নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী বলেছেন, আমার বাবা ১৯৭৯ সালে জাতীয় নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু ব্যালট বাক্স দিনের বেলা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল থানা গুলোতে। এখন অনেকে বলে রাতের ভোট। কিসের রাতের ভোট? দিনের বেলাইতো আপনারা ছিনতাই করেছিলেন ভোট। দিনের বেলাইতো ভোট নিয়ে আপনারা থানা থেকে ঘোষণা দিয়েছেন। কে আপনাদের নির্বাচিত হবে ধানের শীষে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন আবার এ সমস্ত কথা কেন বলেন?
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন অনেক জনপ্রিয়। হাজারো কাজ করেছে। যদি এত কাজ দেখে মা-বোনেরা ভোট না দেন। কি জবাব দিবেন জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কি জবাব দিবেন আল্লার কাছে। গতকাল শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৯ টার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের উপজেলা পাবলিক হল চত্ত্বরে লোক সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন ২০২৩ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলীয় নেতাকর্মিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা যারা দল করি আমরা সবাই শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা জানি। কিন্ত আমরা অনেক সময় বলিনা। এই বলার কাজটা আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এত কিছু করার পরও আমাদের বিরুদ্ধে দেশ বিদেশে যে ষড়যন্ত্র। সে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে আপনাকে-আমাকে সকলকে। এই ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার বড় একটি হাতিয়ার হলো সংস্কৃতি। এক সাগর রক্তে বিনিময়ে গানটি গাইলে শরীর এখনো শিউরে উঠে। সাংস্কৃতিক রেভুলেশন আমাদের অনেকটা কমে গিয়েছে। সংস্কৃতির বিকল্প আমাদের নেই।
আইভী বলেন. এই গ্রাম বাংলায় একতারা বাজাইওনা দোতারা বাজাইও না গানটা শুনুন। হিন্দু,বোদ্ধা,খ্রিস্টান,মুসলমান আমরা সবাই গান গাইতাম। এই জিনিস গুলোকে আমাদের ফিরিয়ে আনতে হলে ছাত্রলীগ,যুবলীগকে প্রচন্ড ভাবে কাজ করতে হবে। টাকা টাকা চিন্তা করলে কিছুই দিতে পারবেননা। না দলকে না দেশকে না কাউকে। রুখে যেমন দাঁড়াতে হবে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে তদ্রুপ ভাবে অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তদ্রুপ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। নৌকার বিরুদ্ধে যারা কথা বলে, এই নৌকাতো আজকের নৌকা না। এই নৌকাকে ডোবানো এত সহজ নয়। নূহ (আঃ) এর নৌকা।
তিনি বলেন,অনেকে জয় বাংলা বলতে চায়না? কেন বলতে চায়না। কারণ তারা স্বাধীনতা বিশ্বাস করেনা,বিশ্বাস করেনা মুক্তিযুদ্ধকে,বিশ্বাস করেনা বঙ্গবন্ধুকে। এখনো তারা পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে। পাকিস্তানের দোসররাই জয় বাংলা স্লোগান বলতে চাইনা। কারণ জয় বাংলা স্লোগান আপনার ভিতর যে স্পিরিট আসবে, যে সাহস আসবে, যে অনুভূতি আসবে। সেটা অন্য কোন স্লোগানে আসেনা। সুতারাং এই স্লোগান দিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, এমন কোন ডিস্ট্রিক নেই যেখানে এমপি মহোদয়রা কাজ করে নাই। এমন কোন উপজেলা নেই যেখানে উপজেলা চেয়ারম্যানরা কাজ করে নাই। তাহলে কেন এই এন্টি সেন্টিমেন্ট, এন্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্ট। কারণ আমাদের বিরুদ্ধে সব সময়ই ছিল ইন্ট্রারন্যাশনাল ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনা যে সাহসী প্রদক্ষেপ নিয়েছে। উনি কাউকে পরোয়া করনো আল্লাহ ছাড়া। উনি চায় শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করার জন্য। কতিপয় মানুষের এটা সহ্য হয়না। সহ্য হয়না বলেই দলের প্রতি এত ষড়যন্ত্র।
মেয়র আইভী বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস নিয়েই রাজনীতিতে এসেছি। আমরা কেন জানি বাঙালির আবহমান ঐতিহ্য থেকে দূরে যাচ্ছি। আমরা মনে করি পাশ কাটিয়ে অল্প কিছু করেই যেন আল্লাহ কে পেয়ে যাব। আল্লাহ কে পাওয়া এত সোজা কথা নয়। আল্লাহ কে পেতে হলে মানুষকে ভালোবাসতে হবে,মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। আর যে মানুষের কল্যাণে কাজ করে সেই তার আল্লাহ কে পায়, সে তার খোদাকে পায়। মানুষকে সেবা করার মাধ্যম হলো রাজনীতি। রাজনীতি এমন একটা জিনিস যেখানে আপনি আপনার দেশের জন্য কাজ করতে পারেন,মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন,আপনার এলাকার জন্য কাজ করতে পারেন। সেই রাজনীতি হোতে হবে সঠিক রাজনীতি।
এর আগে, একই দিন বিকেল ৪টার দিকে লোক সাংস্কৃতিক উৎসব উদযাপন পরিষদ বেগমগঞ্জ শাখার উদ্যোগে উপজেলার পাবলিক হল চত্ত্বরে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন নোয়াখালী ৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব অধ্যাপক ডা.এ কিউ এম সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নোয়াখালী ২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, নোয়াখালী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়রম্যান এবিএম জাফর উল্যাহ, বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহনাজ বেগম, বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ইয়াসীর আরফাত প্রমূখ। লোক সাংস্কৃতিক উৎসবে বক্তারা বলেন, জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে বাঙ্গালির হৃদয়ের স্পন্দন লোক সাংস্কৃতির ভুমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উক্ত উৎসবে লোক সংঙ্গীত শিল্পীদের পরিবেশনায় বিভিন্ন গান পরিবেশন করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন