বাংলাদেশের ওপর আরো বিদেশী নিষেধাজ্ঞা আসার আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের যে অবস্থা তাতে নিষেধাজ্ঞা আসবে সেটা স্বাভাবিক। কারণ এখানে ভালো কিছু হচ্ছে না। গুম খুন করা হচ্ছে। দূতাবাসের কাজ হলো জনগণের পক্ষে কাজ করা। নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর কাজ তাদের না। আগামী দিনে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ যত কালো আইন আছে সবই বাতিল করা হবে বলে তিনি জানান।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে রুপরেখা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ২৭ দফা রুপরেখা বিএনপির আন্দোলনের অংশ মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যিনি এ ধরনের রুপরেখা দিতে পারেন তাকে বলা হয় ‘স্টেটসম্যান‘। আর তারেক রহমান সেই কাজটিই করেছেন। তার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে তিনি বিশ্ব দরবারে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের হাত থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করতে হলে একটা ট্র্যাকে আনতে হবে। সেজন্যই তারেক রহমান রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয় যারা শিক্ষিত ও দক্ষ, অভিজ্ঞ তাদের সমন্বয়ে আপার হাউজ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সাথে হতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, একটা কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য স্বাস্থ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই খাতে ১ জিডিপির ব্যবহার নেই বললেই চলে। কারণ এখানে সরকারের দুর্নীতি বেশি। ফলে দেশের মানুষের নিজের টাকা খরচ করেই চিকিৎসা নিতে হয়। যা আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ। এসব বিষয়ে সারাদেশে সেমিনার করা জরুরি। কারণ একটি পরিবারকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হলে তার প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়। একটি পরিবারকে যদি ৫ হাজার টাকা সেভ করা যায় ওই পরিবারের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাবে। সেই টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখায় খরচ করতে পারবে। দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারবে।
তিনি বলেন, আজকে দেশে যা হচ্ছে তা লুট। মেগা প্রজেক্ট করা হচ্ছে টাকা লুটে বিদেশে পাচারের জন্য। একটা গাড়ি আছে আরেকটা কিভাবে কেনা যায় সেটা করে। আজকে ৬৫ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। তাদের সময় কোথায়? তারা কি আইন প্রণয়ন করছে?
আমীর খসরু বলেন, আমাদেরকে ২৭ দফা দেশের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে ২৭ দফার প্রয়োজনীয়তা। কারণ তারা জানতে চাইছে যে, শেখ হাসিনা চলে গেলে কী হবে? সেই জন্যই কিন্তু আমরা ২৭ দফা রুপরেখা দিয়েছি। এই দফাগুলো হলো আমাদের আন্দোলনের অংশ। আমাদের আন্দোলনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর মাধ্যমে আমরা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।
তিনি বলেন, এগুলো বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশ সঠিক পথে চলবেনা। রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এই ২৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে তো স্মার্ট বাংলাদেশের নামে স্মার্ট ভোট চুরি, শেয়ারবাজার লুট হবে। ১০ লাখ কোটি টাকার মতো বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের কথা আমরা বলছিনা।
তিনি বলেন, আজকে বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। দেশকে গভীর গর্ত থেকে তুলে আনতে হলে ২৭ দফার বিকল্প নেই। এগুলো যারা দিতে পারেন তাদেরকে বলা হয় স্টেটসম্যান। এই রুপরেখা ঘোষণা দিয়ে তিনি নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতাকে বিশ্বের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। আপামর জনসাধারণের দাবিগুলো এই রুপরেখায় তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র এখন ভীষণ সংকটে আছে। লাইফ সাপোর্টে আছে বললে অত্যুক্তি হবেনা। এই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। মাঝে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে তা আরো গতিময় হয়েছে। দেশটা এখন একটা রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই রাষ্ট্রকে ফেরত আনতে হবে। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারেনা। কারণ সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সেটা বলা যাবেনা। বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা দেশের অসহায় মানুষের মুক্তির সনদ।
ড্যাবের সভাপতি প্রফেসর ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, এই সরকার কেমন সেটা তো ১৫ বছর ধরে দেখছি। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। পেশার নিরাপত্তা নেই। স্বাস্থখাতে চলছে হরিলুট। অন্যদিকে সরকার উন্নয়নের কথা বলছে। কিন্তু একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য খাতের বার্ষিক ব্যয় কমছে। যা পাশের দেশের তুলনায় অনেক কম। সুতরাং, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সহ অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা দিয়েছে তার অত্যন্ত জনপ্রিয় উদ্যোগ।
ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাবের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের সভাপতিত্বে ও উত্তরের মহাসচিব ডা. এএসএম মো. মাসুম বিল্লাহর পরিচালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. কামরুল আহসান। বক্তব্য রাখেন- ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন