জাপান সরকার ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে নির্গত ১০ লাখ টনের বেশি দূষিত পানি সমুদ্রে ছাড়াতে চলেছে। সম্প্রতি দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এই ঘোষণায় জাপানের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এখবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, আগে থেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এসেছিল জাপানের মৎস্যজীবীরা। কিন্তু এসব বিরোধিতা উপেক্ষা করে পারমাণবিক চুল্লি থেকে নির্গত পানি সমুদ্রে ছাড়ার কথা ঘোষণা করলো কর্তৃপক্ষ। পরমাণু কেন্দ্রে এই পানি চুল্লিকে ঠান্ডা রাখতে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারের পর তা নিরাপদে সংগ্রহ করে রাখা হয় পরমাণু কেন্দ্রের মধ্যেই। পরমাণু চুল্লির এই পানি দীর্ঘদিন সমুদ্রে ছাড়া হয়নি। আবার এই প্রক্রিয়া শেষ করতে কয়েক দশক লেগে যাবে।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে জাপানের ঘরে-বাইরে। তবে জাপান সরকার সবাইকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই বর্জ্য পানি থেকে সব রকম তেজস্ক্রিয় উপাদান সরানো হয়েছে। এই পানিতে কারও কোনও ক্ষতি হবে না।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে, গোটা বিশ্বে যেভাবে পরমাণু কেন্দ্রের পানি সমুদ্রে ছাড়া হয়, এটাও সেই প্রক্রিয়া। জাপানের এই প্রক্রিয়াকে ইতোমধ্যে ছাড়পত্র দিয়েছে আইএইএ।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা জানান, এটি একটি ‘অনিবার্য প্রক্রিয়া’। পানি ছাড়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ রূপে নিরাপদ প্রমাণ হওয়ায় এবং সম্ভাব্য সব রকম ক্ষতি রোধ করা যাবে এটা নিশ্চিত করার পরই তা শুরু করা হবে।
জাপানের এই পরমাণু কেন্দ্রটি ২০১১ সালের সুনামির পর থেকে বিকল হয়ে যায়। পরমাণু কেন্দ্রের ট্যাঙ্কগুলোতে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন এমন পানি জমে আছে। এই পানি নিয়ন্ত্রিতভাবে মুক্ত না করলে পারমাণবিক কেন্দ্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
নিষ্কাশন করবে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বলছে, জাপানের এ প্রস্তাব নিরাপদ, তবে প্রতিবেশী দেশগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
২০১১ সালের ফুকুশিমা বিপর্যয় ছিল চেরনোবিলের পর সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা।
জাপানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিরোকাজু মাতসুনো বলছেন, এই বসন্ত বা গ্রীষ্মের মধ্যে কোনো এক সময় এই নিষ্কাশন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। আমরা এখন আইএইএ’র বিস্তারিত একটি প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি।
প্রতিদিন প্ল্যান্টটি ১০০ কিউবিক মিটার দূষিত পানি উৎপাদন করে, যা ভূগর্ভস্থ পানি, সমুদ্রের পানি এবং চুল্লিগুলোকে ঠান্ডা রাখতে ব্যবহৃত পানির সংমিশ্রণ। তারপর তা ফিল্টার করে ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হয়।
এই ট্যাঙ্কের ধারণ ক্ষমতা ১.৩ মিলিয়ন ঘনমিটারের বেশি।
বেশিরভাগ রেডিওঅ্যাকটিভ আইসোটোপের জন্য এই পাানি ফিল্টার করা হয়েছে, তবে ট্রিটিয়ামের স্তরটি জাতীয় মানদণ্ডের ওপরে রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ওই কেন্দ্রের অপারেটর টেপকো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রিটিয়াম পানি থেকে অপসারণ করা খুবই কঠিন এবং এটি শুধুমাত্র বড় মাত্রায় মানুষের জন্য ক্ষতিকর।
২০২১ সালে জাপান সরকার অনুমোদিত এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে প্রতিবেশী দেশ এবং স্থানীয় জেলেরা।
দ্য প্যাসিফিক আয়ারল্যান্ডস ফোরাম প্রস্তাবে স্বচ্ছতার অভাবের জন্য জাপানের সমালোচনা করেছে। এই ফোরামের সেক্রেটারি জেনারেল হেনরি পুনা অভিযোগ করেছেন, ২০২১ সালে শীর্ষ সম্মেলনে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল জাপান তা ভঙ্গ করছে।
২০১১ সালে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। এরপর বিশাল সুনামি আঘাত হানে দেশটিতে।
সুনামির ঢেউ ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আঘাত হানে, তিনটি চুল্লি প্লাবিত করে এবং একটি বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়। সূত্র : বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন