বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বললেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি এ দাবি জানান। তিনি বলেন, হে সাকা পুত্র হুম্মান, তুমি এখান থেকে চলে যাও। এ দেশ তোমার নয়।
চট্টগ্রাম মহানগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। সম্মেলন উদ্বোধন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক। প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তৃতার এক পর্যায়ে ‘নারায়ে তাকরিব’ সেøাগান দিয়ে আলোচনায় চলে আসেন। ওই সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার জনতা তার এই ‘সেøাগানে আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি তুলে জবাব দেন। অবশ্য তার এই শ্লোগান নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন সমালোচনা করলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। উল্লেখ হুম্মাম বিএনপির স্থানীয় কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেশে চলবে না। আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আমরা অনেক দূরে চলে গেছি। এই চট্টগ্রামের কুখ্যাত রাজাকার সাকা চৌধুরীর ছেলে বললো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নাকি সাকার কবরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। হে সাকা পুত্র, তুমি এখান থেকে চলে যাও। এ দেশ তোমার না। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের চাপ সত্তে¡ও সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। তিনি (শামসুদ্দিন চৌধুরী) নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি যে সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হবে।
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে মন্তব্য করে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে এনে এখানে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন জিয়া। পরে এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়া ২৫ বছর ধরে এ দেশে ধর্মান্ধতা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আরো বলেন, এ দেশ কাজী নজরুল ইসলামের, লালনের। এ দেশে সা¤প্রদায়িকতার কোনো জায়গা থাকতে পারে না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন পাকিস্তান ভালো ছিল। সামনে নির্বাচন। সে শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে, যারা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রধর্ম সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম থাকতে পারে না। কয়েক দিন আগে আইনমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম সরানো হবে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি। অপেক্ষায় আছি, কবে বাহাত্তরের সংবিধান পুরোপুরি কায়েম হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সমাজ নানাভাবে শোষিত, বঞ্চিত ও প্রতারিত হয়ে আসছে। আজকের এ রোডমার্চ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদিবাসী সমাজ ও সংখ্যালঘু সমাজ তাদের স্বাধিকার, অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সমাজ মিলিতভাবে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। আমাদের জীবনধারণের ওপর যে বঞ্চনা ও শোষণ নিপীড়ন চলছে, ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তা অবসানের লক্ষ্যে আমরা অগ্রসর হবো।
চট্টগ্রামসহ সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোড মার্চ গতকাল ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে আজ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়ে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে তার কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করবে। রোড মার্চের দাবিসমূহ হচ্ছে- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভ‚মি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভ‚মি কমিশন গঠন ইত্যাদি।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি পরিমল চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সভাপতিমÐলীর সদস্য জিনবোধি ভিক্ষু, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শুভ্র দেব কর, সংগঠনের চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি ইন্দু নন্দন দত্ত, দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড় প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন