শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ভালো উইকেটেই ভালো বিপিএল

সেরার তালিকায় বাংলাদেশিরা

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০৭ এএম

ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম ঘুরে আবারও ঢাকা থেকে সিলেট শেষে ফের ঢাকা- তিন ভেন্যুর চক্করে নবম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এখন শেষের বিউগল বাজছে। এরই মধ্যে সিলেটে চতুর্থ পর্বের খেলা শেষ হয়ে গেছে। আজ থেকে মিরপুরে শুরু হবে বিপিএলের ‘ফাইনাল রাউন্ড’। প্রথম হিসেবে সিলেট স্ট্রাইকার্সের পর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টেরিয়ান্স আর তারকা সমৃদ্ধ ফরচুন বরিশালও প্লে-অফও নিশ্চিত করে ফেলেছে। যদিও আজ মাঠে নামতে হচ্ছে না সিলেট, কুমিল্লাকে। তবে শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এদিন দুপুর ২টায় সাকিব আল হাসানের বরিশালের মুখোমুখি হবে ইয়াসির আলীর খুলনা টাইগার্স, সন্ধ্যা ৭টায় নাসির হোসেনের ঢাকা ডমিনেটর্স খেলবে নুরুল হাসান সোহানের রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে।
এবার বিপিএলে তিন ভেন্যুতেই বেশ ভালো উইকেটে হয়েছে ম্যাচ। প্রায় নিয়মিতই দেখা গেছে বড় রান। তিন ভেন্যুতেই দুশো ছাড়ানো একাধিক ইনিংসের দেখা মিলেছে, দুশো রান তাড়া করার ঘটনাও আছে। উইকেটের এমন পরিস্থিতি ব্যাটারদের দিচ্ছে সুবিধা। আশার দিক হচ্ছে, বিপিএলের ইতিহাসে হয়তো এবারই প্রথম ব্যাট হাতে একতরফা নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ রেখে চলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। কেননা এখন পর্যন্ত বিপিএলের চতুর্থ পর্ব শেষে আসরের সর্বোচ্চ রানের তালিকায় থাকা সেরা পাঁচের চারজন ব্যাটারই বাংলাদেশের।
যেখানে তালিকার এক নম্বরে রয়েছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। আসরের ১০ ম্যাচ খেলে এই ব্যাটার করেছেন ৩৫৬ রান। শান্তর স্ট্রাইকরেট (১১৪ দশমিক ৪৬) যদিও আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই নয়। তবে বিপিএলে তিনি নিয়মিত ব্যাট হাতে রান করছেন, এটাই শান্তর দলের জন্য স্বস্তির বিষয়। তালিকার দুই নম্বরে আছেন ঢাকা ডমিনেটরসের অধিনায়ক নাসির হোসেন। শান্তর সমান সংখ্যাক ১০ ম্যাচ খেলে নাসির করেছেন ৩৪০ রান। শান্ত’র চেয়ে অবশ্য নাসিরের স্ট্রাইকরেট কিছুটা বেশি। ১২৬ দশমিক ৩৯ স্ট্রাইকরেটে টুর্নামেন্টে ব্যাট করে চলেছেন ঢাকার এই ক্রিকেটার। তালিকার তিন নম্বরে অবস্থান করছেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। চলমান বিপিএলে ব্যাট হাতে রীতিমত বিষ্ফোরক রূপে খেলে চলছেন বরিশালের কাপ্তান। আসরে এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচ ব্যাট করে সাকিবের সংগ্রহ ৩১১ রান। ব্যাট করেছেন ১৮৫ দশমিক ১১ স্ট্রাইকরেটে। এমন স্ট্রাইকরেট দেখলেই বোঝা যাচ্ছে ব্যাট হাতে ঠিক কতটা ছন্দে রয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
চতুর্থ নামটি দেশের ক্রিকেটে বাটিংয়ে বগুল রেকর্ডের মালিক তামিম ইকবালের। ৯ ম্যাচে ৩৭.৬২ গড়ে ৩০১ রান করা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলা খুলনার এই ব্যটারের স্ট্রাইকরেটও খারাপ নয়- ১২৩.৩৬! সেঞ্চুরি না পেলেও ৯৫ রানের ইনিংসসহ ফিফটি আছে দুটি। পরের নামটি অবধারিতভাবে পাকিস্তানি বিষ্ফোরক বাটার ইফতিখার আহমেদের। বরিশাল এই ওপেনার ৯ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরিসহ করেছেন ২৯৬ রান। তবে ৫৯.২০ গড়ে রান করা তার স্ট্রাইকরেট চোখ কপালে তুলে দেবার মতো- ১৬০.৮৬! পাঁচের মধ্যে না থাকলেও এরপরের নামটি আক্ষেপ ঝড়াতে পারেন অনেকেরই- তৌহিদ হৃদয়। বাংলাদেশের তরুন এই ওপেনার শুরু থেকেই ছিলেন বিষ্ফোরক। টানা তিন ম্যাচে ফিফটিতে সিলেটের ম্যাচজয়ী এই তারকা আঙুলের চোটে ছিটকে যান বাইরে। পরে ফিরলেও ছন্দে ফিরতে পেতে হয়েছে বেগ। ৭ ইনিংসে ব্যাট করে ৪১.১৪ গড়ে রান করেছেন ২৮৮। যার মধ্যে চার ফিফটিতে স্ট্রাইকরেট তুলেছেন ১৪৯.২২ করে!
শুধু ব্যাটাারই নয়, ভালো উইকেটের কল্যাণে লাভ হচ্ছে দেশি বোলারদেরও। একতরফা না হলেও সেরা উইকেট সংগ্রাহকের তালিকার ৫ জনের শীর্ষে রয়েছেন দুই বিদেশি বোলার। বিপিএলে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচ খেলে ১৩ উইকেট শিকার করে তালিকার টপার ওয়াহাব রিয়াজ। খুলনা টাইগার্সের এই পেসার ১৪ দশমিক ০৭ গড়ে বল করেছেন ৬ দশমিক ৯০ ইকোনোমিতে। যদিও ইতোমধ্যে বিপিএল ছেড়ে পাকিস্তানে উড়াল দিয়েছেন তিনি। তালিকার দুই নম্বরে রয়েছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের আরেক পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির। এখন পর্যন্ত আসরে ১০ ম্যাচ খেলে আমিরের শিকার ওয়াহাবের সমান ১৩ উইকেট। ১৮ দশমিক ৩০ গড়ে এই পেসার ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৫ দশমিক ৯৫ ইকোনোমিতে। তবে এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বুঝি নাসিরের ফেরা। ব্যাট হাতে তালিকার দুই নম্বরে থাকা ঢাকা অধিনায়ক সেরা বোলারদের তালিকায়ও রয়েছেন তিন নম্বরে। একসময়ের দেশের সেরা এই অলরাউন্ডার এবারের বিপিএলে ১০ ম্যাচ খেলে ঝুলিতে পুড়েছেন ১২ উইকেট। ১৫ দশমিক ৮৩ গড়ের সঙ্গে তিনি ৭ দশমিক ৬০ ইকোনোমিতে বল করেছেন।
পরের দুটি নাম চমক জাগানিয়াই। তারুন্যের কারণে রেজাউর রহমান রাজা, অন্যজন বাতিলের তালিকায় থাকা বুড়ো মাশরাফি বিন মুর্তজা। চারে থাকা সিলেটের রাজা ৭ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়েছেন ঠিকই, তবে তার সেরা বোলিং ফিগারটি (৪/১৪) নির্বাচকদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। আর একাধারে সিলেটের নেতৃত্ব, বয়সকে তোয়াক্ক না করে গতির ঝড় তুলে উইকেটের ঝাঁপি পূর্ণ করা মাশরাফি দেখিয়েছেন ‘ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়’। ১০ ম্যাচে ১২ উইকেট নেয়া জাতীয় দলের সফল এই পেসার ৭.৫৫ ইকোনোমিকে সেরা বোলিং করেছেন ৩/৪৮।
ব্যাটসম্যানরা রান আগেও পেয়েছেন। তবে এমন উইকেটে নতুন চ্যালেঞ্জে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দেখছেন বোলাররাও। ম্যাচের আগের দিন গতকাল মিরপুরে অনুশীলনের ফাঁকে তেমনটাই জানালেন বরিশালের পেসার ইবাদত হোসেন। ডানহাতি এই পেসার মনে করেন, আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপেও থাকবে রান বান্ধব এমন উইকেট। তার আগে বিপিএলে এসব উইকেট খেলায় লাভ হচ্ছে বোলারদের। আপাতত রান দিলেও তারা সবাই শিখতে পারছেন, কোন জায়গায় করতে হবে উন্নতি, ‘দেখেন ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে ভারতে। ধারনা করছি ওখানেও এরকম উইকেট থাকবে, মানে ভালো ব্যাটিং উইকেট হবে। আমি যেটা অনুভব করছি যে বিপিএলে এরকম উইকেটে খেলে বুঝেছি আমাদের বোলারদের স্কিল আরও উন্নতি করতে হবে যে আমরা কীভাবে এসব উইকেটে বল করতে পারি। কীভাবে পরিস্থিতি সামলাতে পারি। পেস বোলারদের স্কিলে উন্নতি করতে হবে। আমি আমার কথাই বলি, পরিকল্পনার জায়গা পরিস্কার করতে হবে।’

পয়েন্ট টেবিল
দল ম্যাচ জয় হার পয়েন্ট নে.রা.রে
সিলেট ১০ ৮ ২ ১৬ ০.৮৯০
বরিশাল ৯ ৬ ৩ ১২ ০.৬৩২
কুমিল্লা ৯ ৬ ৩ ১২ ০.৪৪৮
রংপুর ৮ ৫ ৩ ১০ ০.৩০৪
ঢাকা ১০ ৩ ৭ ৬ -০.৮২৫
খুলনা ৯ ২ ৭ ৪ -০.৪২৫
চট্টগ্রাম ৯ ২ ৭ ৪ -১.০১৭

সেরা ৫
ব্যাটসম্যান ম্যাচ রান সর্বোচ্চ গড় স্ট্রাইক ১০০/৫০
নাজমুল শান্ত (সিলেট) ১০ ৩৫৬ ৮৯* ৪৪.৫০ ১১৪.৪৬ ০/৩
নাসির হোসেন (ঢাকা) ১০ ৩৪০ ৬৬* ৫৬.৬৬ ১২৬.৩৯ ০/২
সাকিব আল হাসান (বরিশাল)৯ ৩১১ ৮৯* ৫১.৩১৮৫.১১ ০/৩
তামিম ইকবাল (খুলনা) ৯ ৩০১ ৯৫ ৩৭.৬২ ১২৩.৩৬ ০/২
ইফতিখার আহমেদ (বরিশাল)৯ ২৯৬ ১০০*৫৯.২০ ১৬০.৮৬ ১/২

বোলার ম্যাচ উইকেট সেরা গড় ইকো. ৪/৫
ওয়াহাব রিয়াজ (খুলনা) ৭ ১৩ ৪/১৪ ১৪.০৭ ৬.৯০ ২/০
মোহাম্মদ আমির (সিলেট) ১০ ১৩ ২/৭ ১৮.৩০ ৫.৯৫ ০/০
নাসির হোসেন (ঢাকা) ১০ ১২ ২/১৬ ১৫.৮৩ ৭.৬০ ০/০
রেজাউর রহমান (সিলেট) ৭ ১২ ৪/১৪ ১৮.৫৮ ৮.৩৬ ১/০
মাশরাফি মুর্তজা (সিলেট) ১০ ১২ ৩/৪৮ ২০.২৫ ৭.৫৫ ০/০

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন