বিএনপিকে তেল মারা গণমাধ্যম মালিকদের চিনে রাখছি
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে আমরা মার খাচ্ছি। আর মার খাওয়ার সময় নেই। যে হাত দিয়ে মারতে আসবে, সে হাত ভেঙে দিতে হবে। গতকাল ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দুই সিটির মেয়রদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যৌথসভায় তিনি এ কথা বলেন। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ২০০১-এ যে অত্যাচার আমাদের ওপর করেছে, আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর গুলি দিয়ে সেই অত্যাচারের জবাব কিন্তু দিতে পারতাম। সে ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কিন্তু আমরা তো সেটা করিনি! আমরা তো কখনো এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করতে যাইনি! মারতেও যাইনি। বারবার আঘাত করলে আমরা সহ্য করব না। আমরা ২০২২ পর্যন্ত সহ্য করেছি। এখন আর করব না। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে সরকার হটানো যাবে না। মারতে আসলে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দিতে আসবে, সে হাত দিয়ে তাদের পোড়াতে হবে। ওদের কীসের ক্ষমা। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না। গণতন্ত্র তাদের মুখে মানায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানীর প্রত্যেক এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। সেদিন তারা (নয়াপল্টনে বিএনপি) বিআরটিসির বাস পুড়িয়েছে। এটা তাদের টেস্ট ছিল। নেতাকর্মীদের বলছি, সবাই প্রস্তুত থাকুন। মেহনতী মানুষের ওপর আঘাত করলে তাদের ক্ষমা নেই। আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি। আওয়ামী লীগ কারো পকেটের সংগঠন নয়। বিএনপির জন্ম জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে। বিএনপি ক্ষমতায় এসে ২০০১ সালে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল। তারা টাকা দিয়ে আমি ও আমার বোন কোথায় টাকা রেখেছি খোঁজ করেছে। তারা লুটেপুটে খেতে ক্ষমতায় এসেছিল। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে দিতে ক্ষমতায় এসেছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু তৃণমূলের জনগণকে ক্ষমতা দেয়ার জন্য অর্থাৎ একটি রাষ্ট্র পরিচালনায় গ্রামের মানুষের যেন অধিকার থাকে সেভাবে এই ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি এবং পাকিস্তানি শক্তি; ব্রিটিশ-পাকিস্তানি মিলিটারি ডিকটেটরদের করা সিস্টেম পরিবর্তন করে তৃণমূল মানুষদের সংগঠিত করে সারা বাংলাদেশে প্রত্যেক মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করে সেখানে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিলেন। প্রত্যেক জেলায় গভর্নর নিযুক্ত করে দিয়েছিলেন। জেলাভিত্তিক উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করবে। দ্রæত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে। আমাদের সংবিধান বর্ণিত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা; মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। এত বড় পরিবর্তন এনে বাংলাদেশকে তিনি চেয়েছিলেন সুপরিকল্পিতভাবে গ্রামকে সাজাতে। সেই কাজগুলো তো তাকে করতে দেয়া হলো না, উল্টো মিথ্যা অপবাদ দেয়া হলো। তৃণমূলের মানুষ ক্ষমতাসীন হোক সেটা অনেকেই চায় না। একমাত্র আওয়ামী লীগে সেটা বিবেচনা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা যখন জনগণের সেবক হিসেবে কাজ শুরু করলাম এবং একেবারে তৃণমূল থেকে উন্নয়ন শুরু করলাম। এরপর ২০০১ এর নির্বাচনের সময় নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সিস্টেম ছিল। নির্বাচনের পর আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি। এর আগে কিন্তু কেউ করেনি। যদিও বিএনপি ৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারি একটা ইলেকশন করল। সব জায়গায় আর্মি ডেপ্লয় করল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থার সবাইকে ব্যবহার করে যে নির্বাচন করল, জাতির পিতার খুনি রশিদকে নিয়ে এলো সংসদে, হুদাকে নিয়ে এলো। ঠিক যেভাবে জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধী যাদের আমি ফাঁসি দিয়েছি, তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে যত রাজাকার, আলবদর হয়ে গেল বিএনপির মন্ত্রী অথবা উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগ আসার পরে সত্যিকার গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখল। ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ভোট চুরি করেছিল বলেই কিন্তু আমাদের আন্দোলনটা সফল হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ভোট চুরি করে নিয়ে গেছে। জনগণের ব্যাপক সাড়া আমরা পাই। যে কারণে আন্দোলন সফল হয়। তখন খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়। খালেদা জিয়া যদি ভোট চুরি না করতো তাহলে তো পদত্যাগে বাধ্য হতো না। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট কখনো চুরি করে না। জনগণের ভোট সংরক্ষিত করে। ভোটের অধিকার জনগণের হাতে আওয়ামী লীগ তুলে দেয় এবং এটা আমরা প্রমাণ করেছি। আর প্রমাণ করেছি বলেই আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে।
বিএনপি ভোট চুরির অপবাদ আওয়ামী লীগের উপর দেয়ার চেষ্টা করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, বারবার তারা (বিএনপি) চেষ্টা করেছে; অগ্নি সন্ত্রাস, আন্দোলন, মাসের পর মাস-বছরের পর বছর অবরোধ, কোনোটাই কাজে আসেনি। আওয়ামী লীগের ওপর ভোট চুরির অপবাদ দেয়ার চেষ্টা করেছে। জনগণ জানে তারা নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়েছে, তারা তাদের (বিএনপি) ডাকে সাড়া দেবে কেন? বিএনপির খাসিলত তো যায় না! ২০০১ -এ গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় এলো। গ্যাস তো দিতেই পারল না, চুরি-চামারি, ভোট চুরি শুরু করল, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, গ্রেনেড-বোমা হামলা, একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব বাংলাদেশে কায়েম করল। বাংলা ভাই, জঙ্গি, ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং আওয়ামী লীগের এমন কোনো জনসভা নেই যেখানে হামলা না করেছে। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার তারা করেছে। নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী থেকে শুরু করে আমাদের বহু নেতাকর্মীদের নিয়ে দিনের পর দিন নির্যাতন করে। যখন দেখেছে যে মরে যাবে, জেলখানায় ফেলে এসেছে। কোথায়, আমরা তো বিএনপি কাউকে এমন কিছু করিনি এখন পর্যন্ত! আমাদের নেতারা বিএনপির আমলে লাঠির বাড়ি খাননি, এমন কেউ আছেন? নেই।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে গুলি হলো, রকিবুল হুদা সরাসরি গুলি করেছিল আমাকে। সব সময় আমার কর্মীরা আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে। তখন এরশাদ ক্ষমতায় ছিল। খালেদা জিয়া তাকে কেনো পদোন্নতি দিয়ে আইজিপি পর্যন্ত বানালো, এই জবাব কি তিনি দিতে পারবেন? তার মানে ওই ঘটনার সঙ্গে এরাও (বিএনপি) জড়িত ছিল। এ রকম বহু ঘটনা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১-এর পরে নির্বাচন শুরু হওয়ার পর পর আমাদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। একেক জনের বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে ফেলেছে। ৬ বছর থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত ওদের (বিএনপি) হাত থেকে রেহাই পায়নি। তারপর এলো অগ্নি সন্ত্রাস। ২০০১-এ যে অত্যাচার আমাদের ওপর করেছে, আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর গুলি দিয়ে সেই অত্যাচারের জবাব কিন্তু দিতেই পারতাম। দল হিসেবে সে ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কিন্তু আমরা তো সেটা করিনি! আমরা তো কখনো এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করতে যাইনি! বিএনপি নেতাদের মারতেও যাইনি। তিনি আরো বলেন, আমরা নির্বাচনী ইশতেহার রূপকল্প-২০২১ আমরা বাস্তবায়ন করেছি। বিএনপি দেখাতে পারবে একবারও? তারা তো এতবার ক্ষমতায়, বড় বড় করে বলে খালেদা জিয়া ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী। একবারও দেখাতে পারবে যে, তারা নির্বচনী ইশতেহারে যে কথা দিয়েছিল তারা কথা রেখেছে? একটাও বাস্তবায়ন করেছে? তাদের কোনো ভবিষ্যত প্রোগ্রাম অথবা আশু করণীয় বা কর্মসূচি ছিল দেশের জন্য? ছিল না। তারা কখনো এ ধরনের কর্মসূচি নেয়নি। তারা শুধু কথাই বলতো, একটাও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা।
গণমাধ্যমের মালিকদের ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে আছে বিএনপিকে তেল মারছে। এত তেল মারা কিসের জন্য। কত তেল আছে, আমি তাদের দেখব? এখন চিনে রাখছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারকে বলব তারেক রহমানকে ফেরত পাঠাতে। সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুল রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন