বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

৩০ ডিসেম্বর যুগপৎ’র নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বেশকিছু দাবিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে। ঢাকার বাইরে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি হয়েছে গত ২৪ ডিসেম্বর। তবে রাজধানী ঢাকায় প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। ওইদিন রাজধানীতে পৃথক পৃথকভাবে রাজপথে নামবে জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, ৭ দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলের জোট জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত গণমিছিল করবে বিএনপি, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগরে, গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে, এলডিপি পান্থপথে এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও জামায়াতও একই দিনে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে। যুগপৎ আন্দোলনের এই কর্মসূচি থেকেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে আন্দোলনকারী দলগুলো। কর্মসূচি নির্ধারণে দফায় দফায় বৈঠকও করছে বিএনপি ও অন্যান্য জোটের লিঁয়াজো কমিটির নেতৃবৃন্দ।

বিএনপি ও সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলের মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন সূচনা হতে যাচ্ছে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নবগঠিত ১২ জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির লিঁয়াজো কমিটির সদস্যরা। গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের লিঁয়াজো কমিটির সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও লিঁয়োজো কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এর প্রধান সমন্বয়ক আবুল হাসনাত কায়ুম, গণঅধিকার পরিষদ এর যুগ্ম আহŸায়ক রাশেদ খান প্রমুখ অংশ নেন। ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য দল ও জোটের নেতা এবং লিঁয়াজো কমিটির সঙ্গেও বৈঠক করবে বিএনপি

বৈঠকের ব্যাপারে গণসংহিত আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, যুগপৎ আন্দোলের ভিত্তি হিসাবে একটা যৌথ ঘোষণার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। খুব দ্রæত এটা চূড়ান্ত করে সামনের যুগপৎ আন্দোলন এগিয়ে নেয়া হবে। ৩০ ডিসেম্বর যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালিত হবে। পরবর্তী কর্মসূচিও সেখান থেকে ঘোষণা হবে।

জানা যায়, বিএনপির ১০ দফা দাবি, ২৭ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখাসহ অন্যান্য দল ও জোট ঘোষিত দাবি-দফা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি দাঁড় করানো হবে এবং সেটি জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। সেই ভিত্তির ওপরই মূলত সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে। এছাড়া ৩০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি থেকেই যুগপৎ এর নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা দিতে চান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এজন্য কি ধরণের কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে সে বিষয়েও নানা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন জোট থেকে লংমার্চ, রোড মার্চ, গণতন্ত্র অভিযাত্রা, গণসমাবেশ, গণঅবস্থান, অনশন, বন্দী মুক্তি কর্মসূচি, ঘেরাও, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচির প্রস্তাব আসছে। এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধানের জন্য গতকাল রাতেই বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। আজ আবার বেলা ১টায় নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির লিঁয়াজো কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসবেন। সেখান থেকেই কর্মসূচির খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বুধবার আমরা লিঁয়াজো কমিটির প্রথম মিটিং করেছি। সেখানে যুগপৎ আন্দোলনের ভিত্তি, কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা প্রস্তাব করেছি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, দুঃশাসন, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি এবং মিথ্যা মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকা উচিত। যেগুলো হবে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি। তিনি জানান, বৈঠকে গণসমাবেশ, গণঅবস্থাস, লংমার্চ, রোর্ড মার্চ, গণতন্ত্র অভিযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ৩০ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি সফল করতে আমরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা করছি। প্রত্যেকে সেদিন রাজপথে থেকে সরকারের পতদ্যাতের দাবিতে সোচ্চার হবে। আমরা নয়াপল্টন থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত গণমিছিল করবো। আমাদের অঙ্গসংগঠনগুলো কারা কিভাবে এই কর্মসূচিতে থাকবে, তাদের নেতৃত্বে কে কে থাকবে সেগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। সকলকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শৃঙ্খলা ও শান্তপূর্ণভাবে কর্মসূচি সফল করতে। সেখান থেকে কি কর্মসূচি দেয়া যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহŸায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলের পর আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারসহ অন্যান্য দাবি আদায় করা হবে।
তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। দেশে গণঅভ্যুত্থানের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সুতরাং আমি বলবে, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। পরিষ্কার কথা, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। হতে দেওয়া হবে না। আমরা গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়েছি। সবাই শরিক হবেন। ইনশাআল্লাহ, আমরা খালেদা জিয়া ও অন্যান্য নেতাকে মুক্ত করব।

বিকল্প ধারা বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নূরুল আমিন বেপারী বলেন, এই সরকার কর্তৃত্ববাদী সরকার। তারা এমন কাজ করবে তাদের গণতান্ত্রিকভাবে সরানো যাবে না। তাদের ভিন্ন কৌশলে হটাতে হবে। তারা দিনের ভোট রাতে করে ক্ষমতায় আছে। ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরাতে হলে গণঅভ্যুত্থানের বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে জনগণ জেগে উঠেছে। সারা দেশে বিএনপির যে বিভাগীয় গণসমাবশগুলোতে লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ, সেটাই প্রমাণ করে। এই সরকার রাষ্ট্রকে দলের সঙ্গে একীভূত করে ফেলেছে। এটা হলো এই সরকারের সবচেয়ে বড় ভুল।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন