রাজধানীর পরিত্যক্ত একটি মাঠ গোলাপবাগ মাঠ। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডের পাশের এই মাঠের দিকে এখন দেশি-বিদেশি সবার চোখ। ওই মাঠে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে তাদের সবার মধ্যে কৌত‚হল। গুরুত্বহীন মাঠটি কার্যত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে গেল। এরই মধ্যে মাঠটি হাজার হাজার মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। নানা নাটকীয়তা, বাকযুদ্ধ, সংঘাত-সংঘর্ষ, গুলি, হামলা-মামলা, গ্রেফতারের পর বিএনপির প্রত্যাশা অনুযায়ী এই মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। আজ ঢাকায় হতে যাচ্ছে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে নয়াপল্টন, সোহরাওয়ার্দী, আরামবাগ, টঙ্গী, পূর্বাচল, কালসি মাঠ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসহ নানা স্থান নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক-আলোচনা শেষে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দলটির বহুল আলোচিত এ সমাবেশ। সকাল ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ সমাবেশ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি এই সমাবেশে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনগণকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানান। বিশেষ করে ঢাকাবাসীকে সমাবেশে উপস্থিত থেকে সরকারের জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আহŸান জানান। এছাড়া বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরিক আছে তাদেরকেও যার যার অবস্থানে থেকে ভ‚মিকা পালনের আহŸান জানান।
ড. মোশাররফ জানান, গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে ১০ দফা রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। তার প্রতি সকলকে সমর্থন জানানোর আহŸান জানান। এর আগে বেলা সোয়া ৩টার দিকে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা মহানগর পুলিশের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বিএনপির প্রস্তাবিত গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশের জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে শর্তগুলো দেয়া হয়েছিল, সেই একই শর্তে গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে প্রায় ৩ মাস আগে ১০ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা করে বিএনপি। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করতে নয়াপল্টনের জন্য অনুমতি চেয়ে গত ১৩ নভেম্বর ও ২০ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করেছিল বিএনপি। ঢাকার এই সমাবেশ নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে চলে উত্তপ্ত বাকযুদ্ধও। বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায়। কিন্তু ডিএমপি বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলে। দুইপক্ষই তাদের অবস্থান অনড় থাকে। পরে নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বিকল্প ভেন্যু নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়। সমাবেশস্থল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মকবুল হোসেন নিহত হন, আহত হয় তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ওই ঘটনার পর গত তিন দিনে বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ফজলুল হক মিলনসহ প্রায় ৮ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে একাধিক। এর পর থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতেও পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে কমলাপুর স্টেডিয়াম ও পুলিশের পক্ষ থেকে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠ প্রস্তাব করা হয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস স্টেডিয়াম পরিদর্শনও করেন। কিন্তু রাত ৩টার সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে ডিবি তুলে নিয়ে গেলে সমাবেশ নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। যদিও সকালে জরুরি বৈঠকে বসেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। বৈঠক শেষে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ হবেই।
এরপর দুপুরে ডিএমপি কার্যালয়ে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করার জন্য গোলাপবাগ মাঠের অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, কমলাপুর স্টেডিয়াম পরিদর্শনের পর আমরা জানিয়েছিলাম সেখানে করব না, এরপর গোলাপবাগ মাঠের নাম প্রস্তাব করা হয়। সেই পছন্দের প্রেক্ষিতে লিখিত আবেদন করতে বলে, আমরা আবেদন দিয়েছি তারই প্রেক্ষিতে আমাদের সেখানে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
অবরুদ্ধ নয়াপল্টন : গত বুধবার পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের পর থেকেই পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে নয়াপল্টন এলাকা। বৃহস্পতিবার দিনভর ওই সড়ক বন্ধ রাখার পর সন্ধ্যায় সীমিত পরিসরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলেও গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই ফের বন্ধ রাখা হয় সড়কটি। সড়কের ফকিরাপুল ও নাইটিঙ্গেল দুই প্রান্তেই পুলিশ ব্যারিকেড বসায় এবং কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই সড়কের দুই প্রান্তেই অনেকেই প্রবেশ করতে গেলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। পুরো সড়কজুড়েই মোতায়েন ছিল বিপুল পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও মোতায়েন ছিল পুলিশ। এদিনও ওই এলাকার সকল দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গলি পথগুলো বন্ধ ছিল। এমনকি নয়াপল্টন জামে মসজিদে যারা নামাজ পড়তে যেতে চেয়েছেন তাদের যেতে দেয়া হয়নি। নামাজ শেষে নয়াপল্টন সড়কে বের হতেও বাধা দেয় পুলিশ। এই নিয়ে মুসল্লিদের সাথে পুলিশের বাক-বিতন্ডাও হয়।
রাতেই লোকারণ্য গোলাপবাগ মাঠ: বিকেলে সমাবেশের জন্য গোলাপবাগ মাঠ নির্ধারণ হওয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মী ও উৎসুক জনতা দলে দলে ছুটতে থাকে সমাবেশস্থলের দিকে। বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় গোলাপবাগ মাঠ। বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশ সফল করতে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, নিহত নেতাকর্মীদের হত্যার বিচার, হামলা-মামলা-গ্রেফতারের প্রতিবাদসহ নানা ইস্যুতে সেøাগানে সেøাগানে গোটা এলাকা মুখরিত করে তুলেন। সন্ধ্যায় গোলাপবাগ মাঠে সরজমিনে দেখা যায়, হাজার হাজার নেতাকর্মী মাঠে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের সেøাগানে মুখরিত করে রেখেছেন। উপস্থিত সিংহভাগ নেতাকর্মীই কয়েকদিন আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশস্থলে ঢুকতে দেখা গেছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বন্ধ হয়ে যায় গোলাপবাগ-ধলপুর-সায়েদাবাদ রাস্তা। নোয়াখালী সোনাইমুড়ী থেকে আসা যুবদল নেতা মোখলেসুর রহমান জানান, গণসমাবেশে যোগ দিতে আমরা সোমবার ঢাকায় আসি। প্রথমে ফকিরাপুলের একটি হোটেলে উঠলে পরে পুলিশের হয়রানির কারণে হোটেল ছেড়ে দিতে হয়। পরে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করি বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে। কিন্তু সেখান থেকেও আমাদের চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে দুই রাত কমলাপুর স্টেশনে রাত্রিযাপন করি।
মাদারীপুরের শিবপুর থেকে আগত ছাত্রদল নেতা আমিনুল জানান, বিএনপি করার অপরাধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আমার বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। জীবনের আর কোনো মায়া নেই, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও এ সরকারের পতন ঘটাবো ইনশাআল্লাহ।
জামালপুরের সরিষাবাড়ি থেকে আগত এক বৃদ্ধ জানান, আমি বিএনপির কোনো পদ পদবিতে নেই। তবে, এ সরকার পতনের সমাবেশে উপস্থিত থাকা আমার নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। তাই আমি বুধবারই এ সমাবেশের ঢাকায় এসেছি। তিনি উত্তরায় এক ভাগিনার বাসায় ওঠেছেন জানান।
সন্ধ্যার দিকে মাঠ পরিদর্শনে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহŸায়ক আমান উল্লাহ আমানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, টালবাহানা করে পুলিশ বিকেলে অনুমতি দিয়েছে। জনস্রোত ঠেকাতেই সরকার হামলা-মামলা করেছে। কারাবন্দি সকলের মুক্তি চাই, হামলা-মামলা করে জনস্রোত থামানো যাবে না। কাল সমাবেশেই উচিত জবাব দেয়া হবে।
পরিবহণ কম, পথে পথে তল্লাশি : বিএনপির সমাবেশের আগের দিন রাজধানীতে প্রবেশকারী মহাসড়কগুলোতে যানবাহন অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশ পথ নবীনগর-সাভার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিটাগাংরোড কিংবা ডেমরা প্রতিটি মহাসড়কেই এদিন যানবাহনের চাপ কম ছিল। রাজধানীর সঙ্গে আশপাশের জেলাগুলোতে প্রতিদিন চলাচলকারী আন্তঃজেলা পরিবহনও শুক্রবার কম ছিল। যাত্রবাবাড়ি থেকে যে সমস্ত বাস নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-সিলেট চলাচল করে, গতকাল তা চলাচল করেনি। যাত্রীও ছিল না তেমন একটা। বন্ধ ছিল অনেক বাসের কাউন্টার। একই অবস্থা দেখা গেছে গাবতলী-সাভার মহাসড়কেও।
এদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ। এছাড়া সড়কের বিভিন্ন পয়েটে টহল বসায় পুলিশের একাধিক টিম। সকাল থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এদিকে তল্লাশি চৌকিগুলোতে দেখা গেছে, ঢাকামুখী যানবাহন, বাসে তল্লাশি করছেন পুলিশ সদস্যরা। প্রতিটি যাত্রীকে কোথায় যাবেন, কেন যাবেন এবং ঢাকা প্রবেশের সঙ্গত কারণ জিজ্ঞাসা করছেন তারা। সন্তোষজনক উত্তর পেলেই তাদের ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। অনেকের মোবাইল ফোন নিয়ে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারও চেক করা হয়।
একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, সঙ্গত কারণ জানাতে না পারায় তাদের ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অনেকের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবুল কাশেম আজাদ জানান, মহাসড়কে সবকিছু স্বাভাবিক আছে। বাড়তি নিরাপত্তার জন্যই এসব তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।
এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর, সিঅ্যান্ডবি বাসস্ট্যান্ডে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি আমিনবাজার, নবীনগর বাসস্ট্যান্ড ও বিরুলিয়ায় দুটি করে চেকপোস্ট বসানো হয়। আশুলিয়া বাজার, কবিরপুর ও আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে দুটি করে চেকপোস্ট থাকলেও শুক্রবার চেকপোস্টের সংখ্যা বেড়েছে। এদিন সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের শ্রীপুর, বাইপাইল, যোগ হয়েছে আরও দুটি চেকপোস্ট। বাইপাইল চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল মামুন কবির বলেন, আমরা সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করছি। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কাজ করছি। আমরা কাউকে হয়রানি করছি না।
সড়কের পাশাপাশি রেলপথে যারা ঢাকায় আসেন তাদেরও কমলাপুর স্টেশনে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে জানা যায়।
এদিকে বিকেলে গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ৯টি বিভাগে জনসভা করেছি। সরকারের সব বাধা উপেক্ষা করে এসব জনসভায় জনতার ঢল নেমেছে। আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা, নির্যাতন করা হয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা ধৈর্য্য ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চেয়েছি। তবে মনে হয়, সরকার অন্য কিছু চায়। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলে তারা জনগণের দাবি অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টা সফল হবে না। জনগণের আন্দোলনের সামনে সব স্বৈরাচারকেই নতিস্বীকার করতে হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকেও করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা ও দম্ভের প্রকাশ আছে, যুক্তি নেই কোনো। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
ড. মোশাররফ বলেন, এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর বিনা উসকানিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ, র্যাব, সোয়াট বাহিনী ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান একযোগে আক্রমণ করে খুন ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। তাদের গুলি ও টিয়ারগ্যাস ছোড়ার পরিমাণ এতই বেশি ছিল যে মনে হয়েছে যেন যুদ্ধ চলছে। নিরস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর এমন নির্মম আক্রমণ ও জুলুম নজিরবিহীন। তারা দলের মহাসচিবকে তার অফিসে ঢুকতে দেয়নি; কিন্তু নিজেরা ঢুকে অফিসের কক্ষ, আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ডডিক্স, নগদ অর্থ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি নিয়ে গেছে।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, নিজেরা ব্যাগে করে বোমা অফিসের ভেতর নিয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, ওইগুলো অফিসে পাওয়া গেছে। কিন্তু সাংবাদিকদের চোখে তা ধরা পড়েছে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রচার হয়েছে। এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নিন্দা করার ভাষ্য আমাদের জানা নেই।
তিনি বলেন, একই দিনে অফিসের ভেতর ও বাইরে থেকে দলের অনেক সিনিয়র নেতাসহ প্রায় ৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। এমনকি গ্রেফতারকৃত অনেক আহত নেতাকর্মীকে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এমন নির্মমতা শুধু অনির্বাচিত সরকারের অনুগত কোনো দলীয় বাহিনীর পক্ষেই সম্ভব। আমরা সব নেতাকর্মীর মুক্তি এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন