‘পলাশীতে মীরজাফর এবং বাংলাদেশে খুনি মোশতাক তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি’ মন্তব্যের মাধ্যমে বিএনপিকে সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, পলাশীতে মীরজাফর, বাংলাদেশে খুনি মোশতাক তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। এটাই হচ্ছে ইতিহাস। বিএনপির মনে বড় জ্বালা। মির্জা ফখরুলের বুকে বড় জ্বালা। কালো চশমা পরে কিছুই দেখতে পারে না। পদ্মা সেতু হয়েই গেলো নিজের টাকায়। শেখ হাসিনা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করেই ফেললেন। চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। ঢাকায় তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট মেট্রোরেল। এলেঙ্গা সিক্স লেন। ১০০ সেতু একদিনে উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছেন। তারা দিনের আলোতে অমাবস্যার অন্ধকার দেখেন। দিনের আলোতে পূর্ণিমা রাতের চাঁদ ঝলমল। সেটা দেখে না। দেখতে পায় অমাবস্যা। গতকাল শনিবার গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপিকে নালিশ পার্টি হিসেবে অবিহিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বিদেশের কাছে নালিশ করে। তারা এখন বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। বিদেশিদের জিজ্ঞেস করুন, কোন দেশে তত্ত্বাবধায়ক আছে? দুনিয়ার অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও ঠিক সেভাবেই ইলেকশন হবে। শেখ হাসিনার সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। আমি নেত্রীর পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দিয়ে যেতে চাই। খেলা হবে, ডিসেম্বরে খেলা হবে। আন্দোলনে মোকাবিলা হবে। নির্বাচনে খেলা হবে। খেলা হবে ডিসেম্বরে বিজয়ের মাসে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সাত বছরের সাজা হয়েছে অর্থপাচারকারী তারেক রহমানের। ভিডিও কনফারেন্সে হাসিনা, হাসিনা বলে। শেখ হাসিনাও বলতে পারে না। ফখরুল ভাইয়ের নেতৃত্বে এ দেশেও কিছু এমন রয়েছে। গাজীপুরের সম্মেলন এটা। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে। আপনার সম্মেলন কবে হয়েছে? মনে কী আছে? মনে নেই। ফখরুলও জানে না কবে বিএনপির সম্মেলন। মনে নেই কবে সম্মেলন। এক মাসে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক করে জেলায় উপজেলায় ওয়ার্ডে সম্মেলন হচ্ছে। বিএনপিতে এসব আছে?
তিনি বলেন, ডিসেম্বরে লাঠির সঙ্গে বাঁশ বেঁধে আনবেন? খেলা হবে, খেলা হবে। আগুন সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাঁচপুরে নতুন ব্রিজ করেছেন। সেই ব্রিজে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী ফলক পুড়িয়ে ফেলেছেন। খেলা হবে। রেডি হয়ে যান। তিনি আরো বলেন, বিএনপি খালি বলে জনতার ঢল। গাজীপুরে আসেন ফখরুল ভাই। গাজীপুর সদরে কোথাও গাড়ি দিয়ে যাওয়া যায় না। সমাবেশে যে লোক তার চারগুণ বাইরে। সিলেটে ঢল নেই, সুরমা নদীর ঢল। আর এখানে (গাজীপুর) বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারা (বিএনপি) বলে তাড়াতাড়ি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) নিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোটা দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়েছেন। আর তাকে বলে সেফ এক্সিট নিতে? ফখরুল সাহেব প্রধানমন্ত্রী দয়া করে আপনাদের নেত্রীকে বাসায় রেখেছেন। খালেদা জিয়া দণ্ডিত আসামি। লজ্জা করে না? গণঅভ্যুত্থান করবেন? একটা মিছিল করতে পারেন না। দেশনেত্রী বলতে বলতে মুখ দিয়ে আপনাদের ফেনা বের হয়। সেই নেত্রীর জন্য একটা মিছিল করতে পেরেছেন?
বিএনপি আন্দোলনের মুরোদ নেই মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেখতে দেখতে ১৩ বছর, আমরা বলেছিলাম আন্দোলন হবে কোন বছর? দেখতে দেখতে ১৩ বছর, মানুষ বাঁচে কয় বছর? খেলা হবে। খেলা হবে প্রস্তুত হয়ে যান। ভোট চুরির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে প্রস্তুত হয়ে যান গাজীপুর। সবাই ব্যানার-ফেস্টুন নামান, টেলিভিশনের পর্দায় ফখরুল সাহেবরা দেখুক। সিলেটের সঙ্গে গাজীপুরকে মিলিয়ে দেখুক। এখানে জেলা নেই। শুধু গাজীপুর মেট্রোপলিটন আওয়ামী লীগ। সিলেটে পাঁচ জেলা। কেউ কেউ তিন দিন আগে থেকে ঢল নামিয়েছে। কাঁথা, বালিশ, বিছানাপত্র, হান্ডি-পাতিল সব নিয়া নেতাকর্মীরা সরা দেশ থেকে সিলেটে গেছে। যেখানে সমাবেশ সাত দিন আগে থেকে রওনা হয়। খানাপিনা ভালোই চলছে। পাতিলে পাতিলে খাওয়া। গরুর গোশত, খাসির গোশত, মুরগির গোশত, মাছের টুকরা এ আর কী বলব? এরপর পেপসি বা কোকা কোলা। ভালোই আছে বিএনপি। ক্ষমতায় না থাকলে কী হবে? এখনও তারা (বিএনপি) ক্ষমতার রঙিন খোয়াব দেখছে। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, খোয়াব যত পারেন দেখেন, কোনও আপত্তি নেই। দিবাস্বপ্ন কতজনই দেখে, কিছু আসে যায় না। ক্ষমতার পরিবর্তন হলে নির্বাচনেই হতে হবে। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনও বিকল্প নেই।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক (এমপি), যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল (এমপি), আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম (এমপি), আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ (এমপি), মেহের আফরোজ চুমকি (এমপি) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবির কাউসার, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী, ইকবাল হোসেন সবুজ (এমপি), কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, শামসুন নাহার ভুঁইয়া (এমপি) রুমানা আলী টুপি (এমপি) আতাউল্লাহ মন্ডল প্রমুখ। সম্মেলনে অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে সভাপতি ও আতাউল্লাহ মন্ডলকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন