এ সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছেন না বিএনপির কারাবন্দি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষের ‘মিস আপিল’ শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী রোববার। সে পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের আইনজীবীগণ হাইকোর্টের দেয়া জামিন নামা (বেইল বন্ড) কারাগারে পৌঁছাবেন নাÑ মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন। ফলে আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত না করলেও অন্তত আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কারামুক্ত হতে পারছেন না বিএনপি’র দুই নেতা।
গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার জাস্টিস জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের কোর্টে সরকারপক্ষের করা আবেদনের শুনানি হয়। শুনানিতে বিএনপি নেতাদের পক্ষীয় আইনজীবীরাও অংশ নেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে কোনো ধরনের আদেশ না দিয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ওইদিন বিষয়টি আপিল বিভাগের কার্য তালিকার ১ নম্বরে থাকবেÑ মর্মে সিদ্ধান্ত দেন আদালত।
জামিন স্থগিত আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর, শেখ মোহামম্মদ মোরশেদ, মেহেদী হাসান চৌধুরী। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাস উদ্দীন আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো: জয়নুল আবেদীন। এ সময় ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রূহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সঙ্গে ছিলেন।
আদালত থেকে বেরিয়ে অ্যাডভোকেট মো: জয়নুল আবেদীন বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গত মঙ্গলবার ৬ মাসের জন্য জামিন দেন হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ। এ আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল বললেন, হাইকোর্টের জামিন আদেশে তারা সংক্ষুব্ধ। যদিও হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালিন আদেশে সরকারপক্ষের সংক্ষুব্ধ হওয়ার কোনো কারণে নেই। অনেকটা নজিরবিহীনভাবে সরকারপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে একটি মিস আপিল করলেন। চেম্বার কোর্ট আপিলের ওপর শুনানির জন্য বুধবার দুপুর ২টায় শুনানির সময় ধার্য করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল প্রথমেই হাইকোর্টের আদেশ স্থগিতের পক্ষে বক্তব্য দেন। আমরা যখন এর জবাব দিতে শুরু করেছিলাম এ অবস্থায় আদালত আমাদের কথা না শুনেই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন আগামী ৮ তারিখ রোববার এটি কার্যতালিকার প্রথমেই থাকবে। আরেকটি আদেশ সাথে সাথে দিয়েছেন। আমরা বলেছি, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে এ সময়ের মধ্যে সাধারণত চেম্বার কোর্ট স্থগিতাদেশ দেন না। যা-ই হোক, আপনার প্রতি (চেম্বার কোর্ট) আমাদের বিনীত অনুরোধ হচ্ছে, জামিন আদেশের ওপর স্টে দেবেন না। তবে হাইকোর্টের আদেশ হাতে পেলেও আগামী ৮ জানুয়ারি শুনানি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো জামিননামা কারাগারে পাঠাব না। এতে এমনিতেই তারা কারামুক্ত হতে পারবেন না। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এর আগে, বিচারিক আদালত ৩ বার জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়ার পর বিচারপতি মো: সেলিম এবং বিচারপতি মো: রিয়াজউদ্দিন খানের ডিভিশন বেঞ্চ গত মঙ্গলবার মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিন মঞ্জুর করেন। সেইসঙ্গে কেন তাদের স্থায়ী জামিন দেয়া হবে নাÑ এই মর্মে রুল জারি করেন।
প্রসঙ্গত: গত ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত ও অর্ধশত আহত হন। সংঘর্ষের পর পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালায়। ঘটনার পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় পৃথক ৪টি চারটি মামলা করে পুলিশ। এতে ২ হাজার ৯৭৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭২৫ জনের। কিন্তু এজাহারে বিএনপি’র দুই কেন্দ্রীয় নেতার নাম ছিল না।
‘ওপরের নির্দেশে’ ওই দুই নেতার বাসায় ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে পৃথক অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুজনকে প্রথমে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে। বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় ১১ ঘণ্টা পর মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে তাদের পল্টন থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে একই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানসহ দুই নেতাকে জামিন দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন