পাকিস্তানে সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ভারত জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ভারতের পদচিহ্ন দেখা গেছে। মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেন, ‘ভারত, কোনো না কোনোভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করে এবং তারপর পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। আমাদের কাছে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।’
এ সময় পাঞ্জাব প্রদেশের পুলিশের কাউন্টার-টেররিজম বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ইমরান মেহমুদ মন্ত্রীর সাথে ছিলেন। রানা সানাউল্লাহ বলেন, একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার সাংবাদিকদের একটি সন্ত্রাসী ঘটনা সম্পর্কে ব্রিফ করবেন যা পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে উপস্থাপন করার এবং ভারতের ঘৃণ্য এজেন্ডা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পাকিস্তানের স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, ‘এই ঘটনাটি গত বছর ঘটেছিল এবং আমরা এর সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে ধরেছি। ভারত কিছুটা হলেও এর জন্য দায় স্বীকার করেছে।’
পাঞ্জাব পুলিশের এআইজি (সিটিডি) মেহমুদ বলেন, ২০২১ সালের ২৩ জুন লাহোরের জোহর টাউনে বেলা ১১টার পরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। বিস্ফোরণে ২০০ কিলোগ্রামের মতো বিস্ফোরক পদার্থ ব্যবহার করা হয় এবং এতে একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল। বিস্ফোরণের ফলে তিনজন নিহত এবং দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন আহত হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত, কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। যেহেতু এটি একটি আবাসিক এলাকা ছিল, তাই গাড়ি এবং সেখানকার বাড়িগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণ হওয়ার সাথে সাথে কাউন্টার-টেররিজম বিভাগের পুলিশ এফআইআর নথিভুক্ত করে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে।
আটককৃত তিনজনের প্রথমজন ছিল পিটার পল ডেভিড। তাকে তার গাড়ির মাধ্যমে শনাক্ত করা হয় এবং তিনি ওই সন্ত্রাসী অপারেশনটি তদারকি করছিলেন বলে জানান মেহমুদ। তার ভাষায়, ‘এই ঘটনায় তিনি (পিটার পল) সরাসরি দুই র এজেন্ট আলী বুদাইশ এবং বাবলু শ্রীবাস্তবের সাথে যুক্ত ছিলেন। এই এজেন্টরা তাকে সন্ত্রাসে অর্থায়ন করে।’
এছাড়া সাজ্জাদ হুসেন নামে এক ব্যক্তি ছিলেন ডেভিডের সহকারী এবং জোহর টাউন বিস্ফোরণে তাকে সহায়তা করেন জানিয়ে মেহমুদ বলেন, বিস্ফোরণ ঘটানোর কাজে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ফোনগুলোও তিনি ধ্বংস করেছিলেন।
পাকিস্তানের এই সিটিডি কর্মকর্তা জানান, চার থেকে পাঁচ দিন পর সিটিডি কর্মকর্তারা আরও দুই অপরাধী ঈদ গুল ও তার স্ত্রী আয়েশা গুলকে খুঁজে বের করেন। তার দাবি, ডেভিড তার গাড়িটি বিস্ফোরণের জন্য প্রস্তুত করতে গুলকে দিয়েছিল। এরপর গুল ওই গাড়িতে বিস্ফোরক স্থাপন করে।
ইমরান মেহমুদ বলেন, ভিডিওতে গুলকে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও, অন্য একজন গুলের বোমা তৈরির ভিডিও তৈরি করেছে। পরে গুলের দেওয়া তথ্যে পুলিশ অবশেষে সামি উল হককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। আর এই ব্যক্তিই পাকিস্তানে এর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রধান পরিকল্পনাকারী।
পাকিস্তানের পুলিশের এই সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, সামিকে শনাক্ত করা হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাকে ধরতে পারেনি। পরে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড ওয়ারেন্ট জারি করা হয় এবং নিজের শ্যালককে নিয়ে বেলুচিস্তান হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশের চেষ্টার সময় তাকে আটক করা হয়।
অভিযুক্ত সামি উল হক কমপক্ষে ১২ বছর ধরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র এর সাথে জড়িত বলেও জানান তিনি।
মেহমুদ আরও বলেন, সামির শ্যালক উজাইর আকবর তাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তা করতেন এবং তার বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছিল। তারপর পুলিশ নাভিদ আখতার সম্পর্কেও তথ্য পায়, যিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সময় নজরদারি করতেন এবং হামলার লক্ষ্য নির্বাচন করতেন।
তার ভাষায়, ‘নাভিদ মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের শ্রমিক ছিলেন এবং জরিমানা দিতে না পারায় জেলে ছিলেন। পরে একজন র এজেন্ট তাকে তার জরিমানার অর্থ দিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেয় এবং বিনিময়ে তাকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে হবে বলে শর্ত দেয়।’
মেহমুদ বলেন, নাভিদকে গ্রেপ্তার করার পর পাকিস্তানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও তিনজন র এজেন্টকে খুঁজে বের করেছি এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করেছি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন