একাদশ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধীদল বিএনপির সংসদ সদস্যরা। দলটি থেকে নির্বাচিত ৭ জন সংসদ সদস্যই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ১৯৯৪ সালে ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদের ১৪৭ জন বিরোধী দলীয় সদস্য একযোগে পদত্যাগের পর একই দাবিতে বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
সমাবেশে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ প্রথম পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি অকার্যকর সংসদের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও সংসদী দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর অন্য সংসদ সদস্যরা একে একে পদত্যাগের কথা জানান। দেশের বাইরে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদের পক্ষে গোলাম মোহাম্মদ পদত্যাগের কথা জানান। এ সময় জানানো হয় হারুনুর রশীদ পদত্যাগপত্রে সই করে বিদেশ গেছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্যরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান। বিএনপির সংরক্ষিত সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। এ ছাড়াও সিলেট-২ থেকে মো. মোকাব্বির খান (উদিয়মান সূর্য) ও মৌলভীবাজার-২ থেকে সুলতান মুহম্মদ মনসুর ধানের শীর্ষ নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। সুলমান মনসুর এমপি হওয়ার পর পল্টি দিয়ে সরকারের অনুকম্পায় নিয়ে সংসদ সদস্য পদ ধরে রেখেছেন।
বিএনপির পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া এমপিরা জানান আজ রোববার জাতীয় সংসদে পদত্যাগপত্র পাঠাবেন। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর হাতে পদত্যাগ পত্র আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হবে।
সমাবেশে রুমিন ফারহানা বলেন, রোববার আমরা জাতীয় সংসদে পদত্যাগপত্র পাঠাবেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৮ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির সংসদ সদস্যের শপথ গ্রহণ নিয়ে টানাপোড়েন দেখা দেয়। সবার আগে শপথ গ্রহণ করেন মৌলভীবাজার থেকে নির্বাচিন সুলতান মো. মনসুর। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপির পাশ থেকে সরে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তোয়াজ শুরু করেন। সিলেট-২ থেকে নির্বাচিত মো. মোকাব্বির খানও শপথ গ্রহণ করেন। পরে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি ৫ জনই শপথ নেন। নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেওয়ায় ফখরুলের আসনটি শূন্য ঘোষণা করে আবার নির্বাচন হয়। আর তাতে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী জিএম সিরাজ। আর সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হন ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা।
উল্লেখ, পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠন করে বিএনপি। এরপর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরাকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। ১৯৯৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার আহ্বানে সংসদের সব বিরোধী দল ও গ্রুপের নেতাদের এক যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর ২৬ এপ্রিল থেকে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী যৌথভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে হরতাল, অবরোধ, মশাল মিছিল, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। ’৯৪ সালের ২৭ জুন আওয়ামী লীগ, জাপা এবং জামায়াতে ইসলামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিন্ন রূপরেখা ঘোষণা করে। সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৯৯৪ সালে ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদের ১৪৭ জন বিরোধী দলীয় সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। ওইদিন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও এনডিপি’র সদস্যরা স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর অবশ্য ৬ষ্ট জাতীয় সংসদ থেকে মেজর (অব) আবদুল মান্নান, মাহী বি চৌধুরী, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী পদত্যাগ করেছিলেন। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন