হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজায় ইমামতি করলেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম। গতকাল মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পান তিনি। মুক্তি পেয়ে কালিয়াকৈরের পাবরিয়াচালা এলাকায় মায়ের জানাজায় উপস্থিত হন।
পরে মায়ের জানাজার নামাজে ইমামতি করেন। এ সময় হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি না খোলায় সেগুলো নিয়েই জানাজার নামাজে ইমামতি করেন তিনি।
এদিকে হাতকড়া পরা আলী আজমের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদ বলেন, মায়ের মৃত্যুর খবরে আলী আজমকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় জানাজার সময়ও তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দেওয়া হয়নি।
জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিয়াকৈর উপজেলা শাখার সভাপতি শাহজাহান মিয়া বলেন, মানবিক দৃষ্টিতে বিষয়টি খুবই দৃষ্টিকটু। তিনি কোনো দাগি আসামি নন বলে শুনেছি। তাই তাকে শুধু হাতকড়া পরিয়ে জানাজায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিতে পারতেন।
স্বজনেরা জানান, বার্ধক্যজনিত কারণে গত রোববার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে আলী আজমের মা সাহেরা বেগম ৬৭ বছর বয়সে মারা যান। শেষবার মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পড়াবেন এ কারণে মায়ের জানাজা পড়তে দেরি করা হয়। তাই আইনজীবীর মাধ্যমে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। কিন্তু ওই দিন প্যারোলে মুক্তির দাফতরিক কাজ শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার ৩ ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তির অনুমতি পান বিএনপির এই নেতা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজাস্থলে উপস্থিত হন আলী আজম। বেলা ১১টায় হয় জানাজা। মায়ের দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন আলী আজম। জানাজার নামাজে অংশ নেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদসহ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা–কর্মীরা।
আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করার পর আমার ভাইকে সকালে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। মায়ের জানাজার নামাজ পড়ানোর সময় তার হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দিতে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ খুলে দেয়নি। জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জানাজায় অংশ নেওয়া মুসল্লিরা।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মোহাম্মদ বজলুর রশিদ বলেন, আলী আজমকে নয়জন পুলিশ সদস্যসহ তার বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা এবং জেল আইন অনুযায়ী তাকে পাঠানো হয়েছিল।
জানা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গত ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় আলী আজমকে। এ মামলায় আলী আজমসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও ১৫০ জনকে।
আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল মান্নান শেখকে মামলাটির বাদী করা হলেও ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঘটনা ও মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেছিলেন, কসম, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখানে আলাউদ্দিন এসআই ছিল। ওই স্যার আমারে বারবার ফোন দিয়া অস্থির কইরা ফেলছে। আমি বলছি, স্যার, আমি দাওয়াতে আছি। আমি দাওয়াতে থাইক্যা মামলা করালাম কীভাবে? আমি ছিলামও না, দেখিও নাই। স্যারেগো আমি কইছিলাম, স্যার, আমারে আপনারা ঝামেলায় ফালাইয়েন না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন