শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

চীনকে ঠেকাতে অরুণাচলে দীর্ঘতম হাইওয়ে তৈরি করছে ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:১৫ পিএম

ভারতীয় সৈন্যরা অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের প্রতিবেশী চীনের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) কাছে তাওয়াং-এর আগে পেঙ্গা টেং সো-তে বোফর্স কামানের অবস্থান প্রদর্শন করছে


বহু বছর ধরেই অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে ভারতের সাথে বিতর্ক রয়েছে চীনের। চলতি মাসে অরুণাচলের তাওয়াং সেক্টরে ইয়াংৎসে এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে। এ আবহে চীনকে ঠেকাতে এ বার নতুন কৌশল নিয়েছে ভারতের মোদি সরকার।

চীনের সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় হাইওয়ে তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে ভারত সরকার। আগামী ৫ বছরের মধ্যেই অরুণাচলে তৈরি করা হবে ‘ফ্রন্টিয়ার হাইওয়ে’। আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ২০ কিমি দূরে এই সুদীর্ঘ হাইওয়ে তৈরি করা হবে। ভারত-তিব্বত-চীন-মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষে যাবে এই হাইওয়ে। হাইওয়ের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১৭৪৮ কিমি। দুই লেনের রাস্তা তৈরি করা হবে। হাইওয়ে তৈরি করবে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়। সরকারি ভাবে এটাই ভারতের দীর্ঘতম হাইওয়ে।

রাস্তাটির নামও ঠিক করা হয়েছে। নাম দেয়া হবে ‘এনএইচ-৯১৩’। অর্থাৎ ৯১৩ নং জাতীয় সড়ক। এই দীর্ঘ হাইওয়ে তৈরি হলে সীমান্ত এলাকায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর যাতায়াতের পথ আরও মসৃণ হবে। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সীমান্ত এলাকায় যেতে সুবিধা হবে সেনার। সাম্প্রতিক কালে যে ভাবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকায় ভারত চীনা সেনার কাছে মার খেয়েছে, তা মোকাবিলায় এই রাস্তা গুরুত্বপূর্ণ।

অরুণাচলের বমডিলা থেকে শুরু হবে এই জাতীয় সড়ক। তার পর নাফরা, হুরি, মনিগংয়ের মধ্যে দিয়ে যাবে রাস্তাটি। যা ভারত-তিব্বত সীমান্তের কাছাকাছি। চীন সীমান্ত লাগোয়া এলাকা জিডো ও চেনকুয়েন্টির মধ্যে দিয়েও রাস্তাটি যাবে। জাতীয় সড়ক শেষ হবে বিজয়নগর এলাকায়। যা ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত লাগোয়া এলাকার কাছে। এই দীর্ঘতম জাতীয় সড়ক তৈরি করতে খরচও হবে অনেক। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের জন্য খরচ হবে প্রায় ২৭ হাজার কোটি রুপি। তবে এই প্রকল্পের খরচ কমানো যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে সরকার।

এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোট করিডরের প্রায় ৮০০ কিমি যাবে মাঠের উপর দিয়ে। সুড়ঙ্গ ও সেতুও থাকবে বেশ কয়েকটা। রাস্তা তৈরির কাজে অনুমোদনের কাজ ২০২৪-২৫ সালের মধ্যেই সেরে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর পর আরও ২ বছর লাগবে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করতে। ওই সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে গোটা প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে আন্তঃকরিডর তৈরির পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে, যা ওই হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।

এই রাস্তা তৈরি হলে সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি চালাতে সুবিধা হবে ভারতের। সেই সঙ্গে সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় অনুপ্রবেশ রোখার কাজও ভাল ভাবে করা যাবে। প্রসঙ্গত, অরুণাচল প্রদেশকে বরাবরই নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে চীন। অরুণাচল দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলে দাবি করে শি জিনপিং সরকার। তবে অরুণাচলের উপর ভারতের সার্বভৌমত্বের অধিকার আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত। কিন্তু সীমান্ত নিয়ে দু্ই দেশের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।

গত ৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সেক্টরে ইয়াংৎসে এলাকায় দু’দেশের সেনার মধ্যে হাতাহাতি বাধে। দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন সেনা আহত হয়েছে বলে দাবি। তবে গালওয়ানের মতো এ বার প্রাণহানি ঘটেনি। এর আগে, ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে সীমান্ত সংঘাত ঘিরে তেতে রয়েছে ভারত-চীন সম্পর্ক। সেই তিক্ত সম্পর্কের আবহেই গত ৯ ডিসেম্বর তাওয়াংয়ে দু’দেশের সংঘর্ষের ঘটনায় নতুন করে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তলানিতে ঠেকেছে। এ প্রেক্ষাপটে অরুণাচলে সীমান্ত লাগোয়া এলাকা নিয়ে বাড়তি নজর রাখছে ভারত। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন