শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চূড়ান্ত আন্দোলনের একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে বিএনপিতে আলোচনা

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিভাগীয় সমাবেশ, যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল সফল করার পর এখন পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে ভাবছে বিএনপি। ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সরকার পতনের চলমান আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় দলটি। এলক্ষ্যে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সমমনা রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন, বৈঠক করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আন্দোলনকে গতিশীল ও বেগবান করতে এসব বৈঠকে চাওয়া হচ্ছে পরামর্শ, আন্দোলন পরিচালনায় কোথাও ভুল হলে তাও ধরিয়ে দিতে বলা হচ্ছে তাদেরকে। এছাড়া কেন্দ্র ঘোষিত যে কোন কর্মসূচি সফল করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও ত্যাগ স্বীকার করতে নেতাদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সবকটি কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগম, জনগণের সম্পৃক্ততা, সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সফল করায় উজ্জীবিত বিএনপির শীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতারা। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাব, আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এখন ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে এই উদ্দীপনা ধরে রাখতে চায় বিএনপি। এলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সংগঠনের নেতা এবং বিএনপির নীতিনির্ধারণী থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাদের কাছ থেকে চাওয়া হচ্ছে পরামর্শ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী দিনে কর্মসূচি নির্ধারণ, নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখার কৌশল, আন্দোলন নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি জানতে বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ৪ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলার সভাপতি/আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/ সদস্য সচিব, সিনিয়র সহ-সভাপতি/সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৩ জন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৭ জন এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কোন কোন জেলার সভায় গুরুত্বপূর্ণ উপজেলার নেতাদেরকেও রাখা হয়, আর সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকও এসব সভায় অংশ নেন। এছাড়া পৃথকভাবে বেশকিছু জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ফোনেও কথা বলেন তারেক রহমান।

বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক জেলা বিএনপির নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৃণমূলের নেতাদের কাছ থেকে জানতে চান তারা (জেলা নেতৃবৃন্দ) চলমান আন্দোলন গতিশীল করতে কি ধরণের কর্মসূচি চান। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কি কর্মসূচি প্রত্যাশা করছে, সাধারণ মানুষ কি ধরণের আন্দোলন চান। আন্দোলন চালিয়ে নিতে সারাদেশে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনায় তাদের মানসিক অবস্থা কি? তারা ভেঙে পড়েছেন কিনা?

তারা বলেন, জেলার নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলা, মামলা, গ্রেফতারে নেতাকর্মীরা আর কোন পরোয়া করে না। কারণ গত ১৫ বছর ধরে এটিতে সকলে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই এটি করে কারো মনোবল ভাঙতে পারবে না। তবে চলমান কর্মসূচির মাধ্যমে দলে, নেতাকর্মীদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে যে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে সেটি অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়। এজন্য ধীরে ধীরে কঠোর কর্মসূচির পরামর্শ দেন জেলা নেতৃবৃন্দ। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- উপজেলা-জেলা পর্যাযে গণঅবস্থান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও, দুর্নীতি পরায়ন অফিস ও গণবিরোধী কর্মকাণ্ড করে এমন অফিস ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে রোড মার্চ, এক জেলা থেকে আরেক জেলা, এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় রোড মার্চ, লং মার্চ, ঢাকায় মহাসমাবেশ, হরতালের মতো কর্মসূচির পরমর্শ দেন তারা।

পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, আমরা পরামর্শ দিয়েছি আন্দোলনের যে গতি এসেছে এটা যেন কমে না যায়। এটিকে আরো বেগবান করতে হবে। নতুন নতুন কর্মসূচি যেমন- রোড মার্চ, লং মার্চ, ঢাকায় যুগপৎভাবে ভিন্ন ভিন্ন দলের পৃথক পৃথকভাবে মহাসমাবেশ করার কথা বলেছি।
তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের মামলা-হামলা নিয়ে জানতে চেয়েছেন, আমরা বলেছি এগুলো আমাদের জন্য কোন বিষয় না। হামলা, মামলা, গ্রেফতারে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমাদের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
আজাদ বলেন, আমাদের নেতারা সকলেই বলেছেন বর্তমান সরকারের অধীনে এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনভাবেই নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। এটি করা হলে আমাদের রাজনৈতিক আত্মহত্যা হবে।

যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. সাবেরুল হক সাবু বলেন, আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ভাবনা নিয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমরা বলেছি, এখন বিএনপির কর্মসূচিতে শুধু নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছে। যাদেরকে আমরা এর আগে কখনো কর্মসূচিতে দেখিনি, ভাবিওনি যাবে তারা এখন জেলা, জেলার বাইরের কর্মসূচিতে নিজের খরচে যাচ্ছে। সামনের দিনে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখলে আরও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে।

তিনি বলেন, আমাদের ২৭ দফা রূপরেখা মানুষ সাধুবাদ জানাচ্ছে। বিশেষ করে ২বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, এটি সকলেই খুব ভালোভাবে নিচ্ছে। তাই আমরা প্রস্তাব করেছি, এই ২৭ দফা নিয়ে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া, হাট, পথ সভা, রোড মার্চ করার পরামর্শ দিয়েছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বৈঠকগুলোতে সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাদের বক্তব্য শুনেছেন। তিনি জানিয়েছেন, চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে, এখন পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। এই আন্দোলন সফল করতে সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে থাকতে তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। কেন্দ্র থেকে যে কর্মসূচিই ঘোষণা করা হবে সেগুলো সফল করতে হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন হবে। ওইদিন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে কর্মসূচি নির্ধারণ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে, সোমবার স্থায়ী কমিটির সভা আছে সেখানে কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া লিয়াজে কমিটির পক্ষ থেকে নতুন নতুন আরো মিত্রদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
আব্দুল আউয়াল আকন্দ ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩৯ এএম says : 0
দশ দফা আর সাতাইশ দফা দিয়ে লাভ নেই - আমজনতার দাবী হলো- এক দফা এক দাবী স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ!
Total Reply(0)
MD Jahidul Alam Jahid ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩৯ এএম says : 0
ফায়সালা হবে আন্দোলনের মাধ্যমেই, ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Rashed R K ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৪০ এএম says : 0
আওয়ামী লীগ সরকার কে বলছি সকল কুকর্মের ফল একদিন ভোগ করতে হবে বাংলার জমিনে আজ হয়তো বা কাল সেদিন আর বেশি দূরে নয় ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
MD Tahmid Shana ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৪০ এএম says : 0
ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের হবে
Total Reply(0)
Kalu ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:৩৩ এএম says : 0
আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে সফলতা আসবে।
Total Reply(0)
Bashar ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৫২ এএম says : 0
আন্দোলনে কর্মীরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত কিন্তু প্রতিটি উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রে কিছু নেতা আওয়ামী লেয়াজুর কারনে চুডান্ত আন্দোলন ব্যার্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।তাই সময় থাকতে আওয়ামী লেয়াজু নেতাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়াটা জরুরি।
Total Reply(0)
Bashar ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৫৩ এএম says : 0
আন্দোলনে কর্মীরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত কিন্তু প্রতিটি উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্রে কিছু নেতা আওয়ামী লেয়াজুর কারনে চুডান্ত আন্দোলন ব্যার্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।তাই সময় থাকতে আওয়ামী লেয়াজু নেতাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়াটা জরুরি।
Total Reply(0)
Kalu ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১০:৩৩ এএম says : 0
আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে সফলতা আসবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন