ইনকিলাব ডেস্ক : তুরস্কে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এক বন্দুকধারী। হামলায় রুশ রাষ্ট্রদূত গুরুতর আহত হন। পরে তিনি হাসপাতালেই মারা যান। সোমবার সন্ধ্যায় একটি আর্ট গ্যালারি পরিদর্শনের সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর অকুস্থলের যেসব ছবি এবং সংবাদমাধ্যমে যে বর্ণনা আসছে তাতে মনে করা হচ্ছে এই ঘটনা প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোগানের জন্য বড় ধরনের অশনি সংকেত।
একাধিক ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গুলির পর পাশে পড়ে থাকা কয়েকজনের দেহের পাশে দাঁড়িয়ে রীতিমত পোজ দিচ্ছে হামলাকারী ব্যক্তি। প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ-গোয়েন্দাসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তখন কোথায় ছিল? কয়েক দফা গুলি ছোড়ার পরও কেন পুলিশ বা গোয়েন্দারা বন্দুকধারীকে লক্ষ্য করে গুলি করেনি? এটা প্রথম গুলির উৎপত্তিস্থল নিশ্চিত হওয়ার পরপরই করার কথা। যেই মুহূর্তে আলেপ্পোয় রাশিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে, তেমন একটি সময়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তায় সাধারণের চেয়ে বেশি পুলিশ-গোয়েন্দা নিয়োজিত থাকার কথা। কিন্তু তারপরও তারা পাল্টা পদক্ষেপ নিতে এত দেরি করল কেন? এই ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর কোনো অংশের প্রতি এরদোগানের কর্তৃত্বের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বাহিনীগুলোর কিছু বিদ্রোহী মনোভাবের সদস্যকে কেউ ব্যবহার করে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতকে হত্যার সুযোগ করে দিয়েছে কিনা তাও প্রশ্নসাপেক্ষ। এসব প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেকের মনে। তবে সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। বিষয়টা যদি সেই রকমই হয় তাহলে বাহিনীগুলোর ভেতর থেকে নতুন করে ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন এরদোগান, এমন আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে তুরস্কে নিয়োজিত রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভের হত্যাকারীর নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা দাবি করেছে, অ্যাডিনে জন্ম নেয়া ২২ বছর বয়সী হত্যাকারীর নাম মেভলুট মার্ট আলটিনটাস। দাঙ্গা পুলিশের হয়ে কাজ করতেন তিনি। গত সোমবার সন্ধ্যায় একটি আর্ট গ্যালারি পরিদর্শন করছিলেন তুরস্কে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভ। হঠাৎই হামলার শিকার হন তিনি। হামলায় আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে তুরস্কে বিক্ষোভের একদিন পরই এ হামলা চালানো হয়। হত্যা করা হয় রুশ রাষ্ট্রদূতকে।
২০১৩ সাল থেকে আন্দ্রেই কারলভ তুরস্কে রুশ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার হত্যাকারী মেভলুট মার্ট আলটিনটাস সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলায়মান সয়লু বলেন, তিনি ২২ বছর বয়স্ক একজন ব্যক্তি। গত আড়াই বছর ধরে দাঙ্গা পুলিশের হয়ে কাজ করতেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, তুর্কিদের চোখে রাশিয়া শিরোনামের প্রদর্শনীতে বক্তব্য দেয়ার সময় কারলভকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। রাষ্ট্রদূতকে গুলি করার পর হামলাকারী অনুষ্ঠানের সব অতিথিকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়। কারলভকে গুলির পর গ্যালারিতে বন্দুকযুদ্ধ চলে কিছুক্ষণ। হামলায় আহত আরো তিনজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সয়লু। সিএনএন তুর্কিকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, হামলাকারী একাই ছিল। হামলাকারীকে আমি এখান থেকে জীবিত ফিরব না বলতে শুনেছেন তিনি। রাষ্ট্রদূতকে গুলি করার পর হামলাকারী সিরিয়ার আলেপ্পোর পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হামলাকারীর মৃত্যু হয়েছে। হামলাকারী রুশ রাষ্ট্রদূতকে লক্ষ্য করে একাধিক গুলি চালিয়েছে।
হত্যাকা- সংঘটিত হওয়ার সময় মেভলুট মার্ট আলটিনটাস কোথাও কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন না। বিবিসি জানিয়েছে, হামলাকারী আল্লাহ আকবর ও আলেপ্পোর কথা ভুলে যেও না বলে চিৎকার করেছে। হামলার মোটিভ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে কিছু জানা যায়নি। বিবিসির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পুলিশের পরিচয়পত্র দেখিয়ে হামলাকারী গ্যালারিতে প্রবেশ করে বলে শোনা যাচ্ছে। অনুষ্ঠানটির ভিডিওতে দেখা যায়, স্যুট পরিহিত সুদর্শন এক যুবক হাতে রিভলবার নিয়ে চিৎকার করছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলটিনটাস-এর জন্ম ১৯৯৪ সালে। মন্ত্রী সয়লু বলেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য অ্যাডিনে জন্ম তার। রুশ রাষ্ট্রদূতকে হত্যার পর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন তিনি। রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন