নাটকীয়ভাবে বগুড়া সদর (বগুড়া ৬) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে ১৪ দলীয় প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর নাম ঘোষণার পর বগুড়ার নির্বাচনী রাজনীতি হঠাৎই ইউটার্ন করেছে।
দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বগুড়া সদর (বগুড়া-৬) এবং কাহালু নন্দীগ্রাম (বগুড়া-৪) আসনের বিএনপি দলীয় এমপি যথাক্রমে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ও মোশারফ হোসেন সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় ওই দু’টি আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত শিডিউল অনুযায়ি আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এই দু’টি আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বগুড়ার রাজনীতির অঙ্গনে বিদ্যমান ধারনা ছিল যে এই দুটি আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী না দিয়ে বগুড়া সদরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর এবং কাহালু নন্দীগ্রামে জাসদ (ইনু) এর প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেনকে সমর্থন দেবে।
এর কারণ হল এই দু’টি আসনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ওমর এবং জাসদ (ইনু) এর জেলা সভাপতি রেজাউল করিম তানসেন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। নুরুল ইসলাম ওমর এমপি পরে সংসদে বিরোধিদলীয় হুইপ নিবাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এই দু’জন দুটি আসনে মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বগুড়া সদর আসন থেকে নির্বাচিত হয়েও বিএনপি মহাসিচব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটানা তিন মাস সংসদ অধিবেশন বর্জন করায় আসনটি শুন্য ঘোষিত হলে এখানে উপনির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টি. জামান নিকেতা অংশ নিয়ে বিএনপি প্রার্থীর কাছে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হন ।
এইসব মুল্যায়নে স্থানীয় পর্যবেক্ষক এবং রাজনৈতিকমহলে ধারণা জন্মে চলতি উপনির্বাচনে বগুড়া সদরে এবং কাহালু নন্দীগ্রামে আওয়ামী লীগ কোন প্রার্থী দেবেনা । তবে রোববার বগুড়া সদরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুর নাম ঘোষণা হলে বগুড়ার নির্বাচনী রাজনীতির সব হিসেবে নিকেশ পাল্টে যায়। বগুড়ার দু’টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না থাকলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে এমন কনসেপ্টেরের প্রেক্ষিতে বগুড়া সদরে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতা সরকার বাদল, পরিববহন ব্যাবসায়ী ও ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আকন্দ, শ্রমিক নেতা সৈয়দ কবীর আহম্মেদ মিঠু এবং সাংবাদিক আরিফ রেহমান সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন । এছাড়া কাহালু নন্দীগ্রাম আসনে সাবেক জামায়াত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা তাইয়েব আলী এবং বহুল আলোচিত হিরো আলম প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন।
তবে বগুড়া সদরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে এমপি প্রার্থী ঘোষেণার পর এখানে আদৌ সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বগুড়া সদর আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা ভোট থেকে সরে যাবেন কিনা ? জানতে চাইলে বিএনপি নেতা সরকার বাদল বলেন, তিনি নির্বাচন করবেন, কোন বাধাই মানবেননা ? বিএনপি তাকে বহিষ্কার করলেও তিনি নির্বাচন করবেন। কেননা তিনি মনে করেন যে বগুড়া সদর আসনটি বিএনপির এবং এটা যে কোন আঙ্গিকেই হোকনা কেন এটা বিএনপির হাতেই থাকা উচিৎ ।
আরেক স্বতন্ত্রপ্রার্থী আব্দুল মান্নান আকন্দও বলেন, নির্বাচনের মাঠ ছাড়ার প্রশ্নই আসেনাা। বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার জন্য জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপুর সাথে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি ।
তবে কাহালু নন্দীগ্রামের ১৪ দলীয় প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন বলেন, ২০১৪, ২০১৮ এবং চলতি উপনির্বাচনে তাকে প্রার্থী মনোনিত করায় তিনি জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি মনে করেন, বগুড়ার দুটি আসনেই নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবেই ভোট গ্রহন সম্পন্ন করবেন।
উল্লেখ্য, এ আসনে মহাজোটের শরিকদল জাতীয় পার্টির প্রাথী হিসেবে শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর হিরো আলম একই সাথে বগুড়া সদর ও কাহালু নন্দীগ্রাম দুটি আাসনেই নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন