরের পর।

নতুন করে শ্রমিক নেওয়া ও সউদী আরব থেকে এলএনজি আনার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, এলএনজির কোনো বিষয় আলোচনায় আসেনি। শ্রমিকদের ই-পাসপোর্ট তাড়াতাড়ি দেয়ার বিষয়ে তারা অনুরোধ করেছেন। আমরা বলেছি আমরা তাড়াতাড়িই করবো, কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি এ অসুবিধাগুলো আছে।

সউদী উপমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে প্রবাসী মন্ত্রী: প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বাংলাদেশের কর্মীরা অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং দায়িত্বশীল। তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে দক্ষতা ও সফলতার সাথে অবদান রাখছেন। এছাড়াও বাংলাদেশী কর্মীদের দক্ষতার মানোন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে সউদী আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ বিষয়ে সফররত সউদী স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ড.নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল-দাউদের সাথে বৈঠককালে প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমদ এসব কথা বলেন। এ সময় প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন ও বাংলাদেশস্থ সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আলদুহাইলান উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে তারা সউদী আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্নয়ন, শ্রম আইন, কর্মীদের সামগ্রিক সুরক্ষা, দায়িত্ব কর্তব্য ও অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়াও বৈঠকে সউদী আরবে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা জটিলতা, সউদী আরবে গিয়ে কর্মীদের কাজ না পাওয়ার বিষয় এবং সউদী আরবে অবস্থানরত মহিলা গৃহকর্মীদের সুরক্ষা ছাড়াও বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ হতে প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন