জিএম কাদেরকে মামলার ফাঁদে ফেলে বড় ভাই এরশাদের মতো নিশ্চলের চেষ্টা : ক্ষমতাসীনদের ‘নাচের পুতুল’ হয়ে থাকতে রওশনকে ঘিরে সুবিধাভোগীরা তৎপর
দেশের গণমাধ্যমগুলোর খবরে এখন দেশের প্রকৃত চিত্র উঠে না আসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ফেসবুক, বøগ, টুইটার, ইউটিউব এগুলো এখন খুবই শক্তিশালী মাধ্যম এবং মানুষ এগুলো নিয়েই মেতে রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার পাশাপাশি যে দু’টি বিষয় নিয়ে তোলপাড় চলছে তার একটি ‘১০ ডিসেম্বর বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে উত্তাপ’ এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মামলা। ওই মামলা দায়ের এবং তার উপর দলের দায়িত্ব পালনে আদালতের নিষেধাজ্ঞ, পরবর্তীতে হাইকোটের সেই নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের করে নির্দেশনা এবং হাইকোর্টের জারি করা ‘স্থগিতাদেশ’ এর ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে জিএম কাদেরের দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের নিষেধাজ্ঞার মামলার এই ইস্যু নিয়ে ব্যপক তর্ক-বিতর্ক চলছে। বিতর্কে অংশ নেতা নেটিজেনদের বেশির ভাগই মন্তব্য করছেন, বছরের পর বছর ধরে যেমন মামলার ভয় দেখিয়ে ক্ষমতাসীনরা ‘এরশাদকে নিশ্চল’ রাখার চেষ্টা করেছেন; এখন তার ভাই জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে একই ‘মামলা কার্ড’ খেলা শুরু হয়েছে। জিএম কাদেরের বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় পার্টিকে গণমুখি রাজনৈতিক দলে রুপান্তরের চেষ্টায় তার জন্য কাল হয়ে গেল। কেউ লিখেছেন, রওশন এরশাদের ব্যাক্তি স্বার্থ জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে ফেলছে। ফের পরিচিতি ক্রাইসিসে পড়তে যাচ্ছে দলটি। তবে জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল একজন নেতা জানান, জিএম কাদেরের বর্তমান সরকারের দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পের নামে লুটপাট, কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে করা নানান বক্তব্য রওশন এরশাদকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। কারণ বেগম রওশন এরশাদ দীর্ঘ এক বছর ধরে বিদেশে যে চিকিৎসা নিচ্ছেন সে খবর বহন করছে রাষ্ট্র। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তিনি সেই সুবিধা তথা চিকিৎসার টাকা পাচ্ছেন। সে কারণে রওশনকে বিরোধী দলের নেতা পদ থেকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে ওই পদে বসানোর আবেদন কার্যকর করা হয়নি। রওশন এরশাদ কার্যত বয়োবৃদ্ধ এবং কাজ করার স্বক্ষমতায় নেই। সে কারণে দলের কিছু সুবিধাভোগী নেতা জিএম কাদেরকে হটিয়ে রংপুর-৩ আসনের এমপি এরশাদপুত্র রাহগির সাদ এরশাদকে দলের চেয়ারম্যান পদে পুতিল হিসেবে বসিয়ে জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী দল হিসেবে রেখে নিজেরা সুযোগ সুবিদা নিতে চাচ্ছে। আর এর পিছনে রয়েছেন কাজী ফিরোজ রশিদ, গোলাম মসিহসহ কয়েকজন নেতা। আর জিয়াউল হক মৃধার দল থেকে বহিস্কার এবং জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে আদালতে তার মামলা দায়েরের পিছনে রাজনীতির পাশাপাশি ‘নারী ইস্যু’ ব্যপারস্যাপার রয়েছে। দলের নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে, দলে এখন দেবর (জিএম কাদের) ও ভাবি (রওশন এরশাদ) বিরোধ প্রচার করা হলেও পর্দার আড়ালে মামলার পিছনে রয়েছে নারীঘটিত শ্বশুর জামাতার লড়াই। পার্টির বেশির ভাগ নেতা মনে করেন শশুরকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে; এখন জামাতাকে বহিস্কার করা উচিত।
জাতীয় পার্টি কার্যত আইডেনিিটট ক্রাইসিসে রয়েছে। দলটির সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন সময় এটা স্বীকারও করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা সবচেয়ে যে প্রশ্নটি বেশি ছোঁড়ে দিচ্ছেন তা হলে জাতীয় পার্টি কোন পথে যাচ্ছে? রওশন এরশাদের চিকিৎসার খবর জোগাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নাচের পুতুল হয়ে থাকবে? নাকি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে গণমুখি দলে রুপান্তর ঘটবে? জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘নাচের পুতুল’ হিসেবে ব্যবহার করতে বিগত দিনগুলোতে এইচ এম এরশাদকে ‘মামলা জুজুর ভয়’ দেখানোর মতোই জিএম কাদেরকেও ‘নিশ্চল’ করে রাখবে? নাকি মামলার বাঁধারপাহাড় ডিঙ্গিয়ে জিএম কাদের জাতীয় পার্টিকে মিজানুর রহমান চৌধুরীর মতো গণমানুষের দলে রুপান্তর ঘটাতে সাহসী নেতৃত্ব দেবেন?
১৯৮৬ সালের পহেলা জানুয়ারি ১৮ দফা কর্মসূচির ভিক্তিতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ক্ষমতার গর্ভে জন্ম নেয়া জাতীয় পার্টির নতুনভাবে যাত্রা শুরু করে মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের পহেলা জানুয়ারি। গুশলান পার্কে দলটি নতুন যাত্রা শুরু করে কয়েক বছরে গণমানুষের হৃদয়ে যায়গা করে নেয়। এরশাদ ও রওশন এরশাদ তখন কারাগারে ছিলেন। সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে মিজানুর রহমান চৌধুরী ‘জাতীয় পার্টির কান্ডারি’ খেতাপ পান। কয়েক বছর রাজপথে আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগ, বাম দল ও জামায়াতের সঙ্গে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠের আন্দোলন জাতীয় পার্টির ‘স্বৈরাচারের দল’ দুর্নাম মোচন ঘটে। এরপর ’৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জাতীয় পার্টির সমর্থন এবং এরশাদের কারামুক্তির পর দলটির নতুন অধ্যায় শুরু হয়। নৈতিকতা, আদর্শ ও সুবিধাবাদিতার নিয়ে ভাঙ্গাগড়ার মুখে পড়ে। তখন থেকেই মূলত এরশাদের বিরুদ্ধে ‘মামলা’ রাজনৈতিক কার্ড ব্যবহার বেড়ে যায়।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, এইচ এম এরশাদ দু’টি মামলায় দুই দফায় কারাগারে গেলেও ৪২ মামলায় খালাস পেয়েছেন। কোনোটা এমনিতেই কোনোটা সমঝোতা করে খালাস পান। পরবর্তীতে একমাত্র মঞ্জুর হত্যা মামলাকে এরশাদের বিরুদ্ধে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি নির্বাচনের আগে এবং বিশেষ বিশেষ মুহুর্তে (যখন এরশাদ সরকার বিরোধী বক্তব্য দেন বা পাতানো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেন) তখন মঞ্জুর হত্যা মামলার ফাইল নড়াচড়া শুরু হয়। আদালতে প্রকাশ্যে হাজিরা দিতে যেতে হয় এরশাদকে। অন্যদিকে পর্দার আড়ালে দর-কষাকষি করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ্যে জাতীয় পার্টিকে থাকতে বাধ্য করা হয়। এভাবেই ২০১৪ সাল পর্যন্ত এরশাদ মঞ্জুর হত্যা মামলায় জেলে যাওয়ার ভয়ে সরকারের পক্ষ্যে নিশ্চিল থাকতে বাধ্য হন।
প্রশ্ন হচ্ছে কে এই মঞ্জুর? ১৯৮১ সালের ৩০ মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক হন হত্যাকান্ডের মূল হোতা মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পুলিশ হেফাজত থেকে ১ জুন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেওয়ার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মঞ্জুর হত্যার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন আবুল মঞ্জুরের বড় ভাই। তবে সরকার বদল এবং দফায় দফায় রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনে মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে আসতে লেগে যায় আরো ১৮ বছর। মামলা শুরুর পর থেকে রাজনৈতিক কারণে ২২ জন বিচারক বদলি করা হয়। এইচ এম এরশাদ যখনই সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষের স্বার্থ নিয়ে কথা বলেছেন তখনই ওই মামলার শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়। এরশাদ মামলার ভয়ে নিশ্চল হয়ে গেলে মামলা ফাইলবন্দি করে রাখা হয়। এ অভিযোগও রয়েছে ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহমদ তত্তাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যখন পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করেন তখন রওশন এরশাদ বিএনপির পক্ষ্যে ছিলেন। তিনি স্বামী এরশাদকে দল থেকে বহিস্কার করে নিজেই জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন এবং এরশাদকে কাবু করতে ‘মামলা’ ব্যবহার করে জেলের ভয় দেখাতে সরকারকে পরামর্শ দেন। কিন্তু পরবর্তীতে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে মোড় নেয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মঞ্জুর হত্যা মামলা ‘এরশাদকে রাজনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রণের’ কাজে বারবার ব্যবহার করা হয়। এমনকি ২০১৪ সালের নির্বাচনে এরশাদকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে একমাস আটক রেখে চিকিৎসা দেয়া এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার আগে এরশাদকে সিংগাপুরে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করার নেপথ্যে ছিলেন রওশন এরশাদ। আওয়ামী লীগের নির্দেশে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে এটা করেছেন বলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।
জানা যায়, মিজানুর রহমান চৌধুরী যেমন জাতীয় পার্টিকে গণমুখি করেছিলেন; তেমনি জিএম কাদের এখন জাতীয় পার্টিকে সরকারের ‘নাচের পুতুল’ থেকে রুপান্তর ঘটিয়ে জনগণের দলে পরিণত করতে চান। যে জন্যই তিনি কয়েক মাস থেকে সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট-অপশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনগণের সুবিধা-অসুবিধা ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিয়য় নিয়ে জোড়ালো বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে সরকার ক্ষুব্ধ হবে এবং রওশনের ‘চিকিৎসা খরচ’ (বিরোধী দলের নেতা হিসেবে প্রাপ্য) বাধাগ্রস্থ হতে পারে সে আশঙ্কা থেকে জিএম কাদেরকে ‘থামানোর’ উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে সরকারের সুবিধাভোগী গোলাম মসিহ, দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন পদ বঞ্ছিত ও পরিত্যাক্ত নেতা রওশনকে ব্যবহার করে জাতীয় পার্টির সম্মেলনের ডাক দেন। এরপর শুরু হয় নাটকের পর নাটক। সরকারের সুবিধাভোগী মশিউর রহমান রাঙ্গা একের পর এক নাটকের জন্ম দেন। নেপথ্যে কাজী ফিরোজ রশিদসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা রয়েছেন। রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া নামের কেন্দ্রীয় এক নেতার সঙ্গে শ্বশুর বহিস্কৃত নেতা সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার বিরোধ রয়েছে বলেও দলের নেতারা জানান।
জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধা আদালতে জিএম কাদেরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত ১নং প্রতিপক্ষ (জিএম কাদের) ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের গঠনতন্ত্রের আলোকে যেন পার্টির কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত এবং কোনো কার্য গ্রহণ করতে না পারে সে মর্মে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। পরে এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে করা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএমকাদেরের আবেদন ১৬ নভেম্বর খারিজ করে দেন একই আদালত। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানান, এ খারিজাদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে মিস আপিল করেন জিএম কাদের। জেলা জজ এ আবেদন শুনানির জন্য ৯ জানুয়ারি দিন রাখেন। কিন্তু ২৪ নভেম্বর দরখাস্ত দিয়ে দ্রæত শুনানির অনুরোধ করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের ২৪ তারিখের দরখাস্ত জেলা জজ রিজেক্ট করে দিলেন। এর বিরুদ্ধে আমরা রিভিশন করেছি। আমরা হাইকোর্টে বলেছি ২৪ তারিখের আদেশটা অবৈধ। কোর্ট রুল দিলো আর ৩০ অক্টোববের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেছেন।
এদিকে গত ৩০ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞায় হাইকোর্টের জারি করা স্থগিতাদেশ আগামী সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করেন। চেম্বার আদালতের এই আদেশের ফলে জি এম কাদেরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন জিয়াউল হক মৃধার আইনজীবী ব্যারিস্টার সাঈদ আহমেদ রাজা। তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে আবেদন জানায়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ সোমবার পর্যন্ত স্থগিত করে আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়েছেন।
দেখা যাচ্ছে বিএনপি শাসনামল (১৯৯১-১৯৯৫) প্রায় পাঁচ বছর কারাগারে ছিলেন এরশাদ। ১৯৯৬ সালে বিএনপি তাদের (জাতীয় পার্টি) সরকার গঠনের প্রস্তাব দিলে এরশাদ কারাগার থঅকার যন্ত্রণা ভুলতে পারেননি। সরকার গঠনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এরশাদ সব মামলায় জামিন পান। সুযোগ পান জাতীয় সংসদে বসার। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপিও এরশাদকে কাছে টেনেছে। শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেনি। ২০০৫ সালে জাতীয় পার্টি নিয়ে এরশাদ খালেদা জিয়ার জোটে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৭ সালের এক-এগারোর কিছু আগে এই জোটের সমীকরণ পাল্টে যায়। তখন রওশন বিএনপির জোটে থাকলেও এরশাদ বেরিয়ে আসেন। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ চাপে রেখে ও সুবিধা দিয়ে এরশাদকে হাতের মুঠোয় বন্দী করে রেখেছে। বড় ভাই এরশাদের ভাগ্য ছোট ভাই জিএম কাদেরকে বরণ করতে হয় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা মনে করেন জিএম কাদেরকে এইচ এম এরশাদের মতো মামলার ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। এর নেপথ্যে রয়েছেন রওশন এরশাদ। তবে তারা আওয়ামী লীগের বি-টীম হিসেবে থাকতে চান না। তারা গণমানুষের পক্ষ্যে থাকতে চান। বাকীটা নির্ভর করছে জিএম কাদের উপর।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন