বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে জার্মানির বিমানবন্দর কর্মীরা ধর্মঘট ঢাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় ৩ লাখ যাত্রী। বন্দরকর্মীদের ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘটের জেরে শুক্রবার জার্মানির ব্রেমেন, ডর্টমুন্ড, ফ্রাংকফুর্ট, হামবুর্গ, হ্যানোভার, মিউনিখ ও স্টুটগার্ডের বিমানবন্দরগুলোতে কোনো বিমান চলছে না।
জার্মানির বিমানবন্দরগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব জার্মান এয়ারপোর্ট (এডিভি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবারের ধর্মঘটে জার্মানিজুড়ে বাতিল হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩৪০টি ফ্লাইট এবং এসব ফ্লাইটের ২লাখ ৯৫ হাজারেরও বেশি যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এদিকে, শুক্রবার ছিল ইউরোপের আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংস্থা মিউনিখ সিকিউরিটি কাউন্সিলের সম্মেলন। ইউরোপের ৪০টি দেশ এই সংস্থার সদস্য। শুক্রবারের সম্মেলনে বিভিন্ন সদস্যরাষ্ট্র থেকে অন্তত ৬০ জন মন্ত্রীর আসার কথা ছিল। ফলে, শুক্রবারের ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তিতে পড়া যাত্রীদের তালিকায় অনেকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
উদাহারণ হিসেবে বলা যায় রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা। সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার মিউনিখের উদ্দেশে রওয়ান দিয়েছিলেন মন্ত্রী। তবে ধর্মঘটের কারণে মিউনিখের বিমানবন্দরে না নেমে অস্ট্রিয়ায় নামতে বাধ্য হন। তারপর গাড়িতে চার ঘণ্টা যাত্রাশেষে উপস্থিত হন মিউনিখে।
এডিভির মুখাপাত্র রালফ বেইসেল জার্মানির স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল বাইয়েরিশ্চার রান্ডফাঙ্ককে বলেন, ‘মাত্র একদিনের ধর্মঘটের কারণে যে এত বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হবে, তা আমাদের ধারণাতেও ছিল না। সকালবেলায় টার্মিনালের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হচ্ছিল, করোনা মহামারির সেই ভয়াবহ দিনগুলো বোধহয় আবার ফিরে এসেছে।’
করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জ্বালানির দামবৃদ্ধির কারণে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি শুরু হয়েছে ইউরোপের দেশে দেশে। খাবার-ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম দিন দিন বাড়ছে। ফলে জার্মানির কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের একটি বিশাল অংশ আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো ভারসাম্য রাখতে পারছেন না।
এ পরিস্থিতিতে অন্তত সাড়ে দশ শতাংশ বা ৫০০ ইউরো বেতন-মজুরি বাড়ানোর দাবি তুলেছিল জার্মানির প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন ভেরডি; এবং এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনাও হয়েছে ভেরডির প্রতিনিধিদের মধ্যে।
কিন্তু সেসব আলোচনা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসায় শুক্রবার দেশের সব বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকে ভেরডি। সংগঠনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ক্রিস্টিনে বেহলে জার্মানির বেতার সংবাদমাধ্যম ইনফোরেডিওকে বলেন, ‘যদি বেতন-মজুরি বাড়ানোর ব্যাপরে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে সামনে খুবই বিশৃঙ্খল একটি গ্রীষ্মকাল আমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করছে। শুক্রবারের ধর্মঘট কেবল তার সংকেত।’
তিনি আরও জানান, দাবি মেনে না নেওয়া হলে টানা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবে ভেরডি এবং সেসব ধর্মঘটে হাসপাতাল ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও যুক্ত করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন