বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায় করাটাই আমাদের মূলত প্রথম দফা। কারণ যেভাবে দেশ চলছে এভাবে চলতে পারেনা। চাঁপাবাজি করে জনগণকে দমিয়ে রাখতে পারবেনা। কোনো স্বৈরাচার সরকার আপোসে ক্ষমতা ছেড়ে যায় না। তাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর বিকল্প নেই। অতীতে যেমন ছাত্র জনতা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদকে হটিয়েছে। তেমনই এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় নেবে।
গতকাল শনিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়েজিত “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, বহুদলীয় গণতন্ত্র ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান” শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, জিয়াউর রহমান নিজে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে প্রথমে বিদ্রোহ করেন। তার নেতৃত্বে দেশবাসী মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। কিন্তু আজকের হাইব্রিড সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের চর হিসেবে পরিচিত করাতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ বিদেশি গণমাধ্যমে এবং বিভিন্ন লেখকের বইয়ে জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটাকে বিকৃত করছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ভুল ইতিহাস শেখাচ্ছে। সত্য কিন্তু কখনো চাপা থাকেনা। ইতিহাস একদিন প্রতিষ্ঠিত হবেই। আওয়ামী লীগের এই ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে সোচ্চার ও প্রতিবাদ করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে দাবি করে। অন্যদিকে বিএনপি হলো মুক্তিযোদ্ধাদের দল। আওয়ামী লীগে কোনো খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা নেই। আমাদের দলে এখনো শাহজাহান ওমরের মতো খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছেন। এগুলো তো জীবন্ত ইতিহাস। খন্দকার মোশাররফ বলেন, একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য জিয়াউর রহমান মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ শুরু করেন, গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি খাদ্য উৎপাদন করে বিদেশে চাল রপ্তানি করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর তিনি শাসন করেছেন। এমন কোনো খাত নেই যেখানে জিয়াউর রহমানের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রণয়ন করেন। তার ঘোষিত ১৯ দফা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০‘ এর আলোকে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা ঘোষণা দিয়েছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, আজকে দেশে গণতন্ত্র নেই। বিএনপির ৬শ’র বেশি লোক গুম। এক হাজারের বেশি মানুষ খুন। বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে এই সরকার একটি জনবিচ্ছিন্ন সরকার। জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নেই। ১১ লাখ কোটি টাকা লুটে বিদেশে পাচার করেছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানির দাম বেড়েছে। তারা দেশে বিচারব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। দলীয় করণের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। এমতাবস্থায় জনগণ আওয়াজ তুলেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো সংকটের সমাধান হবে না। যারা অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তারা এর পুনর্গঠন করতে পারবে না। তাদেরকে বিদায় না দিলে দেশকে মেরামত করা যাবেনা।
ড্যাবের সভাপতি প্রফেসর ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা নিজ কানে শুনেছি। দেশের অসংখ্য মানুষ শুনেছে। তিনি দুইবার স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সেই ইতিহাস বিকৃত করছে আওয়ামী লীগ। এভাবে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার পর দেশব্যাপী মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হয়নি। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?
ড্যাবের সভাপতি প্রফেসর ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালামের তত্ত¡াবধানে এবং ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুল ও ডা. মেহেদী হাসানের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। ###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন