মু হা ম্ম দ শ ফি কু র র হ মা ন : লাভ বার্ড দেখতে খুব সুন্দর। ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই লাভ বার্ডের নাম শুনেছো। অনেকে হয়তো দেখেছো। লাভ বার্ড বিদেশী পাখি। মূলত এর আবাস স্থান আফ্রিকায়। বিশেষ করে স্পেন, মাদাগাস্কার, আফ্রিকা। পৃথিবীতে নয় জাতের লাভ বার্ড রয়েছে। আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়, লুটিনো, ফিসার, রোজি ফেসড, পিচ ফেসড, চিক মাস্ক ইত্যাদি প্রজাতি। লাভ বার্ডের মাথা, শরীরে বিভিন্ন রকম রঙ হয়। কোনটার মাথা টকটকে লাল। শরীর কড়া হলুদ। লাভ বার্ড পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালোবাসে। শরীরে ময়লা লাগতে দেয় না। এদের লেজের নিচে তেল জাতীয় পদার্থ আছে। যেটা ওরা ঠোট দিয়ে এনে শরীরে লাগিয়ে থাকে। যখন লাভ বার্ড গ্রুমিং (গা খোটাখুটি করে) তখন দেখতে ভালো লাগে। এরা ভীতু প্রকৃতির পাখি। তবে ঠোটে অনেক ধার। ঠোঁট গোলাপি, ধূসর রঙয়ের হয়। অত্যন্ত আকর্ষণীয় এদের ঠোঁট। চোখ দুটি অসম্ভব সুন্দর। খুব মায়াবী, স্বচ্ছ। অন্য রকম আবেদন চোখে খেলা করে। ছেলে লাভ বার্ডের লেজ ভি শেপ এর মত হয়। মেয়ে হলে সেটার লেজ ইউ শেপ এর মতো হয়। শস্যদানা যেমন চিনা, কাউন, সূর্যমুখীর বীজ, গুজি তিল, পোলাউর চালের ধান, গম, তিসি খেতে পছন্দ করে। এসব খাদ্য পরিমানমত মিশাতে হয়। যেটাকে বলে সিড মিক্স। কলমিশাক, সজনে পাতা ও লাভ বার্ড খায়। বাচ্চা লাভ বার্ডের গায়ে রং অনুজ্জল থাকে না। যত বড় হয় তত রঙ উজ্জ্বল হয়। তখন অপরূপ রূপ ধারণ করে। লার্ভ বার্ডের অসুখ-বিসুখ হয় না বললেই চলে। শক্ত শরীরের পাখি। খুব সকালে এবং বিকালে এরা খেতে পছন্দ করে। যদিও খাওয়ার পরিমাণ খুব কম। মজার বিষয় হল মেয়ে লাভ বার্ডের চেয়ে ছেলে লাভ বার্ড দেখতে সুন্দর হয়। মেয়েটার শরীরের কালার উজ্জ্বল হয়। লাভ বার্ডের ছেলে মেয়ে চিনতে পারাটা খুব কঠিন। দেখতে প্রায় একই রকম। আচার আচারন, ভেন্ট পরীক্ষা করে চিনতে হয়। সাধারণত লাভ বার্ড একবারে ৫ থেকে ৭টি ডিম পড়ে। মাঝখানে একদিন গ্যাপ দিয়ে থাকে। ডিম পাড়ার ২০/২২ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটে। শীতকালে একটু সময় বেশি লাগতে পারে। বাচ্চাদের মা, বাবা মুখে করে খাবার নিয়ে খাইয়ে দেয়। অনেকগুলো বাচ্চা হা করে থাকে। যেটা মাথা বেশি উঁচু করে হা করতে পারে। সে সবার আগে খাবার পায়। আর এই দৃশ্য দেখতে অসাধারণ লাগে। লাভ বার্ড শান্ত প্রকৃতির পাখি। ঝগড়া ঝাটি কম করে। তবে গলার স্বর অনেক চড়া। তবে সুমধুর। একটানা অনেকক্ষণ ডাকতে পারে। ছেলে এবং মেয়ে লাভ বার্ডের ডাকাডাকিতে কিছুটা ভিন্নতা আছে। লাভ বার্ড খাঁচা নোংরা করে কম। ফলে বাসার মধ্যে ও এদের পালন করা সম্ভব। কম জায়গায় এদেরকে পালন করা যায়। রোদে রাখলে এদের রঙটা তাড়াতাড়ি ফুটে উঠে। বছরে তিনবার ব্রিডিং (ব্রিডিং মানে ডিম বাচ্চা ফুটানো) ভাল। এক বছরের কম বয়সী লাভ বার্ড ব্রিডিং করা অনুচিত। বাচ্চা যখন নিজে নিজে খেতে পারবে। তখন এদেরকে আলাদা খাচায় নিতে হবে। লাভ বার্ডের মেইল ফিমেইল মিললে এদের মধ্যে অসম্ভব ভালোবাসা দেখা যায়। এরা একে অপরের শরীর খুটে দেয়। ফিমেইল যখন ডিমে তা দেয়। তখন মেইল লাভ বার্ড মুখে খাবার তুলে দেয়। এক অপরকে সাহায্য করে। শীতকালে শরীরের সাথে শরীর লাগিয়ে ঘুমায়। লাভ বার্ডরা একা থাকতে পছন্দ করে। নিরিবিলি পরিবেশ ওদের পছন্দ। জাত ভেদে লাভ বার্ডের দাম বিভিন্ন রকম। লাভ বার্ডের সর্বনি¤œ বাচ্চার দাম ২০০০। বাংলাদেশে এমন ও লাভ বার্ড আছে যার ২টা (এক পেয়ারের) দাম লক্ষাধিক টাকা।
মির্জা ইসকান্দার। পেশায় চাটার্ড একাউনটেন্ট। তিনি হলেন বাংলাদেশে যারা লাভ বার্ড পালন করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন। তার খামারে ৩৫ জোড়া লাভ বার্ড আছে। যার মধ্যে অনেকগুলোই দুর্লভ প্রজাতির। তিনি বলেন- ছোট্ট সোনা মনিরা অনায়াসে বাসায় লাভ বার্ড পলন করতে পারে। তেমন কোন ঝামেলা নেই। বাসার বারাসন্দায় ও পালন করা সম্ভব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন