নারী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসল এবারই প্রথম। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়াকে বলা হচ্ছিল অন্যতম ফেবারিট, আর বাংলাদেশ ডার্ক হর্স। আসরের গোড়াপত্তনও হলো এই দুই অসম দলের লড়াই দিয়ে। প্রথম ম্যাচের অংশ হয়েই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখিয়ে ফেলে বাংলার যুবা বাঘিনীরা। তবে ইতিহাসের বুকে নাম লেখানোর আনন্দ পূর্ণতা পেল অজিদের গুঁড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে। দক্ষিণ আফ্রিকার বেনোনিতে অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ১৩০ লক্ষ্যটাকে একেবারে সহজ বলা যাবে না। আবার লক্ষ্য তাড়াটা শুরু হলো ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট খুইয়ে।
তবে বাঘিনীদের দারুণ আগ্রাসী ব্যাটিংই পার্থক্য গড়ে দিলো শেষ পর্যন্ত! বাংলাদেশ ৭ উইকেট আর ১৩ বল হাতে রেখেই পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে। উইলোমুর পার্কে রোমাঞ্চকর এই ম্যাচে শেষ দিকে যদি দুটি ক্যাচ অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের হাত না ফসকালে তাহলে হয়তো বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য কাজটা কঠিনই হতো। ম্যাচের ১৭তম ওভারের প্রথম বলে কাভারে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান সুমাইয়া, বাংলাদেশের রান তখন ৩ উইকেটে ১১১। শেষ পর্যন্ত ৩১ রান করে বাংলাদেশকে জিতিয়ে ফেরা সুমাইয়ার তখনও ছিলেন ২১ রানে। এর ঠিক ছয় বল আবার জীবন পায় আরেক ব্যাটার স্বর্নাও! এবার ক্যাচ মিস হলো মিড অনে। তবে এরপরই ঝড় তুলেছেন এই দুই ব্যাটার। ১৮তম ওভারের প্রথম বলে যেখানে স্বর্নার ক্যাচ মিস হলো, পরের বলে চার হাঁকালেন তিনি। এরপর অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বলে ফ্রন্ট ফুটে গিয়ে যে ছক্কা মারলেন তা দেখে ধারাভাষ্যকার বলে উঠলেনÑ ‘যে কোনো ধরনের ক্রিকেটেই এটা বিশাল ছয়’! তাতেই উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচটা চোখের পলকেই বাংলাদেশের পকেটে!
ওভারের শুরুতেও বাংলাদেশের সমীকরণ ছিল ১৮ বলে ১৬, তিন বল পর সেটি হয়ে গেল ১৫ বলে ৫! হাতছানি দিয়ে ডাকছিল ইতিহাস। মেয়েদের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে নেমেই প্রথম জয়ের রোমাঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে সুমাইয়া আর অপেক্ষায় থাকতে তখন রাজি নন! স্ট্রাইক পেয়ে ২ রান নিলেন, পরের বলেই লেগ গ্লান্সে দারুণ চার! বাংলাদেশের মেয়েদের উল্লাস তখন দেখে কে!
রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই মিষ্টির উইকেট হারানর পর দিলারা ও আফিয়া মিলে ৬৬ রানের জুটি গড়েন। তবে দুইজনই ফেরেন একাদশ ওভারের প্রথম ও শেষ বলে। ম্যাচসেরা দিলারা করেন ৪০ রান আর আফিয়ার সংগ্রহ ছিল ২৪। অন্যদিকে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জেতানো স্বর্নার রান ২৩।
দিনের শুরুটাই হয়েছিল বাংলাদেশের উল্লাসে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়াকে শুরুতেই জোড়া ধাক্কা অধিনায়ক দিশা বিশ্বাসের। ইনিংসের দ্বিতীয় এবং দিশার প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই দলীয় ৭ রানে এক ওপেনার কেইট পেলকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের চতুর্থ ওভারে দিশা বোল্ড করে দেন আরেক অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার প্যারিস বৌডলারকেও। অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ২২। এরপর তৃতীয় উইকেটে ক্লেয়ার মুর ও এলা হ্যাওয়ার্ডের ৭৯ বলে ৭৬ রানের জুটি গড়েন! ৫১ বলে ৫২ রান কর মুর আউট হলেন রাবেয়া খানের বলে, তাতেই ঘুরে গেল ইনিংসের মোড়।
১৮তম ওভারের শেষ বলে মারুফার ফেরালেন ৩৫ রান করা অস্ট্রেলিয়ার সেট ব্যাটার এলা হ্যাওয়ার্ডকে। শেষ দিকে অ্যামি স্মিথ ১৬ আর অধিনায়ক রিস ম্যাককেনার ১২ রানের দুই ক্যামিওতে ১৩০ রান নিয়ে ইনিংস শেষ করে অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ নারী অনূর্ধ্ব-১৯ দল এবারের বিশ্বকাপের অফিসিয়াল দুই প্রস্তুতি ম্যাচে হারিয়েছিল ভারত ও স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তখনই বোঝা যাচ্ছিল অভিষেক আসরে দারুণ কিছু করতে যাচ্ছে যবা বাঘিনীরা। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা তো বাংলাদেশের জন্য দারুণ পয়া। এই মাটিতেই ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আকবর আলী-তৌহিদ হৃদয়রা প্রথম বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য জেতেন কোনো বৈশ্বিক আসর। এবার কি তাহলে দিশা-সুমাইয়াদের পালা?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন