স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’। ২০১৪ সালের এই দিনে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে করা হয়েছে পরাধীন। সরকারি দলের সকল হুমকি-ধামকি উপেক্ষা করে আজ সারাদেশের জেলা ও মহানগরগুলোতে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি সাফল্যম-িত হবে। গতকাল বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা বলেন। গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেছিলেন, এই দিবসে সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে। ৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ হবে। এসবের সব প্রস্তুতি চলছে।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, মজিবর রহমান সারোয়ার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বাধীনভাবে ভোট প্রদানের অধিকার ও ইচ্ছাকে ধ্বংস করা হয়েছে ৫ জানুয়ারি। আর এটি করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের যে সবচেয়ে বড় আকাক্সক্ষা গণতন্ত্র, সেটিকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপি মানুষের হারানো অধিকার ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য নিরন্তর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এদেশের ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারদের কবল থেকে অপহৃত গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার জন্য যে মহিয়ান অবদান রেখেছে, তাদের সেই কীর্তি চিহ্নকে বারবার ধুলোয় নিশ্চিহ্ন করেছে আওয়ামী লীগ। এরা নির্মম একদলীয় শাসনের মাধ্যমে রাজনীতিকে কুৎসিত রুপ দিয়েছে। রাজনীতির বর্তমান দুর্দশা থেকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। সকল সংশয় উপেক্ষা করে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিএনপি দৃঢ় পদে এগিয়ে যাবে।
তিনি এক প্রশ্নে জবাবে বলেন, আমরা ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে আগেই কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু শনিবার ৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদফতর অনুমতি দিলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। আশা করি পুলিশ প্রশাসন আমাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেবেন।
তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্টের সংলাপ প্রসঙ্গে বলেন, স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ ও মতবিনিময় অব্যাহত রেখেছেন। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিও কিভাবে একটি শক্তিশালী, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা যায় তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রেসিডেন্টের কাছে উত্থাপন করেছে। তিনি বিএনপির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে একটি নিরপেক্ষ ইসি গঠনে তার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
রিজভী বলেন, প্রেসিডেন্ট সব রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি রাষ্ট্রের একজন অভিভাবক। বর্তমান গণতন্ত্রহীন দেশে যেভাবে রক্তাক্ত পন্থায় নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে তাতে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া আগামী দিনে কোনো নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে না, সেটি বাংলাদেশের জনগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। ইসি গঠন নিয়ে প্রেসিডেন্টের আশাবাদের বাস্তব প্রতিফলন ঘটলে দেশের প্রতিটি জনগণ সেটিকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে স্বাগত জানাবে। বিএনপিও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে সেটিকে স্বাগত জানাবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমানে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিাতি ভেঙে পড়েছে। আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে দেশব্যাপী খুনোখুনির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজেদের অপরাধকে ঢেকে রাখার জন্য বেসামাল হয়ে দলের নেতৃবৃন্দ প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার ও দোষারোপের রাজনীতি শুরু করেছে, যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মূলত: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিরোধী দল দমন ও নিপীড়নে ব্যবহার করার কারণেই সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থা। মানুষের জান মাল কিংবা বাসা থেকে বের হয়ে নিরাপদে বাড়ি ফেরার ন্যূনতম গ্যারান্টিটুকুও আজ নেই।
রিজভী বলেন, সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয়, ঘরের ভেতরেও মানুষের নিরাপত্তা নেই। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, গ্রেফতার, কারা নির্যাতন, অপহরণ, গুম, খুন যেন বিরোধী দলের ভাগ্যলিপিতে পরিণত করেছে সরকার। এদের স্বাভাবিক জীবনযাপন, কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই দখল করে নিচ্ছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে গিয়ে নির্দোষ অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আওয়ামী নেতৃবৃন্দ কখনোই পার পাবে না। বরং দোষারোপের রাজনীতি ছেড়ে নিজেদের ঘর সামলান। স্বৈরাচারী আচরণ পরিত্যাগ করে সভ্য ও সহনশীল আচরণ প্রদর্শন করুন। কারণ কত স্বৈরাচারের যুগ অস্তাচলে চলে গেছে।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গত দুই বছর রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ শঙ্কা থাকলে এবারের চিত্র ভিন্ন কেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে রিজভী বলেন, ওই নির্বাচন বর্জনের উদ্দেশ্যই ছিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন। এখন প্রেসিডেন্টের সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরির ওপর নির্ভর করছে বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা আন্দোলনে যাবো না। অন্যথায় পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে ভাববে বিএনপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন