বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কারা দেশ থেকে পালিয়েছিল, দেশের মানুষ সব জানে। কিন্তু পালাননি একজন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সুতরাং এসব কথা বলে লাভ নেই। বিএনপির চলমান পদযাত্রা কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বেলা ২টা ৫০ মিনিটে যাত্রাবাড়ী থেকে পদযাত্রা শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসময়
বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের হাতে ছিলো সরকার পদত্যাগ, দ্রব্যের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির লেখা সম্বলিত বিভিন্ন প্লাকার্ড এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা। পদযাত্রা যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু হয়ে শ্যামপুর পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহŸায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোববার রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগ নাকি পালায় না। এক-এগারোতে গ্রেফতার হওয়ার পর কারা দেশ থেকে পালিয়েছিল? দেশের মানুষ সব জানে। কিন্তু ওই সময় পালাননি একজন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’ তিনি বলেন, তখন খালেদা জিয়া পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, “বিদেশে আমার কোনো জায়গা নেই। এ দেশ আমার, এ দেশের মাটি আমার, আমি এ দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না। এখানে আমার জন্ম, এখানেই আমি মরব।” সুতরাং এসব কথা বলে লাভ নেই। কে কোথায় পালায়, কবে পালায়, কেমন করে পালায়, দেশের মানুষ সবই জানে।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। পালাবেন কোন দিকে? কোনো দিকে পালাবার পথ নেই। এখনো সময় আছে, ১০ দফা দাবি মেনে নিয়ে মানে মানে পদত্যাগ করুন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের এমপি ছিলেন সাত্তার সাহেব (উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া)। তিনি পদত্যাগ করলেন। তারপর ভুল করে যখন আবার নির্বাচন করতে গেলেন, তখন আমরা তাঁকে বহিষ্কার করলাম। এখন তাঁকে জেতানোর জন্য সব নীতিমালা ও নৈতিকতা বাদ দিয়ে আপনারা আপনাদের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যে প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল, তাঁকেও দুদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, গুম।’
তিনি বলেন, সাত্তারকে জেতানোর জন্য পুরো নির্বাচনব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন। আপনারা মাগুরার কথা বলেন। মাগুরার দাদা বানিয়ে ফেলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে। সুতরাং এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।
চলমান কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকের এই পদযাত্রা গণতন্ত্রের জয়যাত্রা, সভ্যতার জয়যাত্রা, অধিকার আদায়ের জয়যাত্রা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জয়যাত্রা। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জয়যাত্রা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এটা আমাদের কোন মরণ যাত্রা না। আপনারা মরলে জানাযা পড়ানোর লোক থাকে না। তাই আমরা আগাম আপনাদের জন্য শোক মিছিল করছি। ভবিষ্যতে তো আপনাদের জন্য শোক মিছিল করার কেউ থাকবে না। সুতরাং এই শোক মিছিলের মধ্য দিয়েই এই অবৈধ সরকারকে পতন করব। এই মাফিয়া সরকারের হাত থেকে এই দেশকে জনগণের হাতে তুলে দেব।
তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকার সকল ব্যাংক খালি করে দেশকে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হবে। আমাদের এই পদযাত্রার মাধ্যমেই রাজপথ দখল করব। এবং এই স্বৈরাচার সরকার কে পতন করব।
গয়েশ্বর বলেন, দেশের জনগণের একটাই দাবি ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এই মুদ্রা পাচারকারী শিশু হত্যাকারী সরকারকে এ দেশের জনগণ আর দেখতে চায় না। কিন্তু এ সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাধারণ জনগণ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, আশা করছি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবো এবং দেশের প্রকৃত মালিক জনগণ তাদের মালিকানা ফেরত দিতে পারব।
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত¡াবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবিতে মহানগর বিএনপি রাজধানীতে চারটি স্থানে পদযাত্রার কর্মসূচির ঘোষণা করে। এর মধ্যে প্রথমটি গত শনিবার রাজধানীর বাড্ডায় সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে শেষ হয়। গতকাল দ্বিতীয়টি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর, আজ মঙ্গলবার গাবতলী টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এবং বুধবার মুগদার থেকে মালিবাগ। সবগুলো কর্মসূচি শুরু বেলা ২টায়।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন