বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়েই মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতাবানরা মানবাধিকার লংঘন করছেন। যাদের যত ক্ষমতা তারা তত বেশি মানবাধিকার লংঘন করেন। কমিশন যেন এই ক্ষমতাবানদের ব্যাপারে ভীত না হয়। যেন কমিশনের ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা না হারায়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমানুষের প্রত্যাশা : গণমাধ্যম ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সমন্বিত প্রয়াস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নবগঠিত ষষ্ঠ মানবিধকার কমিশনের কার্যক্রম ও করণীয় বিষয়ে জানাতে গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে কমিশন।
সভায় জাতীয় মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রচলিত চিন্তাধারার বাইরে গিয়ে কাজ করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিশন, এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও বিরাগভাজন হয়েছি। আমরা আনুষ্ঠানিক কোনো সংস্থা হিসেবে আর থাকতে চাই না। গণমাধ্যমের সাহায্য নিয়ে আমরা সঠিকভাবে কাজ করতে চাই।
নতুন কমিশনের কাছে আগের কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চান গণমাধ্যমকর্মীরা। পাশাপাশি নতুন কমিশনের কর্মকৌশল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও কমিশনের কার্যক্রমে সরকারের প্রভাব সম্পর্কেও জানতে চান। সব শুনে মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এক মাসের বেশি সময়ে প্রায় দুইশো অভিযোগ আমরা নিয়েছি। বেশকিছু ক্ষেত্রে জরিমানা করেছি। চট্টগ্রামে একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের খরচ বাড়ানো হয়েছিল, সেটা আগের মতো করা হয়েছে। এটা আমাদের সুপারিশে হয়েছে। ভারতের মানবাধিকার কমিশনের জরিমানা আদায়ের কথা উল্লেখ করে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, এটুকু সেবা মানবধিকার কমিশন দিতে পারে। এটা শুরু করতে গিয়ে অনেক সমস্যা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবেও বিরাগভাজন হয়েছি। কিন্তু তাতে আমরা কিছু মনে করেনি। তিনি বলেন, স¤প্রতি একটি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করতে হয়েছে।
ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিদের উদ্দেশে বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিক কোনো সংস্থা হিসেবে আর থাকতে চাই না। গণমাধ্যমের সাহায্য নিয়ে আমরা সঠিকভাবে কাজ করতে চাই। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ব্যাপারে আমরা সচেতন। আপনাদের দাবির সঙ্গে আমরাও একমত। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপারে কমিশন সচেতন। সরকারের পক্ষ থেকে এ আইন সংশোধন করার প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছে। আমরা এজন্য অপেক্ষা করছি।
অর্থনীতিবিদ ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে মানবাধিকার লংঘন হয়। ক্ষমতাবানরা নিজের স্বার্থে অন্যের মানবাধিকার লংঘন করেন। যে কাউকে মেরে নিজে এগিয়ে যেতে চান। বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বজুড়েই বৈষম্য আছে। গ্রামে নারী নির্যাতন, অভিবাবক নির্যাতন ও মাদকের বিস্তার ঘটছে। পরিবারিক পর্যায়ে সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে মানবাধিকার লংঘন হয়। গোষ্ঠী ও কতগুলো অঞ্চলের মানুষ এখনো পিছিয়ে আছে। এসব বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
এর আগে কমিশনের নির্বাক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতিবেদন দেওয়ার সময় আমরা মানবাধিকার কমিশনের অস্তিত্ব খুঁজে পাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। এ বিষয়েও মানবাধিকার কমিশনের পদক্ষেপ আমরা জানতে চাই।
সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ৯৫ বার সময় নিয়েও তদন্ত শেষ করতে পারে না আমাদের সংস্থাগুলো। এখানে মানবাধিকার কমিশন কী করেছে। কমিশন সুপারিশ করলো, সুপারিশের ফলোআপ হলো না। তাহলে মানুষ কমিশনের ওপর আস্থা রাখবে কী করে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনবি সম্পাদক ফরিদ হোসেন, ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাজী আরফান আশিক, সার্বক্ষণিক সদস্য সেলিম রেজা প্রমূখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন