বিশেষ প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপের ক্ষমতার সুযোগ রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২২ খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইন সংশোধনের কারণে এখন থেকে বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার চাইলে প্রয়োজনে ট্যারিফ বা মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে ৯০ দিন অপেক্ষা করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে বর্তমান আইনের ৩৪ ধারার সঙ্গে কিছু ধারা যোগ করা হয়েছে। সেখানে মূল বিষয় হলো সরকার প্রয়োজন বোধে বিশেষ কারণে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। জ্বালানির দাম সমন্বয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিইআরসি রয়েছে। বতর্মান আইন অনুযায়ী কোনো জ্বালানি বা বিদ্যুৎের দাম বাড়াতে হলে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গণশুনানি করে দাম নির্ধারনের ঘোষণা দেবে। যা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এই নিয়ম মেনে চলা কঠিন।
এছাড়া বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রোডিটেশন আইন ২০২২ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইনের আওতায় একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে। যার সদস্য সংখ্যা হবে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট। সেখানে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। এই কাউন্সিল ইনস্টিউশন ও মেডিকেল শিক্ষার প্রসারে কাজ করবে।
মন্ত্রিসভা বাংলাদেশ বিমান আইন ২০২২ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে। আরও অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ও কসোভো সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাবে অনুমোদন। বাংলাদেশ ব্রুনাই দারুসসালাম এর মধ্যে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক মন্ত্রিসভার ভূতাপেক্ষ অনুমোদন এবং বাংলাদেশ ও লুক্সেমবার্গের মধ্যে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল সংক্রান্ত চুক্তির খসড়ায়ও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় মন্ত্রিসভার সদস্যরা এ বিষয়ে আলোচনা করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জ্বালানি বিভাগকে নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রিসভা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট জ্বালানি সংকট নিরসনে বেসরকারিভাবে জ্বালানি আমদানির দ্বার খুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ফুয়েলসহ অন্যান্য এনার্জি বেসরকারিভাবে আমদানির ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দুটি অপশন- বেসরকারি আমদানিকারকেরা আমদানি করে নিজেরাই বাজারে বিক্রি করলে কি বেশি বেটার হবে?
তিনি বলেন, এখন যে আইন আছে তারা (বেসরকারি আমদানিকারকেরা) ক্রুড অয়েল আনবে, এনে তারা যদি রিফাইন করে। এখন তো আমাদের বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ছাড়া কেউ জ্বালানি বাজারজাত করতে পারে না। সাধারণত ক্রুড অয়েল রিফাইন করে ৪১ থেকে ৪২ শতাংশ রিফাইনড অয়েল হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রিফাইনড অয়েলটা তারা বিপিসির কাছে দিয়ে দিলো অথবা তারা সরাসরিভাবে বাজারজাত করতে পারে কি না সেটাও দেখতে হবে। তবে যেটা করতে হবে তা হলো, ক্রুড অয়েল যারা আনবে, বিটুমিনসহ অন্যান্য যে উপজাত পণ্য আসবে এগুলো হয় তারা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করবে অথবা বাইরে রপ্তানি করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তবে রিফাইনড অয়েল বিষয়ে দুটি অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হয় তারা বিপিসির কাছে বিক্রি করে দিতে পারে বা বিপিসি তাদের অন্য কোনো ম্যাকানিজ বা আইন সংশোধন করে বিক্রির অনুমতি দিতে পারে। এক্ষেত্রে যেটা রিফাইনড হলো সেটা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য কি না, তা বিএসটিআইকে মনিটরিং করতে হবে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনায় রাখতে বলা হয়েছে এবং খুব শিগগির সিদ্ধান্তে যেতে বলা হয়েছে।
##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন