এতোদিন পর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী বুঝলেন ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির জোট করা ভুল ছিল! বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মরহুম শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ৪ বছর আগে ‘ড. কামাল হোসেনকে হায়ার করে নের্তৃত্বে বসানো বিএনপির ভুল; মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে জোট করা উচিত ছিল’ এই বক্তব্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলেন। তখন কাদের সিদ্দিকীরা নীরব ছিলেন। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এসে কাদের সিদ্দিকী বুঝে গেছেন ওই জোট গঠন ভুল ছিল। নিজের ভুল বুঝতে ৫ বছর লেগে গেল!
গতকাল রোববার রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি (জেপি) ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অধিবেশনে বক্তৃতায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোট করা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল। এতে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও ছিল। ড. কামালের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা গণভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর সংলাপে অংশ গ্রহণ করেন। কাদের সিদ্দিকী ঋণ খেলাপির কারণে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেননি। তবে তিনি তার কন্যাকে ধানের শীষ মার্কায় প্রার্থী করেন। বিতর্কিত ওই নির্বাচনের পর কাদের সিদ্দিকীর খুব একটা তৎপরতা দেখা যায়নি। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে সপরিবার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কাদের সিদ্দিকী। এরপরই তার ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ভিড়ে যাওয়ার গুঞ্জন শুরু হয়। এর মধ্যেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক জেপির সম্মেলনে যোগ দেন। কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমার বড় বোন নেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় বোনের সেই অভাব পূরণ করেছেন। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকতে হবে।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর দিল্লিতে যখন প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে দেখেন, উনি আমাকে ভাই বলে ডেকেছিলেন। সেদিন যে গিয়েছিলাম, কথা হলো। সেখানেও বলেছেন, তোমাকে ভাই বলে ডেকেছি। আমি আজীবন ভাইয়ের মর্যাদা রক্ষা করব। তিনি বলেন, আমি ওরকম কাঁচা না। আমাকে যিনি ভাই বলে ডেকে তার মর্যাদা রক্ষা করতে পারেন, আমিও তার (বোন) মর্যাদা রক্ষা করতে পারি, তার জন্য জীবন দিতে পারি।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আমির হোসেন আমু, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, দিলীপ বড়ুয়া, শেখ শহিদুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কাউন্সিলে কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে এখন যে অত্যাচার ও লটুপাট চালাচ্ছে;বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই লুটপাট-সন্ত্রাস শতভাগ বেড়ে যাবে। তিনি বলেছিলেন, গণপরিবহন বন্ধ ও সমাবেশ করতে বাধা দিয়ে বিএনপিকে শক্তিশালী করা হয়েছে। এতে বিএনপির ক্ষতির চেয়ে লাভ হয়েছে বেশি। গণপরিবহন বন্ধ না থাকলে বিএনপি মারামারি করত দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার বোন (শেখ হাসিনা) ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপি নিজেরা নিজেরা মারামারি করবে বলে আমার মনে হয় না। দেশে যদি পাঁচটা সমান মর্যাদা ও শক্তিসম্পন্ন দল থাকত এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য থাকত, তাহলে শত শত কোটি টাকা চুরি করা সম্ভব হতো না। আজ আওয়ামী লীগ চুরি করছে, কাল বিএনপি করবে। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ভারসাম্যের দরকার।
জেএসডির কাউন্সিলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইমসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। তবে কাদের সিদ্দিকী কথা বলার সময় তিনি মঞ্চে ছিলেন না। আগেই বক্তব্য দিয়ে চলে যান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন কাদের সিদ্দিকী। ’৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ করেন। ’৭৭ সালে স্বইচ্ছায় ভারতে নির্বাসনে যান। দীর্ঘদিন ভারতে থাকার পর ১৯৯০ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন