বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত তেল আমদানিকারক চীনের ক্রেতাদের চাহিদা ও উদ্বেগের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে কমে গেছে জ্বালানি তেলের দাম। গতকাল সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ তথা ২ দশমিক ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ২০ মার্কিন ডলারে। আগের ধাপে যেখানে ৩ শতাংশ বাড়ার আগে ছিল ৮০ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং গত ৪ জানুয়ারির পর থেকে সবচেয়ে কম।
এদিকে বাংলাদেশ সরকার বেসরকারিভাবে জ্বালানি আমদানিতে সায় দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ফুয়েলসহ অন্যান্য এনার্জি বেসরকারিভাবে আমদানির ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দুটি অপশন- বেসরকারি আমদানিকারকেরা আমদানি করে নিজেরাই বাজারে বিক্রি করলে কি বেশি বেটার হবে? ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় মন্ত্রিসভার সদস্যরা এ বিষয়ে আলোচনা করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জ্বালানি বিভাগকে নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
জানা গেছে বিশ্ববাজারে ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৪ দশমিক ১২ শতাংশ। এর আগের সেশনে ব্যারেলপ্রতি দাম ছিল ৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে এটি সর্বনিম্ন দাম। উভয় বেঞ্চমার্কের গত সপ্তাহে দাম ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। পরপর তিন সপ্তাহ দরপতন হয়েছে। সবশেষ সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআই-এর দাম কমেছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
নিসান সিকিউরিটিজের গবেষণা মহাব্যবস্থাপক হিরোইউকি কিকুকাওয়া বলেছেন, চীনে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, একই সঙ্গে সাংহাইতে বিধিনিষেধ বিরোধী বিক্ষোভ তেলের বাজারে প্রভাব ফেলেছে। তেলের চাহিদা নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ডব্লিউটিআই এর তেলের দাম ৭০ থেকে ৭৫ ডলারে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ওপেক প্লাস এর আসন্ন বৈঠকের ফলাফল ও রাশিয়ার তেলের ওপর জি-৭ এর মূল্য নির্ধারণের ওপর নির্ভর করে বাজার অস্থির থাকতে পারে। ইমোরি ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ইনকর্পোরেটেড-এর সিইও তেতসু ইমোরি বলেন, চীনে চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় এবং তেল উৎপাদনকারীদের উৎপাদন নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা (ওপেক) যদি না উৎপাদন কোটা আরো কমানোর বিষয়ে একমত হয় বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ পুনরায় লোড করতে না যায়, তবে তেলের দাম আরো নিচের দিকে যেতে পারে।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংস্থা (ওপেক) এবং রাশিয়াসহ তার সহযোগীরা, ওপেক প্লাস নামে পরিচিত। আগামী ৪ ডিসেম্বর বৈঠক হবে ওপেক প্লাসের। গত অক্টোবর মাসে ওপেক প্লাস ২০২৩ সাল পর্যন্ত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রতিদিন ২ মিলিয়ন ব্যারেল কমাতে সম্মত হয়।
ইরাকের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা গত শনিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় তেল বিপণনকারী সোমো-এর এক শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, পরবর্তী ওপেক প্লাস বৈঠকে তেলের বাজারের অবস্থা ও ভারসাম্য বিবেচনা করা হবে।
এদিকে, বিনিয়োগকারীরা রাশিয়ান তেলের মূল্য নির্ধারণের জন্য পশ্চিমা পরিকল্পনার দিকেও মনোনিবেশ করছে।
জি-৭ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫ থেকে ৭০ ডলারে রাখা নিয়েও কথা বলছে। রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর নতুন মূল্য ৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
এদিকে মন্ত্রি পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট জ্বালানি সংকট নিরসনে বেসরকারিভাবে জ্বালানি আমদানির দ্বার খুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। সোমবার ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় মন্ত্রিসভার সদস্যরা এ বিষয়ে আলোচনা করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জ্বালানি বিভাগকে নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ফুয়েলসহ অন্যান্য এনার্জি বেসরকারিভাবে আমদানির ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দুটি অপশন- বেসরকারি আমদানিকারকেরা আমদানি করে নিজেরাই বাজারে বিক্রি করলে কি বেশি বেটার হবে? তিনি বলেন, এখন যে আইন আছে তারা (বেসরকারি আমদানিকারকেরা) ক্রুড অয়েল আনবে, এনে তারা যদি রিফাইন করে। এখন তো আমাদের বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ছাড়া কেউ জ্বালানি বাজারজাত করতে পারে না। সাধারণত ক্রুড অয়েল রিফাইন করে ৪১ থেকে ৪২ শতাংশ রিফাইনড অয়েল হয়। রিফাইনড অয়েল তারা বিপিসির কাছে দিয়ে দিলো অথবা তারা সরাসরিভাবে বাজারজাত করতে পারে কি না সেটাও দেখতে হবে। তবে যেটা করতে হবে তা হলো, ক্রুড অয়েল যারা আনবে, বিটুমিনসহ অন্যান্য যে উপজাত পণ্য আসবে এগুলো হয় তারা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করবে অথবা বাইরে রপ্তানি করবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, তবে রিফাইনড অয়েল বিষয়ে দুটি অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হয় তারা বিপিসির কাছে বিক্রি করে দিতে পারে বা বিপিসি তাদের অন্য কোনো ম্যাকানিজ বা আইন সংশোধন করে বিক্রির অনুমতি দিতে পারে। এক্ষেত্রে যেটা রিফাইনড হলো সেটা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য কি না, তা বিএসটিআইকে মনিটরিং করতে হবে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আলোচনায় রাখতে বলা হয়েছে এবং খুব শিগগির সিদ্ধান্তে যেতে বলা হয়েছে। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন