শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ শেষ হলেও কাটেনি রেশ

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হলেও কাটেনি রেশ। সমাবেশ নিয়ে চলছে নানারকম আলোচনা সমালোচনা। বিএনপির এবারের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ এ অঞ্চলের রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যরকম মাত্রা যোগ করেছে। সমাবেশ ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরে রাজশাহী বিভাগের আট জেলা ছিল বেশ উত্তপ্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল নজরে পড়ার মত। যা অন্য কোন বিভাগীয় সমাবেশে দেখা যায়নি। তারা ছিল অনেকটা নমনীয়। রাজশাহীর জেলায় কেনো কঠোর হলো তা নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা। বিএনপি নেতারা বলছেন পুলিশ শুরু থেকে গায়েবি মামলা গ্রেফতার ককটেল বোমা উদ্ধার ইত্যাদি। অভিযোগ এনে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে বাড়ি বাড়ি হানা দিয়েছে। বিভাগজুড়ে চলেছে নানারকম নাটকীয়তা। তারপর সমাবেশের দু’দিন আগে থেকে পরিবহন ধর্মঘট। সমাবেশের দিন থ্রি হুইলার ধর্মঘট। সব বাধা বিপত্তির বেড়া ডিঙ্গিয়ে আট জেলা থেকে এসেছে নেতাকর্মীরা। সমাবেশের তিনদিন আগে চলে আসতে শুরু করে। বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকরা। জড়ো হয়েছেন জনসভার মাঠ ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানের পাশের ঈদগাহ মাঠে। অন্যান্য স্থানে আগেভাগে জনসভার মাঠে মানুষ উপস্থিত হলে এবার রাজশাহীর ক্ষেত্রে ছিল অন্যরকম। সমাবেশের দিন সকালে খুলে দেয় মাঠের গেট। চাল, ডাল মুড়ি চিড়া গুড় নিয়ে কর্মীরা সমবেত হতে থাকে ঈদগাহ ময়দানে। পলিথিনের তাবু বানিয়ে নিচে খড় বিছিয়ে অবস্থান নেয়। জেলা জেলার ব্যানার দেখে বোঝা যায় কারা কারা কোন জেলার। নিজ নিজ জেলার কত কর্মী নিয়ে এসেছে প্রতিযোগিতা দেখা যায়। সমাবেশের তিনদিন ঈদগাহ ময়দান এলাকা ইজতেমার মত রূপ নেয়। নিজেদের আয়োজনের পাশপাশি স্থানীয়ভাবে খাবার ব্যবস্থা করা হয়। বিদ্যুতহীন অবস্থায় পদ্মার তীরের ঠান্ডা হাওয়া আর মশার কামড়ের যন্ত্রণায় অসনীয় কষ্ট করে সমাবেশ শেষ করে ঘরে ফিরেছে। এ কটাদিন সমাবেশ এলাকা ছিল হাজারো মানুষের পদচারণা আর শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত। দিন যত গড়িয়েছে যেভাবে যে পেরেছে এসে সমবেত হয়েছে। মোটরসাইকেলের বহর, ভ্যানগাড়ি, ভেঙ্গে ভেঙ্গে দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে মানুষ এসেছে। পরিবহন ধর্মঘট সাধারণ মানুুষকেও ভুগিয়েছে। আবার সমবেশ শেষ হবার সাথে ধর্মঘট প্রত্যাহার নিয়ে মানুষের মধ্যে সমালোচনা কম নয়।

রাজশাহীতে সমাবেশ ঘিরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ প্রতিবাদ মিছিল নগরীবাসীকে শঙ্কায় ফেলে। এক পক্ষ সমাবেশ সফল করার পক্ষে অন্য পক্ষ নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে। দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিল সমাবেশে উত্তাপ ছড়িয়েছে। সমাবেশের দিনও মাঠে থাকার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। তারাও কুমারপাড়া দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ নেতৃবৃন্দ।

শান্তির নগরী বলে রাজশাহীর একটি পরিচিতি রয়েছে। সাধারণ মানুষ আতংকিত হলেও সুধিজনরা অনেকটা আস্থার সাথে বলেছিলেন এখানে কোন সংঘাত হবেনা। কারণ হিসাবে বলা হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। অন্যদিকে সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। দুজনেই শান্তির পক্ষের মানুষ। ইতোপূর্বে দু’জনের কৌশলের কারনে রাজনৈতিক সংঘাত হয়নি। সমাবেশে কত মানুষ ছিল এনিয়ে বাহাস শুরু হয়েছে। মিজানুর রহমান মিনু বলছেন রাজশাহী অঞ্চল বিএনপির দুর্র্গ। অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি প্রমান করে দিয়েছে বিএনপির দূর্জয় ঘাটি রাজশাহীর মাটি। পরিবহন ধর্মঘট, মামলা, হামলা না হলে আরো মানুষ বিএনপির সমাবেশে আসত। অন্যদিকে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন বিএনপিকে রাজশাহীর মানুষ লালকার্ড দেখিয়েছে। তারা সমাবেশের নামে তিনদিন ধরে পিকনিক করেছে কিছু লোকজন নিয়ে। বিএনপির দুর্গ আর নেই। গত পনের বছরে পদ্মায় অনেক পানি গড়িয়েছে। তাতে বিএনপির দূর্গ ভেসে গেছে।

সচেতন মানুষ বলছেন ইতোপূর্বে দুই বড় দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি বড় বড় সমাবেশ করেছে। তাতে কোন বাধা ছিলনা। পরিবহন ধর্মঘট ছিলনা। পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে ঠেকানো হয়নি। সমাবেশের নির্দিষ্ট দিনে বাস, ট্রাক বোঝাই হয়ে বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মানুষ এসেছে। পূর্বদিক থেকে আসারা তালাইমারীর নিকট জড়ো হতো। পশ্চিম থেকে আসারা কাশিয়াডাঙ্গায়। উত্তর থেকে আসারা স্টেডিয়ামের কাছে জড়ো হয়ে মিছিল করে মাদ্রাসা ময়দানে আসত। নগরীর মানুষ যোগ দিতো। সমাবেশ শেষে আবার ফিরে যেত। এখনকার মত কৌশলী বাধা দেয়া হতো না। এখন একদিনের সমাবেশ তিনদিনে রূপ নিচ্ছে। সবার ভোগান্তি বাড়ছে। কার পাল্লা ভারী এমন হিসেব কষতে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপি সমর্থকরা বলছেন পদে পদে বাধা দেবার পরও এত মানুষ। বাধা না দিলে আরও দ্বিগুণ হতো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন