ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় পতাকা বৈঠক শেষে বাংলাদেশি কৃষক মেজবাহার উদ্দিনের লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ। গত বৃহস্পতিবার সকালে ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম আরিফুল এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ওই দেশের আইনি প্রক্রিয়া শেষে তারা লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মেজবাহার উত্তর বাঁশপদুয়া গ্রামের ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় ধান কাটতে যান। এ সময় বিএসএফের সদস্যরা তাকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। বিএসএফের ডাক শুনে তিনি দ্রুত নিজ এলাকার দিকে চলে আসার চেষ্টা করেন। পরে বিএসএফের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশের সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে তাকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। বিষয়টি এলাকার লোকজন বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ি ও পরশুরাম থানার পুলিশকে মৌখিকভাবে জানান।
পরশুরাম পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুমন জানান, গত রোববার বিকেলে মেজবাহাকে ভারতীয় বিএসএফ ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারতীয় বিএসএফ তাকে ফেরত না দিয়ে অস্বীকার করেন। গত বুধবার সকালে তার লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা লাশ সনাক্ত করেন। ভারতের বিএসএফের অসহযোগিতার কারণে রাত ১২টা পর্যন্ত লাশ উদ্ধার করা যায়নি।
গত বুধবার সকাল ১১টার দিকে বাঁশপদুয়া সীমান্ত এলাকার ভারতের কাঁটাতারের ১০০ গজ ভিতরে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। পরে পিলারের পাশে পড়ে থাকা লাশটি গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএসএফ ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন বলে জানা যায়। তবে পরিবারের দাবি অন্যায়ভাবে বিএসএফ রোববার বিকেলে মেজবাহারকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তারা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
মেজবাহারের বড় মেয়ে ইনকিলাবকে বলেন, আমার বাবা নিরিহ মানুষ। তিনি মানুষের ক্ষেতখামারে কাজ করে সংসার চালান। আমরা ৪ বোন, আমাদের ভাই নেই। আমাদের একমাত্র পরিবারের উপার্জক্ষম মানুষ চলে গেছে, আমার মা এবং আমার বোনদের কি হবে বলে হাউ মাউ কাঁদতে থাকেন সে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের একটাই আবেদন আমরা বাবার লাশ চাই, তার হত্যার বিচার চাই।
এদিকে বাঁশপদুয়া এলাকার বাসিন্দা পরশুরাম ফাযিল মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মো. আবু সাঈদ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারণ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সবসময় বাংলাদেশের অংশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে সীমান্তবর্তী বসবাসরত মানুষকে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। তিনি আরো বলেন, বিজিবি সার্বক্ষণিক সীমান্তে পাহারায় নিয়োজিত থাকেনা। তখন বিএসএফ সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে থাকেন। সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর উত্তর গুথুমা এলাকার দিনমজুর মেজবাহরকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গিয়ে বিনাকারণে হত্যা করল ভারতীয় বিএসএফ। এটা খুবই অমানবিক। এক সপ্তাহ হয়ে গেছে বিএসএফ এখনো মেজবাহরের লাশ ফেরত দেয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের বিজিবির সাথে কয়েকবার বৈঠক হয়েছে শুনেছি তবে এর কোন সমাধান হয়নি। আমি এ হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার দাবি করছি।
পরশুরাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পার্থ প্রতিম দেব বলেন, ভারতীয় বিএসএফ বিজিবির কাছে লাশ বুঝিয়ে দিলে তখন পরবর্তী পর্যায়ে আমাদেরকে দায়িত্ব দিলে আইনী প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন