মঙ্গলবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ২৬ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলা ফিচার

আমাদের অহংকার

প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমামুল হাবীব বাপ্পি
২০১২ সাল। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেবার ৭ম স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বাংলাদেশ দলকে। তবে দলগত অর্জনকে ছাপিয়ে ওই আসরে হাত ধরেই ব্যক্তিগত অর্জনের গর্বিত অধ্যায় রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের। আইসিসি’র প্রথম  কোন আসরে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হিসেবে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল এনামুল হক বিজয়ের। ২টি শতক ও ১টি অর্ধশতকে করেছিলেন ৩৬৫ রান। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সালের অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের মুকুটটাও ছিল আরেক বাংলাদেশীর। প্লেট চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের সেই আসরে সবচেয়ে বড় সান্ত¦নার উপলক্ষ্য এনে দিয়েছিলেন সাদমান অনীক। ১ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে সর্বোচ্চ ৪০৬ রান করেছিলেন অনীক। তবে ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য তৃতীয় স্থানটাই শুধু সদ্য শেষ হওয়া এই আসর থেকে অর্জিত হয়নি, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে টুর্নামেন্ট সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারটা এবারই প্রথম পেয়েছে কোন বাংলাদেশী।
সর্বোচ্চ ৪২০ রান করে ইংলিশ ব্যাটসম্যান বার্নহাম কিংবা সর্বাধিক ১৫ উইকেটে নামিবিয়ার বোলার কোয়েজদের টপকে ২৪২ রান (গড় ৬০.৫০) এবং ১২ উইকেট (গড় ১৭.৬৬) নিয়ে অল রাউন্ড পারফরমেন্সে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। শুধু কি তাই? ইএসপিএন ক্রিকইনফো থেকে টুর্নামেন্টের সেরা একাদশের যে নাম ঘোষণা করা হয়েছে সেই দলেরও অধিনায়ক মিরাজ। আমাদের মিরাজ!
শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের নেপথ্যে ছিল তার অল রাউন্ড পারফরমেন্স (৩/২৮ ও ৫৩ রান)। যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যের এই নায়ক দলের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে এমন পারফরমেন্সে পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। টুর্নামেন্টে টানা ৪ ইনিংসে করেছেন ফিফটি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১, নেপালের বিপক্ষে ৫৫ নট আউট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬০’র পর শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং ৫৩। নতুন রেকর্ড তৈরি করে নিজেকে তুলেছেন অনেক উচ্চতায়। সেমিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের কষ্টটা বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমীদের কিছুটা হলেও ভুলিয়ে দিয়েছে মিরাজের এই টূর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। এমন স্বীকৃতিতে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত মিরাজ। নিজের এই অর্জনকে দেশেরই অর্জন মনে করছেন তিনিÑ ‘এখানে ১৬টি দল খেলেছে। আর এখানে আমি সেরার পুরস্কার পেয়েছি। এ অর্জন শুধু আমার নয়, এটা পুরো দেশের অর্জন। বিশ্বকাপের মতো আসরে ভালো খেলাটা অনেক আনন্দের ব্যাপার। পুরো বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছে এবং প্রতিদিনই উন্নতি করেছে। এটা তাই খুব আনন্দের বিষয়।’
২০০৬ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে অল রাউন্ড পারফরমেন্স করে (১৫০ রান ও ৭ উইকেট) সাকিবকে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। সেই বছরেই গায়ে উঠেছিল জাতীয় দলের জার্সি। শুধু তাই না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই আইসিসি’র সেরা অল রাউন্ডারের স্বীকৃতি পেয়েছেন ওই বাঁ হাতি। সাকিবের মতো সেরা অল রাউন্ডার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার সংকল্প মিরাজেরও। তার জন্য নিজের লক্ষ্যটাও নির্দিষ্ট করেছেন এই অফ স্পিন অল রাউন্ডার। সেটাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনিÑ ‘এই পুরস্কারে আমি সত্যিই রোমাঞ্চিত। তবে আমার লক্ষ্য অনেক বড়। হতে চাই সেরা অল রাউন্ডার। আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য পরবর্তী বিশ্বকাপ। ভবিষ্যতে খেলতে চাই জাতীয় দলে।
তার জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টাই করব।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫১ ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নজরকাড়া পারফরমেন্সে আল শাহরিয়ার রোকন, মেহরাব অপি, আশরাফুল, আফতাব, নাফিস ইকবাল, রাজীব মেহরাব জুনিয়র, তামীম, সাকিব, রুবেল, রুম্মান, মুমিনুল, বিজয়, লিটন দাস, তাসকিন, মুস্তাফিজুরদের জাতীয় দলে ঢুকতে অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়নি। তবে জাতীয় দলে যোগ দেওয়ার কোন তাড়া নেই মিরাজের মধ্যে। পরিণত ক্রিকেটার হয়েই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে পরতে চান তিনিÑ ‘এখন তো অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় শেষ করলাম। এখান আমার নিজের চিন্তা থাকবে শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলা। সবার স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। আমারও আছে। তবে জাতীয় দলে খেলার জন্য পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আমার সামনে অনেক সময় আছে। এ সময়টা আমি কাজে লাগিয়ে পরিপূর্ণ হতে চাই। আমি নিজেকে আরো পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে দেখতে চাই।’
আসর সেরার পুরস্কারে নিজের দায়িত্বটা বেড়ে গেছে মিরাজের। কারণ, দৃষ্টিটা যে এখন তার আকাশ ছোঁয়ার! জানিয়েছেন সেটাওÑ ‘অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে দেশের মানুষ আমাদের খেলা দেখেছে। আমার প্রতি সবাই প্রত্যাশা করছে। আমাদের এখন তাই আরো ভালো খেলতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক দূরে যেতে চাই। বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিতে চাই।’
১৯৯৭ সালে খুলনায় জন্ম নেওয়া মিরাজের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক হয় ঠিক বছরখানেক আগে রাজশাহী বিভাগের হয়ে। অভিষেক ম্যাচেই জানান দিয়েছিলেন একজন অল-রাইন্ডারের আগমনী বার্তা। শুধু প্রথম ইনিংস ব্যাট করেই করেছিলেন ৫১ রান। এরপর বল হাতে নেন ৪ উইকেট। শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্ব  ক্রিকেটে মিরাজ হয়ে উঠুক এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

ব্যাটিং    ম্যাচ/ইনি.    রান    সর্বোচ্চ    গড়    স্ট্রাইক    ১০০/৫০
নাজমুল হোসেন শান্ত    ৬/৬    ২৫৯    ১১৩*    ৬৪.৭৫    ৮৩.৮১    ১/১
মেহেদী হাসান মিরাজ    ৬/৫    ২৪২    ৬০    ৬০.৫০    ৮৩.১৬    ০/৪
জাকির হাসান    ৬/৫    ১১৮    ৭৫*    ৩৯.৩৩    ৮০.২৭    ০/১
জয়রাজ শেখ    ৬/৬    ১৯২    ৪৬    ৩৮.৪০    ৬৪.৬৪    ০/০
সাইফউদ্দিন    ৬/৪    ৭৫    ৩৬    ২৫.০০    ৭৩.৫২    ০/০
শফিউল হায়াত    ১/১    ২১    ২১    ২১.২১    ৫৬.৭৫    ০/০
সাইফ হাসান    ৫/৫    ৭৮    ৪৯    ১৫.৬০    ৪১.২৬    ০/০
পিনাক ঘোষ    ৫/৫    ৭৫    ৪৩    ১৫.০০    ৬০.৯৭    ০/০
মোসাব্বেক হোসেন    ২/২    ২৫    ১৪    ১২.৫০    ১১৯.০৪    ০/০
সাঈদ সরকার    ৫/৩    ২৩    ১৬    ৭.৬৬    ১৪৩.৭৫    ০/০
সালেহ আহমেদ    ৬/১    ১    ১    ১.০০    ১০০.০০    ০/০
জাকের আলী    ১/১    ৩১    ৩১*    ৩১.০০    ৬৮.৮৮    ০/০
মেহেদী হাসান রানা    ৩/২    ১১    ১০*    ০৫.০০    ১৩৭.৫০    ০/০
সনজিত শাহ    ১/১    ২    ২*    ০২.০০    ৬৬.৬৬    ০/০
বোলিং    ম্যাচ/ইনি.    উইকেট    সেরা    গড়    ইকো.    ৪/৫
সাইফউদ্দিন    ৬/৬    ১৩    ৩/১৭    ১৪.৯২    ৪.১২    ০/০
মেহেদী হাসান মিরাজ    ৬/৬    ১২    ৩/২৮    ১৭.৬৬    ৩.৭৫    ০/০
সালেহ আহমেদ শাওন    ৬/৬    ১২    ৩/২৭    ১৩.৭৫    ২.৯৪    ০/০
আরিফুল ইসলাম    ৩/৩    ৪    ২/৯    ১৫.২৫    ৩.০৫    ০/০
সাঈদ সরকার    ৫/৫    ৩    ২/৩৯    ৩৭.৩৩    ৪.৪৮    ০/০
মেহেদী হাসান রানা    ৩/৩    ২    ১/৩০    ৪৫.৫০    ৩.৯৫    ০/০
আব্দুল হালিম    ৪/৪    ২    ২/২৬    ৩৬.৫০    ৪.০৯    ০/০
সনজিত শাহা    ১/১    ০    -    -    ৩.৭৫    ০/০
মোসাব্বেক হোসেন    ২/২    ০    -    -    ৪.৩১    ০/০
নাজমুল হোসেন শান্ত    ৬/৩    ০    -    -    ৫.১৪    ০/০


অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দলগুলোর চূড়ান্ত অবস্থান

চ্যাম্পিয়ন     রানার্সআপ     তৃতীয়     চতুর্থ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ     ভারত     বাংলাদেশ     শ্রীলঙ্কা
৫ পাকিস্তান     ৬ ইংল্যান্ড     ৭ নামিবিয়া     ৮ নেপাল
৯ আফগানিস্তান     ১০ জিম্বাবুয়ে     ১১ দক্ষিণ আফ্রিকা     ১২ নিউজিল্যান্ড
১৩ আয়ারল্যান্ড     ১৪ স্কটল্যান্ড     ১৫ কানাডা     ১৬ ফিজি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন